মাসুদ চয়নের কবিতা

কিছু না থাকার আদিগন্তগুলো এবং অন্যান্য

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৫ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কিছু না থাকার আদিগন্তগুলো

শ্মশানে ভস্মীভূত অনটন, ধোঁয়া হয়ে উড়ে আসছে নাগরিক সভ্যতার দিকে।
কবরের বধির সম্ভাষণ খুঁজে ফিরছে তাকে, যার হারিয়েছে অনন্ত অনুধাবণ, স্মৃতি রোমন্থন—
দ্বিচারিত অনটনে সংকটে ভুগছিলে তবে কি তুমিই একা?

প্রকৃতিও শব্দহীন হয়ে গেছে দেখো—
যেন সেও শিলাস্তরের সবথেকে কঠিন সম্ভ্রম।
আজ রঙের শিহরণে শুধুই রহস্য।

শ্মশানে চিতা কাঠের গুঁড়ি আড়াআড়ি শুয়ে আছে, কাতরাতে কাতরাতে ছুটে আসছে,
কবরের গুল্মগুলো জট পাকিয়েছে সেই সমতলে—ধেয়ে আসবে বলে—

যখন থাকে না কিছুই—যুক্তির প্রথাগত স্রোতে না হাঁটাই ভালো—
না-থাকার শিল্পে শিল্পীকে একা হলে বেশ লাগে—
আর বেঁচে থাকার যেটুকু আনন্দ, সেটুকু পাওয়ার জন্য অন্ধকার তো আছেই;
সমান্তরালে হাঁটলেই হবে।

আমি নীল হয়ে যাবো—এ ভেবে কেঁদো না যেন,
কাঁদলে মনে হবে;
কী ভুলোমনা হিসেব আমার!
ভুলের সমতটে আবারও অন্ধ হলাম,
আছে তো কেউ—
তুমি আছো হয়েই;

যখন থাকে না কিছুই—শূন্যকে থেকে যাওয়া ধরে নেওয়া ভালো—
না-থাকার জটিল হিসেব হতে, শিল্পী যেহেতু, দূরে থাকা ভালো।
শূন্যকে ভালোবাসি মেনে মহাশূন্য যাত্রায় বিলীন হওয়া ভালো।

যদিও প্রতিবার নিশ্চুপ হয়ে যেতে হবে বিষাদের পেরিস্কোপে—
শুরু হবে পরাবাস্তবিক ঢেউ—
অদৃশ্য অনন্তে,
আনমনে হেঁটে যাবে তুমি অচেনা নক্ষত্রের কাছে,
আমি জীবন্ত শিখায় আগুন দিয়ে—
তখন মৃত্যুর মতো পবিত্র মনে হবে নিজেকে।

****

শূন্য ও আকাশের প্রতি


শূন্য ও আকাশ, এটুকুই... এইটুকু ভরসা হয়ে টিকে রইলো—
ইহা ব্যতীত আর কোনো পরিসর অবশিষ্ট রইলো না—
তোমাকে দেখার—খোঁজার...
পৃথিবীর অথৈ সৈন্য সামন্ত—
রেজিমেন্ট রুল জারি—
নিঃশব্দে মেনে নিয়ে, নিজেকে নিভিয়ে নিচ্ছি—
নেভার শেষ বিন্দু অবধি হামাগুড়ি দিয়ে... যেতে যেতে যেতে যেতে... অসীম অসহনীয় ব্যথাময় বিস্ময়ে—

তোমার রক্তের স্পন্দন,
চোখের খেরোখাতার অশ্রু ছলছল অনুকম্পন,
দূরে থেকেও খুব করে টের পাই—
কেঁপে উঠি, থেমে যাই,
তোমার রক্তে আমার স্পন্দন, আমার রক্তেও তেমনি...

বহুকাল বহুযুগ ধরে আকাশের শূন্য পরিসরে চেয়ে থাকবো—খুঁজে যাবো অনন্ত শোক ও অক্ষমতা নিয়ে—
যদি কোনোদিন হয়ে ওঠে—দেখা হয়ে যায় আকাশে শূন্য পরিসরে।
দেখা হয়ে যায় ধূসর অনন্তে—


শূন্য হয়েই বুঝেছি,
শূন্যতার অদ্ভুত পরাশক্তি—অপার স্ফূরিত সঞ্জীবনী। স্পর্শে বিমূর্ত অবগাহন;
দেহের সঙ্গে মানসিক সংযোগ নেই কতকাল—
রক্তের সাথে জল বা আহারেরও।
কিছু না থেকেও চারপাশে কত কিছু—বিকল্পের অনুসন্ধান নেই, বিপ্লব জমে আছে শিশিরের মতো।
স্বরূপের স্বপ্নহীনতার ব্যথাও গ্রাস করে না আর—নিঃশব্দের নিথর অবিচলতা শুধু হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
পৃথিবী মাথা নোয়াতে বাধ্য! অথচ মন থেকে চাইনি কিছুই—চাওয়ার কেন্দ্রভূপটে শূন্যই শ্রেয়তম।
শুধুই কবিতা আসছে—কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে বোধের শেষ স্পন্দনটুকু।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।