মশা কি আদৌ কোনো কাজে আসে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ২০ আগস্ট ২০২৫

মশা শব্দটি শুনলেই মনে একটা বিরক্তি আর অস্বস্তির অনুভূতি তৈরি হয় আমাদের। তবে এই ক্ষুদ্রতম পোকাটি প্রকৃতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা আমরা সাধারণত চোখে দেখতে পাই না। প্রকৃতির সমীকরণে প্রতিটি প্রাণীর নিজস্ব স্থান ও কাজ থাকে, আর মশা সেই চক্রের একটি অংশ।

১. পুকুরের বাস্তুসংস্থান

প্রথমেই বলা যায়, মশা শুধুমাত্র মানুষের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি করে না। প্রকৃতিতে মশা একাধিকভাবে জীবনচক্রকে সমৃদ্ধ করে। মশার লার্ভা জলাশয়, পুকুর, হ্রদ এবং পেছনের পানি জমা হওয়া স্থানে জন্মে। এই লার্ভাগুলো পানির ভিতরে থাকা অণুজীব এবং জৈবপদার্থ খেয়ে পানির গুণমান বজায় রাখতে সাহায্য করে। লার্ভার মাধ্যমে জৈব পদার্থের নিঃসরণ ঘটে, যা জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণীর জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে। অর্থাৎ, মশা শুধু সমস্যা নয়, বরং একটি ক্ষুদ্রতম পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করে।

২. পোকাখেঁকো প্রাণির খাদ্য

প্রাপ্তবয়স্ক মশারা প্রাণির রক্ত খায়, তবে এটি শুধুমাত্র নারী মশার জন্য প্রযোজ্য। এই রক্তসংগ্রহের মাধ্যমে তারা তাদের ডিম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। আর এই প্রক্রিয়ায় তারা বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে।

মশা কি আদৌ কোনো কাজে আসে

বিশেষ করে, মশা বিভিন্ন প্রাণী ও পাখির খাদ্যসংগ্রহ নিয়ন্ত্রণে একটি ভূমিকা পালন করে। বহু প্রজাতির পাখি, ব্যাঙ, মাছ এবং জৈবপোকা মশাকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। এটি প্রমাণ করে যে, মশা এক ধরনের ‘প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খলের কড়ি’, যা অনেক প্রাণীর জীবনকে রক্ষা করে।

৩. পরাগায়ন

কিছু মশার প্রজাতি উদ্ভিদের পরাগায়নেও ভূমিকা রাখে। যদিও তারা মৌমাছির মতো পরিচিত নয়, কিছু মশা পরাগায়নের মাধ্যমে উদ্ভিদের প্রজনন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, প্রকৃতির ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ ‘গার্ডিয়ান’ মশা আমাদের খাবার এবং উদ্ভিদের জন্য অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।

৪. পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবের মধ্যে একটি

বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে, মশা পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবের অন্যতম হতে পারে। জীবাশ্ম এবং জিনগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা গেছে, মশার পূর্বপুরুষ প্রায় ৭০–১০০ মিলিয়ন বছর আগে, অর্থাৎ ডাইনোসরের যুগে উদ্ভূত হয়েছিল। অন্য কোন তথ্য অনুযায়ী, এটি ২১৯ মিলিয়ন বছর আগে উদ্ভূত হয়েছিল। অর্থাৎ মশা শুধু আধুনিক পৃথিবীর নয়, বরং প্রাচীন জীববৈচিত্র্যেরও এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই সময়ে মশারা বিভিন্ন জলজ ও স্থলভাগের বাস্তুতন্ত্রে ভূমিকা পালন করত, যা আজকের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মশা কি আদৌ কোনো কাজে আসে

যদিও দৈনন্দিন জীবনে মশা বিরক্তিকর, তবে তাদের অস্তিত্ব প্রকৃতিকে স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক। মশার উপস্থিতি জলাশয়ের পুষ্টি চক্রকে সমর্থন করে, যা মাছ ও জলজ উদ্ভিদের জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও, মশার খাদ্যচক্রের মাধ্যমে অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

আজকে (২০ আগস্ট) বিশ্ব মশা দিবস। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মশার প্রজাতি ও তার প্রভাব সম্পর্কে জানানো। এছাড়াও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ইত্যাদি প্রতিরোধে গুরুত্বারোপ করা। এই দিবসটি শুধু মশার খুঁত বোঝানোর জন্য নয়, বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার দিক থেকেও গুরুত্ব বহন করে। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং প্রকৃতির ভারসাম্য দুইটি বিষয়েই মশা গুরুত্বপূর্ণ।

অতএব, মশাকে শুধুমাত্র মানুষের জন্য সমস্যা হিসেবে দেখে প্রকৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন। মশা এক প্রাচীন, গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী প্রাণী। তাদের উপস্থিতি ছাড়া প্রকৃতির ভারসাম্য অনেকটাই অচল হয়ে পড়ত। তাই মশার খোঁচা যেমন অস্বস্তিকর হতে পারে, তেমনি তাদের অস্তিত্ব প্রকৃতির জন্য অপরিহার্য।

মশা কি আদৌ কোনো কাজে আসে

যত অপরিহার্যই হোক না কেন, মশাবাহীত রোগকে হালকাভাবে নেওয়া মোটেই উচিত হবেনা। কিন্তু এই ক্ষুদ্র প্রাণীর একাধিক গুণাবলী আমাদের শেখায়, প্রকৃতির প্রতিটি জীবেরই প্রয়োজন রয়েছে।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ ফেডারেশন, ব্রিটানিকা, রয়টার্স, নেচার

মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।