সরকার ও সেনাবাহিনী একে অন্যের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে: সেনাসদর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৬ পিএম, ২৬ মে ২০২৫
সেনানিবাসে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উল-দৌলা/ছবি: জাগো নিউজ

সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অন্যের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে সেনাসদর। সোমবার (২৬ মে) সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা।

করিডোরের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এবং এই বিষয়ে সেনাবাহিনী কী ভাবছে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এই দেশ আমাদের সবার। এই দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িত। দেশকে ভালো রাখতে সবাইকে কাজ করতে হবে। সুতরাং আমি মনে করি না যে বিষয়টা এমন একটি পর্যায়ে গেছে যেভাবে বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এবং সেনাবাহিনী একে অন্যের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে কাজ করছি এবং সরকারের নির্দেশের দায়িত্ব পালন করছি। সরকার এবং সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অন্যের সহযোগিতায় কাজ করছে। করিডোরের সঙ্গে বর্ডারে আরসার মুভমেন্টের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই দুইটা বিষয় আলাদা। সরকার ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে এ রকম যেন আমরা না ভাবি। সরকার ও সেনাবাহিনী একই সঙ্গে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও আমরা আরও সুন্দরভাবে কাজ করে যাবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

আরও পড়ুন

চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ’র ৩০ হাজার পোশাক পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, কেএনএফ মূলত বম কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন। পোশাক পাওয়ার সংবাদটি একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। সংগঠনটির অস্ত্রের ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখছি। তাদের আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনাসদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আহতও হয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই এটা ভালো কোনো খবর নয়। ৩০ হাজার ইউনিফর্ম পাওয়ার ছবি দেখার পর আমরা সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেছি এটা আসলে ব্যাপারটা কি এ বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। এ পোশাক কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ চলছে। এই সংগঠনের সঙ্গে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।

তিনি বলেন, বম কমিউনিটির জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। সুতরাং এই ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেএনএফএর জন্য ছিল কি না সেটা খুঁজে দেখার সুযোগ আছে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। বিষয়টিকে আমরা হালকাভাবে নেইনি নিশ্চিত করে বলতে পারি। এ ব্যাপারে যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমাদের দায়িত্বের মধ্যে যেটা পড়ে সেটা আমরা করব।

বাংলাদেশ একটা ছায়া যুদ্ধের মধ্যে আছে সেটা বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে। আরসা বাংলাদেশের লোকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে ঢুকে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনেক সময় বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসছে তাদের কাছে ভারি ভারি অস্ত্র আছে, তাদের কাছে এই অস্ত্র কোথায় থেকে আসছে। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আসলে বর্ডার কি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে নাকি আমরা বর্ডার কম্প্রোমাইজ করেছি? এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন- যদি এক লাইনে উত্তর দিতে চাই অবশ্যই আমরা বর্ডার কম্প্রোমাইজ করিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গায়ে বিন্দুমাত্র শক্তি থাকবে আমরা কখনোই বর্ডার কম্প্রোমাইজ করবো না। এটা আমাদের দেশ আর দেশকে আমরা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করব।

তিনি বলেন, এটা আমাদের দেশ, এটা আপনার দেশ। কোনো একটা সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এই দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হতে পারে সেটা কখনোই হবে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বর্ডার অত্যন্ত জটিল একটি পরিস্থিতির মুখে আছে। মিয়ানমারের সরকারের অস্তিত্ব বিলীনের মুখে। আরাকান আর্মির রাখাইন রাজ্যটিকে প্রায় দখল করে নিয়েছে। তাদের দখলে রাখাইন রাজ্যের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রয়েছে। আরাকান আর্মি কোনো অথরাইজ সংগঠন নয়। এই জায়গাটাতে না আছে কোনো সরকারের অস্তিত্ব, না আছে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বর্ডারে যে পরিস্থিতি যে কোনো সময়ের তুলনায় সংবেদনশীল। সেই ক্ষেত্রে এই সময়ে ওই এলাকায় কিছু সশস্ত্র গ্রুপের মুভমেন্ট করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার মানে এই নয় যে এটাকে আমরা স্বীকৃতি দেব বা দেখেও না দেখার ভান করব।

তিনি জানান, এই ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতিতে এই ধরনের মুভমেন্ট হতে পারে। কিন্তু আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই বিজিবি প্রাথমিকভাবে ডিফারেন্টলি সাপোর্টেড বাই আর্মি আমরা এই বর্ডারে নজরদারি রাখছি। তবে অবশ্যই এই মুভমেন্টটি উদ্বেগের বিষয় এবং কাঙ্ক্ষিত নয়।

সম্প্রতি লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অধীনে ছিল এবং আছে। সম্প্রতি আর্মি এভিয়েশন লালমনিরহাট বিমানবন্দরে অবস্থান করছে। আগামী জুলাই মাসের দিকে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের রানওয়ে চালুর কথা রয়েছে অ্যারোস্পেস ইউনিভারসিটির শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও বিমান উড্ডয়নের জন্য।

ভবিষ্যতে বিমানবন্দরটি চীনের ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সঙ্গে আমাদের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাবে এটা খুব স্বাভাবিক। লালমনিরহাট অনেক পুরোনো একটি বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি আগেই ছিল এটি ব্যবহার হয়নি। প্রয়োজনের নিরিখে সেটি আবার সচল করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের সম্পদ দেশের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে এটাই স্বাভাবিক। এতদিন প্রয়োজন পড়েনি তাই ব্যবহার করা হয়নি, এখন প্রয়োজন পড়েছে তাই আবারও সচল করার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, চীন ব্যবহার করবে কি না বা কবে ব্যবহার করবে, এ ধরনের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এটুকু আশ্বস্ত করতে পারি দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় ও দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এরকম কোনো কর্মকাণ্ডে কোনো দেশকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে বা সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই সরকার ভেবে দেখবে। আমি মনে করি না কোনো সরকার কোনো কিছু চিন্তা না করে কোনো পদক্ষেপ নেবে।

টিটি/এমআইএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।