ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

কেমন যাবে ২০২৬

যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চয়তায় এশীয় দেশগুলোকে আরও কাছে টানবে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৪৬ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

 

এশিয়ার দেশগুলোর কাছে নিজেকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে তুলে ধরতে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক তৎপরতা জোরদার করেছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে চীন এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২০২৬ সালের শেষ দিকে চীনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলন। ২০১৪ সালের পর এই প্রথম চীন এপেকের আয়োজক হচ্ছে। এ সম্মেলনকে ঘিরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় তিন-পঞ্চমাংশ প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর নেতাদের নিয়ে এক জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চান, এশীয় দেশগুলোসহ গোটা বিশ্ব যেন চীনকে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে দেখে, যা স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত বাণিজ্যনীতির বিপরীত।

এরই মধ্যে ২০২৫ সালে এই কৌশলের আভাস দিয়েছে বেইজিং। অক্টোবরের শেষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির একটি উন্নীত সংস্করণে সই করেছে চীন। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এতদিন এসব দেশ চীনের বিরুদ্ধে কম দামে পণ্য ছেড়ে নিজেদের শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ করে আসছিল। নতুন চুক্তির ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পক্ষে চীনের অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতার পণ্য আমদানিতে বাধা দেওয়া আরও কঠিন হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যখন বিশ্ব রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে, তখন ছোট ও মাঝারি অর্থনীতির দেশগুলোর সামনে বিকল্প সীমিত। ট্রাম্পের তুলনায় শি জিনপিংকে অনেক দেশই তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে দেখছে। আগামী এক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলো, সুইজারল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করার লক্ষ্য নিয়েছে চীন। ২০২৫ সালের জুনে আফ্রিকা থেকে আমদানির ক্ষেত্রে একতরফাভাবে শুল্ক কমানোর ঘোষণাও দেন শি জিনপিং। এর কয়েক মাস পরই ট্রাম্প প্রশাসন আফ্রিকান দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ প্রবেশাধিকার দেওয়ার একটি কর্মসূচি বাতিল করে দেয়।

চীনের আরও বড় লক্ষ্য হলো ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপে (টিপিপি) যোগদান। একসময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই জোটকে চীনের প্রভাব কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক বলয় তৈরির হাতিয়ার হিসেবে দেখেছিলেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। জাপান ও অস্ট্রেলিয়া চীনের অর্থনৈতিক চাপের অভিজ্ঞতার কারণে এখনো চীনের সদস্যপদ নিয়ে অনাগ্রহী। তবে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বাড়তে থাকলে তাদের অবস্থান নরম হতে পারে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ২০২৬ সালের মধ্যেই চীন টিপিপিতে যোগদানের পথে এগোতে পারে।

এপেক সম্মেলন চীনের অর্থনৈতিক কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ২১ সদস্যের এই জোট সাধারণত খুব বেশি আলোচনায় না থাকলেও, চীনের মতো বড় অর্থনীতি আয়োজক হলে এর গুরুত্ব বেড়ে যাবে। আয়োজক দেশ হিসেবে চীন ওই বছর বহু অর্থনৈতিক বৈঠকের এজেন্ডা নির্ধারণের সুযোগ পাবে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছাঁটাই করছে, তখন চীন উল্টো তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করবে।

এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তন—এই দুটি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্থক্য তুলে ধরতে পারে চীন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ‘এআই প্রতিযোগিতায় জয়ের’ কথা বলছে, সেখানে চীন ‘গ্লোবাল সাউথের’ দেশগুলোর উন্নয়নে এআই ব্যবহারের বার্তা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতেও তুলনামূলকভাবে দায়িত্বশীল অবস্থান নিয়েছে চীন, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ‘ভুয়া’ বলে আখ্যা দেওয়া ট্রাম্পের বক্তব্যের বিপরীত।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এখানেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ট্রান্স-শিপড’ পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি এখনো অস্পষ্ট। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক আরও খারাপ হলে এই বিধান ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে নতুন চুক্তি করা দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। তবে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদার হওয়ার ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কেএএ/