যৌক্তিকভাবে হিমাগারের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, দাবি অ্যাসোসিয়েশনের

হিমাগারে প্রতিকেজি আলু সংরক্ষণের ভাড়া সাত টাকা থেকে বাড়িয়ে আট টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আলু সংরক্ষণের খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে এ ভাড়া বৃদ্ধি যৌক্তিকভাবে সমন্বয় করা হয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ)।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পুরানা পল্টনে বিসিএসএ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ও হিমাগার ব্যবস্থাপনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কিছু স্থানে কিছু সুবিধাভোগী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আন্দোলন করছেন। বাস্তবতার নিরিখে হিমাগার পরিচালনার আবশ্যকীয় ব্যয় বিবেচনায় না নিয়ে তাদের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোস্তফা আজাদ আরও বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকেই হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা শুরু হবে। গত বছরের চেয়ে সব ক্ষেত্রে হিমাগার পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যয় বেড়েছে। আগের চেয়ে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া সঠিক সময়ে কিস্তি দিতে না পারলে জরিমানা, বিদ্যুৎ বিল, লোডিং-আনলোডিং ও বস্তা পরিবর্তন (পাল্টানি) খরচ, মজুরি বোর্ড ঘোষিত স্টাফদের বর্ধিত বেতনভাতা, বোনাস, সম্মানি, হিমাগারের ইন্স্যুরেন্স, অ্যামোনিয়া গ্যাস, লুব্রিকেন্ট অয়েল খরচ, হিমাগারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও মেরামত খরচ, অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচও বেড়েছে।
‘এসব খরচ বিশ্লেষণ করে ২০২৫ সালে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে কেজি প্রতি ভাড়া দাঁড়ায় ৯ টাকা ৬২ পয়সা। এমনকি আরও অনেক খরচ আছে যা যোগ করলে প্রতি কেজি আলুর ভাড়া দাঁড়াবে প্রায় ১২ টাকা। তবে দেশের আলু চাষি এবং হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীদের আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের কেজি প্রতি ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের ২০১৭ সালের নির্দেশ মোতাবেক পুরুষ শ্রমিক দ্বারা সর্বোচ্চ ৫০ কেজি ও মহিলা শ্রমিক দ্বারা সর্বোচ্চ ৩০ কেজি ওজনের আলুর বস্তা ওঠানামার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ নির্দেশ মোতাবেক ২০১৭ সালে ৫০ কেজি আলুর বস্তা হিমাগারে সংরক্ষণ করা হলেও পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর ৫৫ কেজি থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৭০ থেকে ৭২ কেজি আলু বস্তায় ভরে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৪ সালে অ্যাসোসিয়েশন নির্ধারিত হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ছিল কেজিপ্রতি সাত টাকা। সে হিসাবে ৫০ কেজির বস্তার আলুর ভাড়া ৩৫০ টাকা। আলু সংরক্ষণকারীরা ৭০ থেকে ৭২ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়াও ৩৫০ টাকা দিয়েই হিমাগার থেকে আলু বের করেছেন। ফলে হিমাগার মালিক প্রতি বস্তায় ১৫ থেকে ২২ কেজি আলুর ভাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। গড়ে ১০ হাজার টনের একটি হিমাগার প্রায় দেড় কোটি থেকে ২ কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
এরফলে দেশের চারশ হিমাগারের মধ্যে প্রায় তিনশ হিমাগার সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এছাড়া অন্যান্য পরিচালন ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে সেগুলো রুগ্ন হিমাগারে পরিণত হয়েছে। বেশ কিছু হিমাগার ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
বিগত ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে আলুর বাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ মূল্যহ্রাস ঘটে। ফলে হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বের না করায় হিমাগার মালিকরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েন। ফলশ্রুতিতে ব্যাংক ঋণের কিস্তি নিয়মমাফিক পরিশোধ করতে না পারয় বিভিন্ন আর্থিক চাপ ও সমস্যা নিয়ে হিমাগার পরিচালনা করছেন, যা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
মোস্তফা আজাদ বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়িয়েছি। এরপর কিছু মধ্যস্বত্তভোগী ও সুবিধাভোগী মানুষ সত্য গোপন করে বলছেন ২০২৪ সালে কেজি প্রতি ভাড়া ছিল চার টাকা। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেশের হিমাগার শিল্পের সুষ্ঠু পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি করবে।
এ অবস্থায় বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণের যৌক্তিকতা যাচাই করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং ট্যারিফ কমিশনের আহ্বান জানান বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
এনএইচ/কেএসআর/জিকেএস