মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে বিএটি’র কারখানা অপসারণ দাবি

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:০৪ পিএম, ১৭ মে ২০২৫

অবিলম্বে মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকা থেকে বিএটি’র তামাক কারখানা অপসারণ করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানানো হয়েছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) গত বুধবার (১৪ মে ২০২৫) এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৬৫ সালে যখন ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ-এর তামাক কারখানা স্থাপন করা হয়, তখন এটি একটি গ্রামীণ জনপদ ছিল। মূল শহরের অংশ ছিল না। ক্রমান্বয়ে মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক ও পর্যায়ক্রমে মিশ্র-আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়। এখানে হাজার হাজার পরিবারে শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী কয়েক লক্ষ মানুষ বসবাস করে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিশু লেখাপড়া করে। কিন্তু বিএটি’র তামাক কারখানা থেকে নির্গত তামাকের রাসায়নিকের কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তামাক পাতা আনা-নেওয়া এবং উৎপাদিত তামাক পণ্য সারাদেশে পরিবহনের কাজে বড় বড় ট্রাক-লরির আগমনে এ এলাকায় সড়কে ব্যাপক চাপ পড়ে। আবাসিক এলাকার এ সড়কে এ ধরনের বড় বড় ট্রাক-লরি শিশুদের জন্য ভয়ের কারণ। যানজট, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণও সৃষ্টি করছে।

তামাক কারখানার মতো ক্ষতিকর একটি কারখানা কীভাবে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় এখনো কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেটা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই। কীভাবে এ কারখানা পরিবেশ ছাড়পত্র বা অন্যান্য অনুমতি পায় তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমরা মনে করি, তামাক কোম্পানির প্রভাবে ২০২৩ সালে এসে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা’ সংশোধন করে তামাক সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানকে লাল শ্রেণির পরিবর্তে কমলা শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে এবং তামাক চাষে ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। তামাক কোম্পানি ও তাদের অনৈতিক কার্যক্রম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশ শহরের মাঝখান থেকে ক্ষতিকর তামাক কারখানাগুলো সরিয়ে সেখানে স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলছে। যেমন: তামাক কোম্পানির একচেটিয়া মালিকানাধীন ২০০ একর জমির একটি প্লট ব্যাংককে বেঞ্জাকিট্টি ফরেস্ট পার্ক করা হয়েছে, বর্তমানে যা একটি পাবলিক পার্কে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯২৭ সালে নির্মিত গ্রীসের এথেন্সের একটি তামাক কারখানা, সুলায়মানিয়া, কুর্দিস্তানের একটি তামাক কারখানা বর্তমানে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে। মেলবোর্নের ৫.৩ হেক্টরের তামাক কারখানা “মরিস মুর” বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক পার্কে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং ১৫ লক্ষাধিক মানুষ ফুসফুস ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, অ্যাজমা ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ তামাক। উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, ঢাকার আশেপাশে প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯২% শিশুর মুখের লালায় উচ্চ মাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে ।

তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণও পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তামাক শুকানোর জন্য প্রতি একর জমিতে প্রায় ৫ টন কাঠ প্রয়োজন হয় যার দেশের বনভূমির প্রায় ৩০%। ২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিগারেটের ফেলে দেয়া অবশিষ্টাংশ থেকে ৪,১৩৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা সংগঠিত মোট অগ্নিকাণ্ডের ১৫.৫২%।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা মহাখালীর ডিওএইচএস থেকে বিএটি’র তামাক কারখানা অপসারণ করার জোর দাবি জানায়।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।