লাইফ সাপোর্ট, আইসিইউ, সিসিইউ কী? জানুন এগুলোর ব্যবহার কতটা আলাদা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ, লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশন — শব্দগুলো আমাদের অনেকেরই পরিচিত। কিন্তু এগুলোর প্রকৃত অর্থ ও ব্যবহার বিষয়ে অনেকের মধ্যেই রয়ে গেছে বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণা।

শরীরের কোন অবস্থায় রোগীকে কোথায় নেওয়া হয়? সেখানে নেওয়ার অর্থই বা কী? জেনে নিন-

এইচডিইউ বলতে কী বোঝায়?

এইচডিইউ-এর পূর্ণরূপ হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট। রোগীর অবস্থা যখন খুব বেশি খারাপ নয়, আবার স্বাভাবিকও নয়; এবং অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন, তখন তাকে এইচডিইউ-তে নেওয়া হয়।

লাইফ সাপোর্ট, আইসিইউ, সিসিইউ কী? জানুন এগুলোর ব্যবহার কতটা আলাদা

ওয়ার্ড বা কেবিন ও আইসিইউয়ের মধ্যবর্তী স্তরের চিকিৎসা সেবা হলো এইচডিইউ।

রোগীর অবস্থার মূল মূল্যায়ন করা হয় তার বিভিন্ন ভাইটালস দেখে - হার্ট রেট, রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়েছে কি না, শরীরের এসিড–বেস ব্যালান্স, লবণের মাত্রা, ইউরিন আউটপুট ইত্যাদি। এসব সূচক অস্বাভাবিক হয়ে গেলে বিশেষ মনিটরিংয়ের প্রয়োজন পড়ে।

আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. আশরাফ জুয়েল বলেন, ‘ভাইটালস এলোমেলো হতে শুরু করলে নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আমরা বুঝতে পারি রোগীর স্পেশাল মনিটরিং প্রয়োজন। তারপর সিদ্ধান্ত হয় তাকে লেভেল–১ নাকি লেভেল–২ কেয়ারে (এইচডিইউ/আইসিইউ) পাঠানো হবে।’

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘কারও জ্বর হলে এর পেছনে ইনফেকশন, টাইফয়েড, সেপসিসসহ নানা জটিল কারণ থাকতে পারে। এই জটিলতার প্রভাবে ভাইটালস খারাপ হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রোগীকে কেবিনে রাখা যাবে, নাকি তাকে এইচডিইউ–তে নিতে হবে।’

সিসিইউ কী? কখন রোগীকে সিসিইউতে নেওয়া হয়?

সিসিইউ-এর পূর্ণরূপ করোনারি কেয়ার ইউনিট। মূলত হৃদরোগ সম্পর্কিত জরুরি অবস্থায় — যেমন হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম — রোগীকে সিসিইউ-তে রেফার করা হয়।

ডা. আশরাফ বলেন, হৃদরোগীদের এমন একটি পর্যায় আছে যখন কেবিন বা ওয়ার্ডে রাখলে যে কোনো মুহূর্তে হার্টের অবনতি ঘটতে পারে। তখনই আমরা তাকে সিসিইউতে রাখি।

লাইফ সাপোর্ট, আইসিইউ, সিসিইউ কী? জানুন এগুলোর ব্যবহার কতটা আলাদা

তবে রোগীর যদি একাধিক অঙ্গের সমস্যা থাকে, যেমন ফুসফুস, কিডনি বা ব্রেন, তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী সরাসরি আইসিইউতেও নেওয়া হতে পারে।

তাহলে আইসিইউ কী?

আইসিইউ-এর পূর্ণরূপ ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট, যেখানে রোগীর একাধিক অঙ্গের কার্যক্রম বজায় রাখতে নিবিড় সাপোর্ট দেওয়া হয়।

কখনো রোগী এইচডিইউ–তে থাকা অবস্থায়ই অবনতির দিকে যেতে পারেন, যেমন কিডনির অবস্থা খারাপের দিকে গিয়ে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন তৈরি হওয়া বা ফুসফুস পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে না পারা।

এমন সময় রোগীকে আইসিইউ–তে নিয়ে বাইরে থেকে সাপোর্ট দিয়ে অঙ্গগুলোকে সচল রাখা হয়।

রোগীকে সবসময় এইচডিইউ থেকে আইসিইউ-তে নিয়ে যেতে হবে—এমন নয়। অনেক সময় জীবন বাঁচাতে কেবিন বা ইমার্জেন্সি থেকেই রোগীকে দ্রুত আইসিইউ–তে নিতে হয়।

বিশেষায়িত ইউনিটগুলো

এইচডিইউ–র মতো আইসিইউতেও এখন নানা বিশেষায়িত ইউনিট তৈরি হচ্ছে, যেমন— সার্জিকাল আইসিইউ, মেডিকেল আইসিইউ, নিউরো আইসিইউ, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, নিওনাটাল আইসিইউ বা এনআইসিইউ, রেসপিরেটরি আইসিইউ, লিভার আইসিইউ ইত্যাদি।

তবে সিসিইউ শুধুই হৃদরোগীদের জন্য হওয়ায় এর আলাদা সাব-ইউনিট নেই।

লাইফ সাপোর্ট, আইসিইউ, সিসিইউ কী? জানুন এগুলোর ব্যবহার কতটা আলাদা

ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট আসলে কী?

গুরুতর অবস্থায় যখন রোগীর শ্বাসযন্ত্র যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না, অর্থাৎ অক্সিজেন নিতে পারে না বা কার্বন ডাই অক্সাইড বের করতে পারে না, এমন সময় ভেন্টিলেশন দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ যেটাকে লাইফ সাপোর্ট নামে চেনে।

ডা. আশরাফ বলেন, কিডনির সমস্যা গুরুতর হলেও চিকিৎসার সময় থাকে। কিন্তু শ্বাসযন্ত্র কাজ না করলে ৪–৮ মিনিটেই ব্রেন স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই ভেন্টিলেশন জরুরি ‘লাইফ–সেভিং সাপোর্ট’।

লাইফ সাপোর্ট মানেই কি মৃত্যু?

লাইফ সাপোর্ট নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা আছে। অনেকেই মনে করেন, লাইফ সাপোর্টে গেলে রোগী আর ফিরে আসে না।

ডা. আশরাফের ভাষায়—লাইফ সাপোর্ট একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেটি রোগীকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে তৈরি। অনেকেই আর্থিক ও আইসিইউ বেড সংকটের কারণে রোগীকে দেরিতে ভেন্টিলেশনে নেন। তখন ফল খারাপ আসে। এতে ভুল ধারণা তৈরি হয়।

তিনি জানান, ঢাকার একটি হাসপাতালে গত এক বছরে তাদের আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের ৬০–৭০ শতাংশ বেঁচে ফিরে এসেছেন। কারও কারও ক্ষেত্রে একাধিকবার ভেন্টিলেশন লাগলেও তারা শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন।

তবে রোগীর বয়স, জেনেটিক্স এবং পূর্ববর্তী রোগের ইতিহাস অনুযায়ী রেসপন্স ভিন্ন হতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

এএমপি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।