ইসির সভায় রেঞ্জ ডিআইজি

নেতারা দিনে বক্তব্য দিয়ে রাতে আসামি ছাড়াতে তদবির করেন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মতবিনিময় সভা/ছবি: জাগো নিউজ

‘গণমাধ্যমে যা দেখছি তাতে মনে হয় সিরিয়া-লিবিয়ায় বসবাস করছি। সাংবাদিকদের দেশের মানুষের কথা ভেবে প্রতিবেদন করলে ভালো হয়। আমরা বর্তমানে কারও কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছি না। যাদের গ্রেফতার করি তাদের ছাড়াতে দিনে বক্তব্য দেওয়া রাজনৈতিক নেতারা রাতে তদবির করেন।’

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ।

গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ সভা হয়। এতে রেঞ্জ ডিআইজি (পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক), বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি (জেলা প্রশাসক), এসপি (পুলিশ সুপার) ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

সভায় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন ঘিরে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে তারা বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার ও প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে তারা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে।

এছাড়া সভায় চিহ্নিত অপরাধীদের জামিন রোধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কঠোর পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে একটি ‘মডেল নির্বাচন’ উপহার দিয়ে ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করাই এখন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য বলে জানানো হয়।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি বলেন, ‘প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের বাসনা এই ২০২৬ সালের নির্বাচনকে যেন ২০৩১ এবং ২০৩৬ সালেও মানুষ মনে রাখে।’

ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি জানান, তারা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) নির্দেশে দেশের পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক। তারা দলমত নির্বিশেষে কাউকে অন্যায়ভাবে কিছু করতে দেবেন না। বাংলাদেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমাদের কাজ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র জমা করা। নির্বাচনের বাজেট যেন সময়মতো পাই। নির্বাচনকালীন সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব গুজব ছড়ানো হয় এটা বন্ধ করতে হবে।’

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জানান, তারা সব অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয় করছেন। এআই নিয়ে তৈরি ছবি বা ভিডিও বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) জানাচ্ছেন। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর যদি সাজা দেওয়া হয় তাহলে তা দেখে অন্য কেউ সেটি করার সাহস পাবেন না। ২০২৬ সালের নির্বাচন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে জানান তিনি।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কালু এবং কাঁকন এ দুটি গ্রুপের সঙ্গে কেউ পারছেন না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রোন প্রয়োজন হতে পারে। উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে যদি যৌথভাবে মহড়া দেওয়া হয় তাহলে আশা করা যায় যে কেউ অন্যায় কিছু করতে পারবেন না।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সব কাজ তাৎক্ষণিকভাবে করা হবে। অপরাধীদের ঢালাও জামিন বন্ধের বিষয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মত দেন, বিজিবি মোতায়েন খুব জরুরি। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আসে, অপরাধীরা আসা-যাওয়া করে। তাই সীমান্ত-সংলগ্ন কেন্দ্রগুলো বিবেচনা করে নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন। অপরাধীদের চলাচল নজরদারি করা প্রয়োজন। জেলখানার ভেতরে থেকে অনেকে অপরাধ করছেন, এটি দেখা উচিত। যারা চিহ্নিত অপরাধী তারা যেন কোনোভাবেই জামিন না পান। যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা সবসময়ই অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন।

প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান। ২০২৬ সালের নির্বাচন ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে প্রত্যাশাও করেন তিনি।

এমওএস/একিউএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।