মাসুদ চয়নের কবিতা
ভাঙনের অণুকল্পন এবং বিবর্তন
ভাঙনের অণুকল্পন
দেওয়ার লিপিকায় মানবিক দেওয়ালিকা তুমি—
আমিও দিয়েছি শুদ্ধ জোগান—
অবশিষ্ট নেই যে আর!
না থাকায় বেঁচে থাকা যায় প্রগাঢ়।
সেভাবেই থেকে যাও তুমিও।
আদিগন্ত শূন্য শিহরণ ব্যাপ্তি,
এটুকুও কেড়ে নাও যদি,
যদি ছুঁড়ে ফেলো দূর নক্ষত্রে;
আটলাস পাহাড়সম লজ্জা ঢেকে থাকবো কী করে বলো তো!
হৃদয় ভাঙার অনন্ত শিহরণ আর বলা যাবে কাকে?
আজ রাতের আবহ নীল,
তুমি জানো না কো!
আজ হৃদয় অন্ধ আবছায়া—
প্রশান্তি খুঁজছে না!
শুকনো পাতার মতো মূল্যহীন,
ছন্দহীন প্রাণবিকতা।
ভুলে গিয়ে দায়মুক্ত করো তবে,
বধির শিল্পকলায়,
রামদার কোঁপে,
ফেলে দাও বোধ সাম্রাজ্য।
ক্ষয়ে যাই সচল সভ্যতা হতে—
যেহেতু, ক্ষয়ে যাচ্ছে আদর স্নেহের স্ফটিক ঝড়।
যেন মেকি পোড়ানের আদিমতা,
আমাকে চেনো না কেহ!
তুমিও তাদের সমতলে,
ভালোবাসো না!
আমি আর কাকে পাবো!
লজ্জায় প্রহার বিভীষণ ভীষণ,
তাচ্ছিল্য হয়ে আসে করাতকলের শব্দ বিভ্রাটের বেশে—
ভুলে যেও এর চেয়ে—
এর চেয়ে ভুলে যাওয়া ভালো।
****
বিবর্তন
আজকের রাত বৃষ্টিস্নাত নয়...
নেই ভিজে গন্ধ,
উষ্মবর্ণের অন্তঃদহন;
জীবনের সাথে ওতপ্রোত অন্ধকার,
হাবুডুবু খাওয়া মাখাজল, নীলাভ মৃত কোলাজ;
বৃষ্টির মতো অলসতাকে বুকে জড়াতে মন চাইছে;
যখন কিছুই থাকে না,
থাকে মৃদু উপশম বর্ষাবাদল—
বর্ষাবান্ধব বর্ষণে যা থাকে,
ধূমকেতুরূপে, ম্রিয়মান পরমাণুগুচ্ছ, স্ফটিক অঝর...
বৃষ্টি কখনো মায়ের মতো, প্রাকৃতিক পথ্য।
হারিয়ে যাওয়া বিরহী গন্ধের মতো উপছায়া—
কখনো থাকেনি কিছুই, বৃষ্টির মতো।
শুধু হতে চেয়েছে উদাসীন অদৃশ্য লীন।
প্লাবণের মতো নিঃশেষ করে দিয়ে যায়,
নিঃশেষ বিন্দুর জেগে ওঠা দেখে,
শূন্য টেনেছি শুধুই;
মেঘেদের অনিয়ন্ত্রিত সাম্রাজবাদে,
নদী উপকূলে,
অচল বিভ্রান্ত ঘাসে,
ছুটে ছুটে ক্লান্ত, আর বাঁচা-মরা!
মৃত্যুর সাথে বেঁচে থাকা, বেঁচে ফেরা।
আধমরা শালিক জন্ম...
দিশেহারা হতে চেয়েছি কত,
ক্ষত-বিক্ষত পরিতাপে—পরিহাস হেসেছে শুধুই!
বোধ উজ্জ্বল হয়েছে বটে।
হৃদয়ে শূন্য আছে, ভাসছে আলোক অনন্তে।
বেঁচে থাক রহস্য ধ্যান,
অচলাবস্থার মতো জংলার সুপ্ত স্রোতে
কিছু নেই জেনেও—
জেনেছি আছে, আছেই!
ভেবেছি থাকে যদি!
যদিও থাকে না কিছুই;
থাকেনি কিছুই!
এসইউ/জেআইএম