ওয়াহিদুল আলম

বিমানের ছোটোখাটো ঘটনা রূপ নিতে পারে বড় দুর্ঘটনায়

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০২:৫৭ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০২৫
ফাইল ছবি

একের পর এক কারিগরি ত্রুটির কবলে পড়ছে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গত এক মাসে অন্তত ১৪টি ঘটনায় বিমানের বোয়িং ও ডিএইচসি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ কারিগরি সমস্যার মুখে পড়েছে। এখন সংস্থাটির ১০টি বড় উড়োজাহাজের মধ্যে অন্তত চারটি গ্রাউন্ডেড অবস্থায়। এর মধ্যে তিনটি বোয়িং ৭৮৭ এবং একটি বোয়িং ৭৭৭।

এ অবস্থায় বিমানের ফ্লাইট সূচি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। এ কারণে বিমানের উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া প্রকৌশলসহ অন্যান্য বিভাগে অদক্ষ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে জনবল নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও বিমানের সাবেক বোর্ড সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। মোবাইল ফোনে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মুসা আহমেদ

কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বুড়ো হলে মানুষের শরীরের যেমন নানান রকম অসুখ ধরে তেমন যে কোনো ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে করতে একটা পর্যায়ে আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে থাকে। তখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে যন্ত্রাংশের প্রতিস্থাপন (রিপ্লেসমেন্ট) দরকার হয়। তবে বিমানের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে এগুলো কিন্তু মেরামত করার সুযোগ থাকে না। তখন পুরো যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ চেঞ্জ করতে হয়।

আরও পড়ুন

কোনো বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করা জরুরি জানিয়ে ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিমানে ত্রুটি থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করতে হয়। এ কাজ করতে গিয়ে যদি গাফিলতি হয় তাহলে তার ক্ষতির পরিমাণ বলা মুশকিল।

বিমানের ছোটোখাটো ঘটনা রূপ নিতে পারে বড় দুর্ঘটনায়বিমানের সাবেক বোর্ড সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম

বিমানের সেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে জানিয়ে ওয়াহিদুল আলম বলেন, এখন মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বিমান নিয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাদের ধারণা, বিমান একটি দুর্নীতিপরায়ণ সংস্থা। এখানে স্বজনপ্রীতি, দক্ষ লোকের জায়গায় অদক্ষ লোক নিয়োগ হয়। সবচেয়ে যেটা ভয়ংকর আমরা দেখেছি, পাইলট নিয়েও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি হয়েছে। নিজের স্ত্রী, বোন, ভাইকে নিয়োগ দিয়েছে। এখানে নিয়োগে নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। এমন পাইলটরা আবার বেশ কিছুদিন ধরে বিমান চালিয়েছিল। সেগুলো আবার ধরাও পড়েছে।

ওয়াহিদুল আলম বলেন, এখান বিমানের প্রকৌশল বিভাগে যারা কাজ করছেন, আমাদের মেইনটেইন্যান্স ওয়ার্কশপে ইঞ্জিনিয়ার যারা আছেন, তাদের যোগ্যতা ঠিক আছে কি না, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে কি না, দুর্নীতি করা হয়েছে কি না এগুলো কিন্তু দেখার বিষয়। কারণ একটি এয়ারক্রাফটের ত্রুটি ঠিক করার পর যখন আকাশে উড়ে তখন আরেকটি ত্রুটি ধরা পড়ছে। যখন বিমান দুর্ঘটনা বা যান্ত্রিক ত্রুটি বারবার ধরা পড়ে তখন স্বাভাবিকভাবেই এসব প্রশ্ন সামনে আসে। তখন যারা দায়িত্বে থাকে তাদের ওপর বর্তায়।

বিমানের এখন কী করা উচিত, এ বিষয়ে বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও বিমানের সাবেক বোর্ড সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিমানের উচিত হবে তাদের মেইনটেইন্যান্স টিম আরও শক্তিশালী করা। প্রকৌশলীদের আরও দক্ষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া। প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক সময় মেইনটেন্যান্সে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তাই বিমানকে আরও সূক্ষ্মভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। না হলে এ ধরনের ছোটোখাটো ঘটনা থেকে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন এর দায় কিন্তু আমাদের সবার ওপরে পড়বে। স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি আমাদের কারও কাম্য নয়।

এমএমএ/এমআইএইচএস/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।