তিন তালাকে কি বিবাহবিচ্ছেদ হয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১৬ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

আলোচিত-সমালোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের দাম্পত্য কলহ দীর্ঘদিন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তবে গতকাল তিনি তৃতীয় স্ত্রী রিয়া মনিকে মৌখিকভাবে তিন তালাকের ঘোষণা দিলে বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর আফতাবনগরে রিয়া মনির বাসার কাছে হিরো আলম হামলার শিকার হন। তারপর থেকেই হিরো আলম তার দাম্পত্যজীবন নিয়ে নানান রকম মন্তব্য করে আসছিলেন।

তবে এখন প্রশ্ন হলো – মৌখিক তালাক বা তিন তালাক কি আদৌ আইনসম্মত? মৌখিকভাবে তিন তালাকের ঘোষণা দিলে কি বিয়ে বিচ্ছেদ হয়?

>> মৌখিক তিন তালাক আইনত বৈধ নয়

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, তিন তালাক উচ্চারণের মাধ্যমে বিয়ে বিচ্ছেদ বৈধ নয়।

আইন বিশেষজ্ঞ মিতি সানজানা বলেন, বিয়ের নিবন্ধন হয়ে থাকলে সেই বিয়ের মৌখিকভাবে তালাক আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য না।

আইন না মেনে তালাক দিলে সেটি তালাক হয় না। তবে কেউ যদি আইন মেনে তালাক দিতে চান, সেক্ষেত্রে এক পক্ষ তালাক দিতে না চাইলেও তালাক কার্যকর হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো পক্ষ যদি আইনের মাধ্যমে একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায় তাহলে কোনও কারণ দেখানোরও প্রয়োজন নেই। পারস্পরিক বনিবনা হচ্ছে না, এই কারণ দেখিয়েও কেউ তালাক দিতে পারবে।’

বাংলাদেশের ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে তালাকের বিষয়টি পরিষ্কার উল্লেখ করে দেওয়া আছে। এই আইন অনুযায়ী, স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ চাইলেই বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবে। তবে তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে।

এই আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি তার স্ত্রী বা স্বামীকে তালাক দিতে চান তাহলে তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নোটিশ দিতে হবে।

আইন বিশেষজ্ঞ মিতি সানজানা বলেন, কেউ তালাক দিতে চাইলে সে যে কোনো পদ্ধতিতে তালাক ঘোষণা করতে পারবেন। তারপর অন্য পক্ষ বা যাকে তালাক দেয়া হচ্ছে, সে যে এলাকায় বাস করেন, সেই এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা পৌরসভা মেয়র বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে এই নোটিশের একটি নকল কপি যাকে তালাক দেয়া হচ্ছে তার কাছেও পাঠাতে হবে।

এই নোটিশ কত দিনের মধ্যে পাঠাতে হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী, তালাক ঘোষণার পর যত শীঘ্র সম্ভব এই নোটিশ পাঠাতে হবে। এটি ডাকযোগেও পাঠানো যায় বা সরাসরিও হস্তান্তর করা যায়।

নোটিশ পাঠানোর পর পরবর্তী ৯০ দিনের পর তালাক কার্যকর হয়ে যায় বা বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। তবে এই ৯০ দিনের মধ্যে একটি সালিশি পরিষদ গঠন করা হয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। এই সালিশি পরিষদে একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং দুই পক্ষের এক জন করে প্রতিনিধি থাকেন। এই ৯০ দিন সময়কে ইদ্দতকাল বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে যদি দুই পক্ষই রাজি থাকে তাহলে তারা সমঝোতার মাধ্যমে তালাক তুলে নিতেও পারেন।

তবে ৯০ দিনের মধ্যে যদি সালিশের কোন উদ্যোগ নেয়া না হয়, তাহলে সেই তালাক কার্যকর হয়ে যায়। আর তালাকের সময় যদি স্ত্রী গর্ভবতী থাকেন তাহলে প্রসব ও ইদ্দতকালের পর তালাক কার্যকর হবে।

তালাক কার্যকর হওয়ার পর যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, যে কাজী অফিসের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সেখানেই তালাকটিও নিবন্ধন করাতে হবে।

>> ‘তিন তালাক’ এর আইনী সহায়তা

বাংলাদেশে তিন তালাকের মাধ্যমে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে এমন ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়ারও কথা বলা হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে প্রথমেই দেখতে হবে যে - বিয়েটা নিবন্ধিত করা হয়েছে কি না এবং বিয়ে সংক্রান্ত দলিল আদালতে হাজির করা সম্ভব হবে কি না।

১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব মুসলিম নাগরিকের বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, বিয়ে যে প্রথার মাধ্যমেই হোক না কেন, তা নিবন্ধন করতে হবে। একই ভাবে তালাক কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাও নিবন্ধন করতে হবে।

মিতি সানজানা বলেন, যেসব বিয়ের নিবন্ধন করা হয় না, সেক্ষেত্রে নানা ধরণের জটিলতা দেখা দেয়। কারণ যে বিয়েই প্রমাণ করা যায় না, তার তালাকের বিষয়টি নিয়েও জটিলতা হয়।

তিনি বলেন, ‘সেক্ষেত্রে হয়তো একটা মৌখিক তালাকের মাধ্যমে সম্পর্ক থেকে সহজেই বের হয়ে যাওয়া যায়, যদি না অপর পক্ষ আদালতে গিয়ে তার বিয়ের প্রমাণ দিতে পারে।’

তবে যদি কেউ আইন মেনে তালাক না দেন, তাহলে সেই তালাক আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকে বলেও জানান তিনি।

আবার বিয়ের সময় যে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি যদি বিয়ের সময় আদায় করা না হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী, স্ত্রী যখন চাইবে, সেই সময়েই তাকে তার দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তিনি যদি তালাকের সময় দেনমোহর দাবি করেন, তাহলেও তা পরিশোধ করতে হবে।

সূত্র: বিবিসি, বাংলাদেশ মুসলিম পারিবারিক আইন (১৯৬১), মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন আইন (১৯৭৪)

এএমপি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।