ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে ২২ জনের মৃত্যু
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ চট্টগ্রাম এলাকার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। রোয়ানুর প্রবল বাতাসে গাছ ভেঙে ও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের সাত জেলায় ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
নিজস্ব প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
চট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র তাণ্ডবে চট্টগ্রামে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে এক শিশু, বাঁশখালীতে সাতজন ও সীতাকুণ্ডে মা ও শিশু।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নে জঙ্গল ছলিমপুর গ্রামে ঝড়ে গাছের চাপায় ঘরের চাল ভেঙে মা ও শিশু নিহত হয়েছে। শনিবার ভোরে উপজেলার ছলিমপুর গ্রামে লোকমানিয়াঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মায়ের নাম কাজল বেগম (৪৮)। ছেলের নাম মো. বেলাল হোসেন (১০)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে, নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ষোলশহর এলাকায় শনিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে ঝোড়ো বাতাসের ফলে সৃষ্ট ঝড়ে ইটের আঘাতে পথশিশু রাকিবের (১১) মৃত্যু হয়েছে।
বাঁশখালী: ঝড়ের প্রভাবে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় সাতজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
নোয়াখালী: রোয়ানুর প্রভাবে জোয়ারের পানির তোড়ে হাতিয়ায় মা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন, হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের মিনারা বেগম (৩৫) ও ১০ বছরের মেয়ে মরিয়মনেছা এবং জাহাজমার ইউনিয়নের রিপুলা বেগম (৪৭)। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মো. মইনুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিকেলে জোয়ারের পানি আসতে দেখে আসবাবপত্র রক্ষা করার জন্য তারা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তারা। পরে তারা আর ঘরের ভিতর থেকে বের হননি।
কক্সবাজার: কক্সবাজারের রোয়ান’র তাণ্ডবে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, উপজেলার কৈয়ারবিল গ্রামের ফজলুল হক (৫৫), একই ইউনিয়নের ধুরুং গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবালের (২৫) এবং তাবলেরচর গ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর ডেইল সৈকত।
কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অংসা থোয়াই বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ভোলা : রোয়ানুর প্রভাবে ভোলার চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তজুমদ্দিনে ঘরচাপা পড়ে দুইজন নিহত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রচণ্ড ঝড়ে অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়েছে। নিহতরা হলেন, রেখা (১৮) ও রহিম (৯)। শনিবার ভোর পৌনে ৪টা থেকে রোয়ানুর প্রভাবে এই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।
অন্যদিকে, ঘরপাচায় দৌলতখানের দক্ষিণ জয়নগর গ্রামে নুর মোহাম্মদের স্ত্রী রানু বেগম এবং মনপুরায় ঘরবাড়িতে জোয়ারের পানিতে ডুবে শিশু নোমানের মৃত্যু হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় গাছ ভেঙে পড়ে আনোয়ার উল্লা (৫২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে দুপুরে উপজেলার তেয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের শহর কসবা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার উল্লা একই গ্রামের বশির উল্লা ছেলে।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাজ্জাদুর হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় `রোয়ানু` মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। গত দুই দিনে উপকূলবর্তী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১৭০০ মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৪০ হাজার মানুষ স্বজনদের বাড়িসহ নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৬৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে পটুয়াখালীর দশমিনায় ঘর চাপায় নয়া বিবি (৫২) নামে এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। শনিবার সকালে দশমিনার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফেনী: `রোয়ানু`র তাণ্ডবে ফেনীর সোনাগাজীর চরচান্দিয়ায় যুবক নুরুল আলমের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। এসময় আরো দুইজন নিখোঁজ হন।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফা হক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এআরএ/এসএইচএস/এআরএস/এবিএস