ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

কেমন যাবে নতুন বছর

২০২৬ সালেই এআই’র আসল প্রভাব দেখতে পাবে বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

গত তিন বছর ধরে বিস্ময়ের চোখে চ্যাটজিপিটির বুদ্ধিমত্তা দেখেছে বিশ্ব। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে একই সংস্থার ভিডিও তৈরির এআই মডেল সোরার সৃজনশীলতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যে বিশ্ব অর্থনীতি ও সমাজে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটাবে—এই প্রত্যাশায় ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ডেটা সেন্টার ও অবকাঠামো খাতে ৪০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। এক হিসাবে, চলতি দশকের শেষ নাগাদ এই বিনিয়োগের অংক দাঁড়াতে পারে সাত ট্রিলিয়ন ডলারে।

তবে বিপরীতে এআই থেকে আসা রাজস্ব এখনো তুলনামূলকভাবে খুবই কম। বর্তমানে এআই-সংক্রান্ত বার্ষিক আয় প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা অ্যাপল বা অ্যালফাবেটের মোট বার্ষিক আয়ের মাত্র এক-অষ্টমাংশ। প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখন দৃষ্টি সরে যাচ্ছে এআইয়ের অর্থনৈতিক, আর্থিক ও সামাজিক প্রভাবের দিকে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালেই এসব প্রভাব স্পষ্টভাবে সামনে আসতে শুরু করবে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) মানুষ চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন। বহু কর্মী স্বীকার করেছেন, তারা কর্মক্ষেত্রে এআইয়ের সহায়তা নিচ্ছেন। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এআই গ্রহণের হার এখনো কম। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২৫০ জনের বেশি কর্মী রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের মাত্র ১০ শতাংশের একটু বেশি তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এআই যুক্ত করেছে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গত জুলাই মাসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের এআই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ কোনো ধরনের আর্থিক লাভই এনে দিতে পারেনি।

আরও পড়ুন>>
এআই দিয়ে ‘আহত হাতের’ ছবি বানিয়ে অফিস থেকে ছুটি নিলেন কর্মী
রোবটের ‘গর্ভে’ মানবশিশু? চীনের গবেষণায় বিশ্বজুড়ে হইচই

বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কীভাবে সর্বাধুনিক এআই মডেলে ঝুঁকছে?
এআই ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারে ৭% চাকরি ঝুঁকির মুখে

এই বাস্তবতায় সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, উদ্যোক্তা ও বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মূল লক্ষ্য এখন একটাই—ব্যবসায়িক খাতে এআই ব্যবহারের গতি বাড়ানো। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রমে সফলভাবে এআই যুক্ত করতে পারে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ে, তবে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।

এই লক্ষ্য সামনে রেখে নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক স্টার্টআপও গড়ে উঠেছে। যেমন, হার্ভে এআই আইনজীবীদের বিপুল পরিমাণ চুক্তিপত্র বিশ্লেষণে সহায়তা করছে, আর সিয়েরা গ্রাহকসেবায় এআই ব্যবহারে কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতা দিচ্ছে। এমনকি ওপেনএআই ও অ্যানথ্রোপিকের মতো শীর্ষ এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠানও অর্থনীতি ও জীববিজ্ঞান গবেষকদের জন্য বিশেষভাবে সাজানো সেবা দিচ্ছে। ফলে ২০২৬ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হয়ে উঠবে—ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কত দ্রুত এবং কতটা সফলভাবে এআই গ্রহণ করতে পারছে।

এআই’র আর্থিক সম্ভাবনা

এআইয়ের সফলতা শুধু উৎপাদনশীলতা বা প্রবৃদ্ধির প্রশ্ন নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশাল আর্থিক বাজারও। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের মোট বাজারমূল্যের ৪৪ শতাংশই ছিল এআই-নির্ভর কোম্পানির শেয়ার। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ভবিষ্যৎ আয়ের তুলনায় দাম বা মূল্যায়ন সূচক দাঁড়িয়েছে ৩১, যেখানে পুরো সূচকের গড় ১৯। যদি এআই গ্রহণের গতি বাড়ে, তবে বিনিয়োগকারীরা মনে করবেন—তাদের ধৈর্য ও অতিরিক্ত বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত সুফল দেবে। কিন্তু যদি দেখা যায়, এআই থেকে লাভ আসতে দেরি হচ্ছে বা আদৌ আসছে না, তাহলে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটতে পারে।

ইতিহাস বলছে, রেলপথ বা ইন্টারনেটের মতো কার্যকর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও আর্থিক উচ্ছ্বাস ও পরে সংশোধন এসেছে। এআই ঘিরে বিনিয়োগে ধস নামলে তার প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও। ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগ এবং শেয়ারবাজারে সম্পদের মূল্যবৃদ্ধি শুল্ক, অভিবাসন হ্রাস ও অনিশ্চয়তার প্রভাব অনেকটা আড়াল করে রেখেছে। কিন্তু এআইয়ের জোয়ার থেমে গেলে মার্কিন পরিবারগুলোর সম্পদের মূল্য থেকে ট্রিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে যেতে পারে।

চাকরি কাড়বে এআই?

অন্যদিকে, যদি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত এআই গ্রহণ করে, তবে তা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করলেও নতুন উদ্বেগ তৈরি করতে পারে কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এআই কোম্পানিগুলো এখন এমন ভার্চুয়াল ‘এজেন্ট’ তৈরি করছে, যারা মানুষের মতো একের পর এক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারে, তাও কম খরচে ও দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। এমনকি ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক স্টার্টআপ আর্টিজান বিজ্ঞাপনেও বলছে, ‘মানুষ নিয়োগ বন্ধ করুন।’ বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের বার্তা এআইকে চাকরি কেড়ে নেওয়া প্রযুক্তি হিসেবে দেখার প্রবণতা আরও বাড়াতে পারে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ের বেকারত্ব বৃদ্ধির জন্য কেউ কেউ এআইকে দায়ী করছেন। যদিও গবেষণায় এর পক্ষে শক্ত প্রমাণ নেই। ইয়েল বাজেট ল্যাবসহ কয়েকটি গবেষণা বলছে, এআই এখনো শ্রমবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেনি এবং এআইনির্ভর খাতে অন্য খাতের তুলনায় বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রমাণও মেলেনি।

অতীতের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন দেখায়, ব্যাপক বেকারত্বের আশঙ্কা সাধারণত বাস্তব হয় না। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা বাড়ার ফলে বরং আরও কর্মী নিয়োগ করে। পুরোনো কিছু কাজ হারালেও নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে পরিবর্তন নিয়ে মানুষের উদ্বেগ স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এআই ঘিরে প্রত্যাশা ও উত্তেজনা নজিরবিহীন। এর প্রকৃত প্রভাব কী হবে—অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ, আর্থিক ধস, সামাজিক প্রতিক্রিয়া নাকি তিনটিরই কোনো মিশ্রণ—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্ব সেই উত্তর খুঁজতে শুরু করবে ২০২৬ সালেই।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/