জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশে বক্তারা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর টিকে থাকা কঠিন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৫ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
‘তৃতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা/ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর টিকে থাকা কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে ধনী দেশগুলোর গড়িমসির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর জবাবদিহিতা ও সুবিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে ‘তৃতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)–এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশে সরকারি প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক জলবায়ু আন্দোলন কর্মী, গবেষক এবং জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ প্রায় ২,০০০ মানুষ অংশ নিয়েছেন। বক্তারা জলবায়ু সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব পদক্ষেপের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান ব্যবধান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সমাবেশের উদ্বোধনকালে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে কম দায় থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বড় ভুক্তভোগী দেশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারির ফ্রন্টলাইন দেশগুলোর একটি। অথচ গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

শিল্পোন্নত দেশগুলোর দায়ের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা শারমিন আরও বলেন, আমরা তাদের কাছে ঋণী নই—বরং তারা আমাদের কাছে ঋণী। জলবায়ু ন্যায্যতা এখন জবাবদিহি ও কার্যকর পদক্ষেপের বিষয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে আর কেবল প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। জলবায়ু ন্যায্যতা মানে ন্যায়, টিকে থাকা এবং জবাবদিহি।

জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অব্যাহত নির্ভরতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক চুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখনো বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। গ্লোবাল নর্থ প্রায়ই ন্যায়বিচারের বদলে ঋণ দেয়।

উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার এবং সঞ্চালনা করেন ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং স্বাগত বক্তব্য দেন।

শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ুর অভিঘাতে টিকে থাকা বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু ন্যায্যতা শুধুই একটি দাবির জন্য দাবি নয়, এটি বাংলাদেশের টিকে থাকার শামিল। এই ন্যায্যতা আমরা যদি নিজেদের ঘর থেকে শুরু করতে না পারি তাহলে আমরা বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যায্যতার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব না। কাজেই আমরা এই সমাবেশের মাধ্যমে দেখতে চাই কোথায় কোথায় অন্যায্যতা হচ্ছে। আমাদের যে পরিবর্তন হচ্ছে তার ন্যায্যতা কতটুকু এবং যদি অন্যায্যতা থাকে তাহলে আমরা সবাই মিলে যাতে ন্যায্যতায় ফিরিয়ে আনতে পারি।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরাও জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে ধনী দেশগুলোর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি)–এর সমন্বয়ক ফিলিপাইনের লিডি ন্যাকপিল, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত সরে আসা এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আরও জোরালো বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ–এর প্রধান নির্বাহী আসাদ রেহমান বলেন, যে সংকট দরিদ্র দেশগুলো সৃষ্টি করেনি, তার অর্থায়নের দায় তাদের ওপর চাপানো অন্যায়।

তিনি বলেন, ঋণ ও পরিশোধের মাধ্যমে এখনো গ্লোবাল সাউথ থেকে গ্লোবাল নর্থে অর্থ প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে দক্ষিণের দেশগুলো প্রতি বছর ট্রিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে। এই সংকটের দায় যাদের সবচেয়ে কম, তাদের দিয়ে মূল্য চোকানো শুধু অন্যায় নয়, অশ্লীল। ধনী দেশগুলোকেই এর মূল্য দিতে হবে।

টারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সাইনান হটন বলেন, উন্নয়নের মূল্য হিসেবে দূষণ মেনে নেওয়ার সময় শেষ। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি একটি কার্যকর ও ন্যায়ভিত্তিক বিকল্প এবং সৌরশক্তি ও ব্যাটারিনির্ভর শহরগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে আরও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নদী দখল, অব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস নিয়েও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে অগ্রগতি আনতে কপ–২৯–এর ব্যর্থতার সমালোচনা করেন বক্তারা। তারা দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর এবং ন্যায্য রূপান্তর নিশ্চিত করতে শক্তিশালী নীতি সংলাপের ওপর জোর দেন।

সম্মেলনের আগে এক হাজারের বেশি দেশি ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু কর্মী একটি র‍্যালিতে অংশ নেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে আগারগাঁও হয়ে র‍্যালিটি সম্মেলনস্থলে গিয়ে শেষ হয়। র‍্যালিতে বৈশ্বিক দূষণকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

আগামীকাল রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সমাবেশের দ্বিতীয় দিনে থিমেটিক সেশন, কর্মশালা ও নেটওয়ার্কিং আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এমএএস/এমএমকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।