করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে যা করবেন

সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলেই করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলো ছড়িয়ে পড়ার তথ্য সামনে আসছে। নতুন করে করোনার এই প্রাদুর্ভাব সবার মাঝেই উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমাদের দেশে এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ওমিক্রনের কয়েকটা সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যেমন- N.B.1.8.1, XFG, XFC, LF-7 । এর মধ্যে N.B.1.8.1 বিশেষভাবে সংক্রামক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। N.B.1.8.1 সাব-ভ্যারিয়েন্টটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বর্তমানে ২০টিরও বেশি দেশে (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য) শনাক্ত করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. রাজীব কুমার সাহা কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। তিনি করোনার বর্তমান অবস্থা, লক্ষণ, চিকিৎসা ও সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন। সাধারণ লক্ষণে আতঙ্কিত না হয়ে বাড়িতেই চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন তিনি, সঙ্গে জটিল লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি কোভিড-পরবর্তী জটিলতা ও উচ্চঝুঁকি সম্পন্ন রোগীদের জন্য বিশেষ সতর্কতার দিকে মনোযোগ দিতে বলেছেন।
এই নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ যেমন দেখা যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু রোগীর আগে থেকেই কিছু শারীরিক জটিলতা থাকতে পারে, যেমন- বার্ধক্যজনিত রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কিডনি রোগ, লিভার রোগ, হার্টের রোগ, এইডস ইত্যাদি। এসবের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগে থেকেই কম তাদের শরীরে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, করোনা সংক্রমণ হলে নিজের বা পরিবারের সুরক্ষা করবেন কীভাবে, সেই সঙ্গে জেনে নিন লক্ষণগুলো-
সাধারণ লক্ষণ
১. জ্বর অথবা জ্বর জ্বর ভাব অনুভব করা।
২. কাশি, কফ, দীর্ঘমেয়াদি খুশখুশে কাশি।
৩. শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, গলাব্যথা।
৪. খাওয়ায় অরুচি, নাকে গন্ধ না পাওয়া।
৫. নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া।
৬. পেটের হজমের ইত্যাদি।
এই লক্ষণ নিয়ে যে সব রোগী ভুগছেন তাদের করোনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে রেজাল্ট পজিটিভ কি না। তবে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ হলেই আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা যে সাধারণ লক্ষণগুলো জানলাম, এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা বাসায়ই করা সম্ভব।
বাড়িতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা
১. প্রথমেই রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে; মাস্ক পরে থাকতে হবে, ঘন ঘন সাবান-পানি বা হ্যান্ড ওয়াস দিয়ে হাত ধুতে হবে, প্রয়োজনে স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন; সেই সঙ্গে অন্যান্য সদস্যদের থেকে কমপক্ষে ৩ ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। এসময় শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ি। তিই বিশ্রামের কোনো বিকল্প নাই।
৩. পানি এবং তরল খাবার বেশি বেশি খেতে হবে যেন কোনোভাবেই পানিশূন্যতা দেখা না দেয়।
৪. গরম পানির ধোঁয়া নাকে মুখে নেয়া যেতে পারে, কিন্তু গরম পানি খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৫. জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে তবে ব্যাথার জন্য অন্য ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
৬. ঠান্ডা, কাশির জন্য এন্টি হিস্টামিন জাতীয় মেডিসিন খাওয়া যাবে কিন্ত প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়াই ভালো।
৭. কোনো ধরনের কবিরাজি ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আল্পমাত্রায় লক্ষণ দেখা দিলে বাসাতে থেকেই চিকিৎসা নিন ও ভালো হয়ে উঠুন। তবে তুলনামূলক তীব্র বা জটিল লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, নিউমোনিয়া, অতিমাত্রায় কাশি, অতিমাত্রার জ্বর, শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও যাদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির রোগ, হার্টের রোগ রয়েছে তাদেরও হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। করোনা পজিটিভ গর্ভবতী নারীদেরও চিকিৎসায় অধিক গুরুত্বের প্রয়োজন। সচেতন থাকুন,স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সুস্থ থস্কুন।
এএমপি/এমএস