সংসারের বাজেট করবেন যেভাবে

বাজেট শব্দটা শুনলেই হয়তো অনেকের মনে অর্থবছর ও বড় বড় অঙ্কের টাকার কথা মনে হয়। কিন্তু বাজেট শুধু রাষ্ট্রের না, আপনার ঘরের জন্যেও দরকার। আপনার পরিবারটিও একটি প্রতিষ্ঠান এবং একে সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে প্রয়োজন সঠিক বাজেট করা। যেহেতু বেশিরভাগ পরিবারের আয়ের উৎস নির্দিষ্ট এবং প্রধান প্রধান খরচগুলোও প্রতি মাসে প্রায় নির্ধারিত, তাই এই বাজেটটি করা খুব কঠিন নয়। তবে কঠিন না হলেও একটি গুছানো জীবনযাত্রার জন্য এটি অপরিহার্য।
সংসার চালানোর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল আয় অনুযায়ী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা। অগোছালো খরচের কারণে অনেক পরিবারেই মাসের শেষে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। কিন্তু একটি সঠিক বাজেট প্ল্যানিং করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই জেনে নিন কীভাবে একটি কার্যকরী সংসারিক বাজেট তৈরি করবেন।
১. আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখুন
প্রথমেই মাসিক মোট আয়, যেমন- বেতন, ব্যবসার আয়, বাড়িভাড়া ইত্যাদি, লিখুন। এরপর আপনার গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়ের খাতগুলো চিহ্নিত করুন। যেমন, বাসাভাড়া, ইএমআই, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানি বিল, ইন্টারনেট বিল, সন্তানের পড়াশোনার খরচ, পরিবহন খরচ, চিকিৎসা, বাজার খরচ ইত্যদি। এর বাইরেও আছে জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটা, সঞ্চয় ও বিনিয়গ এবং বিনোদন।
আপনার আয়ের ওপর নির্ভর করে কোনো মাসে কেনাকাটা ও বিনোদনের খাতে বাজেট কমবেশি করতে পারেন।
২. প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী অগ্রাধিকার
আয় ও ব্যয়ের খাতগুলো পরিষ্কারভাবে লিখার পর আপনার অপরিহার্য খরচ, শখ, বিনোদন, বিলাসিতা ও সঞ্চয়ের জন্য টাকার অংশ নির্ধারণ করুন। এক্ষেত্রে ৫০/৩০/২০ একটি পরিচিত কৌশল। এটিও অনুসরণ করতে পারেন। এই কৌশলে আপনার বাসাভাড়া, বিল, খাবার ইত্যাদি অপরিহার্য খরচের খাতগুলোর জন্য আয়ের ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করুন। কেনাকাটা ও বিনোদনের জন্য রাখুন ৩০ শতাংশ, এবং সঞ্চয় ও ঋণ পরিশোধের জন্য ২০ শতাংশ। এভাবে আপনি অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বাঁচতে পারেন।
৩. নিয়মিত খরচের হিসাব রাখুন
সারা মাসের একটা হিসাব করলেও প্রতিদিনে খরচ আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। তাই প্রতিদিনের খরচগুলোর রেকর্ড রাখতে একটি নোটবুক বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করুন। এতে মাস শেষে টাকার হিসাব করা সহজ হবে। সপ্তাহ শেষে একটি রিভিউ করুন। খেয়াল করুন কোথাও অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে কিনা।
৪. লিস্ট করে বাজার করুন
বাজার লিস্ট তৈরি করুন। এতে হুজুগে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা এড়াতে পারবেন। চাল, ডাল তেল জাতীয় জিনিসগুলো মাসের শুরুতে একবারে কিনে রাখুন। এতে দামে যেমন সাশ্রয় হয় তেমনি মাসের শেষে খরচের চাপ কমে। কার্ডে বিল দিলে খরচ করার প্রবণতা বেড়ে যায়। এজন্য ক্যাশলেস লেনদেন কম করুন।
৫. সঞ্চয়ে গুরুত্ব দিন
যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য সঞ্চয়ে সবসময় তিন থেকে ছয় মাসের খরচের সমতুল্য টাকা রাখার চেষ্টা করুন। সেই সঙ্গে বাড়ি, গাড়ি, ভ্রমণের জন্য আলাদা সঞ্চয় করুন। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
৫. সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন
ইম্পালসিভ শপিং বা হুটহাট খরচ করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। ডিসকাউন্ট দেখেই অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনবেন না।
ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করুন। ক্রেডিট কার্ডের বিল জমা রাখলে সুদ বাড়বে, ধীরে ধীরে এটি হাতের বাইরে চলে যাবে আপনি বুঝার আগেই। তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।
খরচের হিসাব না রাখলে বাজেট ভেঙে যেতে পারে। তাই ‘মনে থাকবে’ ভেবে হিসাবে গাফিলতি করবেন না।
সংসারের বাজেট তৈরি করতে শৃঙ্খলা ও ধৈর্য্য প্রয়োজন। ছোটখাটো কৌশল ও সচেতনতা আপনাকে আর্থিক স্বাধীনতা দেবে। আজই একটি বাজেট প্ল্যান তৈরি করুন এবং পরিবারের সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করুন। কারণ এই দুর্মূল্যের বাজারে সঠিক পরিকল্পনাই পারে অর্থনৈতিক চাপ কমাতে।
এএমপি/এমএস