রক্ত দেওয়ার যত উপকার

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩১ এএম, ১৪ জুন ২০২৫

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস আজ (১৪ জুন)। এ দিনটি আসলে ধন্যবাদ জানানোর দিন। লাখ লাখ উদার স্বেচ্ছাসেবক ও মানবিক রক্তদাতার প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা জানানোর দিন। আজ তাদের শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানানোর দিন, যারা রক্তদানের মাধ্যমে মুমূর্ষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখছেন।

নিরাপদ রক্ত নিশ্চিতকরণ ও স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বব্যাপী দিনটি পালিত হয়। দাতার রক্তের প্রতিটি ফোঁটায় বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ রোগীর মধ্যে আশা প্রবাহিত হোক – এমন প্রত্যাশায় এ বছর রক্তাদাতা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘রক্ত দিই, আশা জাগাই : সবাই মিলে জীবন বাঁচাই।’

দিবস উপলক্ষে নিরাপদ ও নিয়মিত রক্তদানের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন রক্তগ্রহীতা ও বিশেষজ্ঞরা। রক্তের কোনো বিকল্প নেই। রক্তের প্রয়োজনে রক্তই দিতে হয়। সাধারণত থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও রক্তস্বল্পতা, প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় অপারেশন, দুর্ঘটনাসহ নানান কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যে কোনো সক্ষম ব্যক্তি প্রতি চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন। নিয়মিত রক্ত দিলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি অর্ধেক কমে। এমনকি আত্মিক-আধ্যাত্মিকভাবেও এর উপকার লাভ করেন রক্তদাতা।

রক্ত দেওয়ার যত উপকার

আমাদের দেশে রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে রক্তচাহিদা পূরণে মানবিক আবেদন জানিয়ে সরব রয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী, বাঁধনসহ আরও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ব্লাড ল্যাবগুলো উৎসাহ দিচ্ছে ল্যাবে গিয়ে রক্তদানে। এতে এক ইউনিট রক্তকে একাধিক উপাদানে ভাগ করে একাধিক রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়।

বাংলাদেশে বছরে রক্তের চাহিদা আনুমানিক ১০ লাখ ইউনিট। অথচ দেশের জনসংখ্যার তুলনায় রক্তের এ চাহিদা একেবারেই নগণ্য। তা হলেও এখনও আমরা স্বেচ্ছা রক্তদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে স্বেচ্ছা রক্তদাতা বাড়ানোর মাধ্যমে রক্তের এ চাহিদা মেটানো সম্ভব।

রক্তদানে দাতার উপকার

একজন রক্তদাতা রক্তদানের মাধ্যমে পেতে পারেন নানান উপকার।

১. রক্ত দিলে শারীরিকভাবে মেরুমজ্জার রিজুভিনেশান বা স্টিমুলেশান হয়।

২. হৃদরোগ/স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

৩. ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমে

৪. বার্ধক্যজনিত ঝুঁকিও কমে রক্তদান করলে।

৫. রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে ‘ভালো আছি’ তৃপ্তিবোধ করতে পারা এবং অপার আনন্দের অনুভূতি উপভোগ করা যায়।

৬. রোগভেদে একেক রোগীর জন্যে রক্তের একেক উপাদান প্রয়োজন হতে পারে। তাই রক্তদানের পরপরই উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে রক্তের উপাদানগুলো যথাযথভাবে পৃথক করা গেলে এটি সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে রক্তদাতাকে সরাসরি ল্যাবে গিয়ে রক্ত দিতে হবে। উন্নত ল্যাবে নিরাপদ ও দ্রুত সেবাদানের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে একব্যাগ রক্তকে ৮টি উপাদানে আলাদা করার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন ১. প্লাটিলেট কনসেনট্রেট ২. ফ্রেশ প্লাজমা ৩. ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ৪. প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা ৫. প্লাটিলেট পুওর প্লাজমা ৬. প্রোটিন সলিউশন ৭. রেড সেল কনসেনট্রেট এবং ৮. ক্রায়ো-প্রিসিপিটেট। তার মানে এক ব্যাগ রক্তকে একইসঙ্গে কাজে লাগানো যাচ্ছে কয়েকজনের প্রয়োজনে।

৭. সকল ধর্মেই মানবকল্যাণ একটি পূণ্যের কাজ। রক্তদান উত্তম এক মহৎকর্ম। স্রষ্টার সস্তুষ্টি অর্জনে এটি ভালো কাজের অন্যতম উদাহরণ।

রক্ত দেওয়ার যত উপকার

যারা রক্ত দিতে পারবেন না

বেশিরভাগ মানুষই রক্ত দিতে পারলেও কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা থাকলে রক্তদান করা যায়না। সাধারণত ৫ টিটিআই বাহক, থ্যালাসেমিয়ার রোগী, লিউকেমিয়ার রোগী, হাইপোপ্লাস্টিক এনিমিয়া, হিমোফিলিয়া, হৃদরোগ, স্নায়ুবিক রোগ, থাইরোটকসিকোসিস, এমফাইসেমা, ইনসুলিন নির্ভর (টাইপ-১) ডায়াবেটিস রোগীরা রক্ত দিতে পারবেন না।

আমাদের দেশে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের ওপর নির্ভরতা দিন দিন কমছে, স্বজনদের দানের প্রবণতা বাড়ছে। তবে প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা আমরা এখনও মেটাতে পারছি না। অথচ রক্তদানের জন্যে আন্তরিক ইচ্ছাই যথেষ্ট। ধর্মীয়ভাবেও এ দান অত্যন্ত পূণ্যের কাজ। আর সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে রক্তচাহিদা পূরণে সঙ্ঘবদ্ধ সচেতনতাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। একটি জনগোষ্ঠীর অল্প কিছু সামর্থ্যবান মানুষ যদি নিয়মিত রক্তদান করেন, তাহলেই রক্তের অভাবে কোনো মানুষের মৃত্যু হয় না। নিয়মিত এই দান নতুন করে হাসি ফোটাতে পারে লাখ লাখ মানুষের জীবনে।

আরএমডি/এএমপি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।