ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

কেমন যাবে ২০২৬

নতুন বছরে বিশ্বকে বদলে দিতে পারে যে ১০ বিষয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

২০২৬ সালেও বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক টম স্ট্যান্ডেজের মতে, ২০২৫ সালে যেমন বিশ্বব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি নাড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প, আগামী বছরেও তার ব্যতিক্রম হবে না। বাণিজ্যযুদ্ধ, শুল্কনীতি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি একদিকে অস্থিরতা তৈরি করেছেন, অন্যদিকে গাজা ইস্যুর মতো কিছু ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ফলও এনেছেন। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৬ সালে নজরে রাখার মতো ১০টি প্রধান বিষয় তুলে ধরেছে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।

১. যুক্তরাষ্ট্রের ২৫০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২৬ সালে দেশটির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীত বয়ান শোনা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন ভোটাররা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের রায় দেবেন। তবে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা জেতার সম্ভাবনা থাকলেও ট্রাম্পের শুল্ক, চাপের রাজনীতি ও নির্বাহী আদেশনির্ভর শাসন অব্যাহত থাকবে।

২. ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন

বিশ্ব রাজনীতিতে স্পষ্ট কোনো কাঠামোর বদলে বাড়বে অনিশ্চয়তা। নতুন কোনো স্নায়ুযুদ্ধ নাকি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের প্রভাববলয়ের বিভাজন—কোনোটাই নিশ্চিত নয়। ট্রাম্পের লেনদেনভিত্তিক কূটনীতির কারণে পুরোনো নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা আরও দুর্বল হবে। তবে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও জলবায়ু ইস্যুতে ‘ইচ্ছুকদের জোট’ নতুন নতুন সমঝোতায় যাবে।

৩. যুদ্ধ ও শান্তি

যুদ্ধ ও শান্তি পাশাপাশি চলবে। গাজায় ভঙ্গুর শান্তিচুক্তি টিকে থাকতে পারে। কিন্তু ইউক্রেন, সুদান ও মিয়ানমারে সংঘাত চলবে। রাশিয়া ও চীন উত্তর ইউরোপ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে ‘গ্রে জোন’ কৌশলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রতিশ্রুতি পরীক্ষা করবে। যুদ্ধ ও শান্তির সীমারেখা ঝাপসা হয়ে ওঠায় উত্তেজনা বাড়বে আর্কটিক, মহাকাশ, সমুদ্রতল ও সাইবার দুনিয়ায়।

৪. ইউরোপের সমস্যা

ইউরোপের সামনে চ্যালেঞ্জ আরও গভীর হবে। প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো, যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রাখা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং বড় ঘাটতি সামাল দেওয়া—সব একসঙ্গে করা কঠিন হবে। কঠোর সাশ্রয়নীতিতে কট্টর ডানপন্থিদের উত্থানের ঝুঁকিও রয়েছে।

৫. চীনের সুযোগ

এই পরিস্থিতিতে চীন নতুন সুযোগ দেখছে। অভ্যন্তরীণভাবে মন্দাভাব ও শিল্প উৎপাদনের চাপ থাকলেও ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ফলে গ্লোবাল সাউথে চীন নিজেকে আরও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে তুলে ধরছে। একের পর এক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাত নয়, বরং লেনদেনভিত্তিক সম্পর্ক বজায় রাখাই চীনের কৌশল।

৬. অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা

বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগ বাড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনো ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কা সামাল দিলেও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হবে। ধনী দেশগুলোর অতিরিক্ত ঋণের কারণে বন্ড বাজারে সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাজনীতিকরণে বাজারে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।

৭. এআইর হুমকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। এআই অবকাঠামোয় বিপুল বিনিয়োগ অর্থনৈতিক দুর্বলতা ঢাকছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। যদিও প্রযুক্তিটির দীর্ঘমেয়াদি মূল্য নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে চাকরি বাজারে এআইয়ের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়বে।

৮. জলবায়ু পরিবর্তন

নতুন বছরে জলবায়ু পরিস্থিতি মিশ্র থাকবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখার লক্ষ্য এখন আর বাস্তবসম্মত নয়। ট্রাম্প নবায়নযোগ্য জ্বালানির ঘোর বিরোধী। এরই মধ্যে বৈশ্বিক নিঃসরণ সম্ভবত সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির প্রসার বাড়ছে, যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক চাপে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করবে না। ভূ-তাপীয় শক্তি বিশেষ নজরে থাকবে।

৯. খেলাধুলায় মূল্যবোধ

খেলাধুলাও রাজনীতির বাইরে থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে আয়োজন করবে ফুটবল বিশ্বকাপ। কিন্তু পারস্পরিক টানাপোড়েনে দর্শকসংখ্যা কমতে পারে। লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিতব্য ‘এনহ্যান্সড গেমস’-এ কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি থাকায় বিতর্ক তুঙ্গে উঠবে।

১০. কম দামে ওজন কমানোর ওষুধ

ওজন কমানোর ওষুধের নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। আরও উন্নত ও সস্তা জিএলপি-১ ওষুধ বাজারে আসবে, এমনকি ট্যাবলেট আকারেও। এতে ওষুধ ব্যবহারের নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক ক্রীড়াঙ্গন ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনেও ছড়িয়ে পড়বে।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সাল হবে অনিশ্চয়তা, প্রযুক্তি ও ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের বছর—যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাবই থাকবে সবচেয়ে দৃশ্যমান।

কেএএ/