কেরানীগঞ্জে মাদরাসায় বিস্ফোরণ
আল আমিনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে পুলিশ, ৩ নারী গ্রেফতার
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদরাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল সন্দেহভাজন উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার পরিচালক শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন।
তবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল আমিন জড়িত ছিলেন কি না তা তদন্তের পাশাপাশি বিস্ফোরণের পেছনে রাসায়নিক বিক্রিয়া বা বিস্ফোরক ব্যবহারের আশঙ্কাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার পরিচালক শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া, আছিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানি খাতুন। ঘটনাস্থল থেকে ড্রামভর্তি প্রায় ৪০০ কেজির মতো রাসায়নিক লিকুইড উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট তদন্ত করছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার বক্তাবলী থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির সদস্য শেখ আল আমিনসহ আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। সেসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি চাকু, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি এবং জঙ্গি সংশ্লিষ্ট বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ বলেন, উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল একটি বেসরকারি মাদরাসা। মাদরাসাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শেখ আল আমিন এবং তার স্ত্রী আছিয়া। ভবনটি ভাড়া নিয়ে তারা ২০২২ সাল থেকে মাদরাসা পরিচালনা করে আসছিলেন। ভবনের চারটি কক্ষের মধ্যে দুটিতে মাদরাসা হিসেবে ব্যবহার করা হতো, একটিতে শেখ আল আমিন ও তার স্ত্রী আছিয়া বসবাস করতেন। আরেকটি কক্ষ ছিল বসার জন্য। ওই রুমেই বেশকিছু রাসায়নিক মজুত ছিল এবং শুক্রবার সকালের দিকে বিস্ফোরণের ফলে শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া ও তাদের তিন সন্তান আহত হন। সন্তানদের বয়স যথাক্রমে- ১০ বছর, ২ বছর ও ৬ মাস।
তিনি বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করে দেখতে পায় ভবনটিতে বেশকিছু রাসায়নিক দ্রব্য মজুত ছিল। এছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য, ককটেল সদৃশ্য বস্তুও পাওয়া যায়। বিস্ফোরক দ্রব্য দেখামাত্র পুলিশের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান আরও বলেন, বিস্ফোরণের পর মাদরাসার পরিচালক শেখ আল আমিন আহত স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রথমে স্থানীয় আদ-দ্বীন হাসপাতালে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পরে স্ত্রী-সন্তানদের ঢামেকে রেখে শেখ আল আমিন আত্মগোপনে চলে যান।
‘এরপর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়াকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। এছাড়া আছিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার, তাকেও হেফাজতে নেওয়া হয়। এই দুজনকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অন্যদিকে আহত সন্তানরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আছিয়া ও ইয়াসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের তথ্যমতে ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানি খাতুন নামে একজন নারীকে হেফাজতে নেওয়া হয়। এ নিয়ে মোট গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ালো তিনজনে। তারা হলেন- শেখ আল আমিনের স্ত্রী আছিয়া, আছিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার ও আসমানি খাতুন।
এর আগেও শেখ আল আমিন উগ্রবাদী সংগঠনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন, এমন কোনো সংশ্লিষ্টতা আপনারা এখনকার ঘটনায় পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, শেখ আল আমিনের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। এর আগে দুইবার তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। এরপর ২০২৩ সালে তিনি জামিন পান। জামিনের পর তিনি কিছুদিন অটোরিকশা চালান। এরপর থেকে তিনি রাইড শেয়ারিংয়ের কাজ করতেন। জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আল আমিন জড়িত ছিলেন কি না তদন্ত চলছে।
বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসায়নিকের ব্যাপক মজুত ছিল এবং ককটেল ছিল। এর কোনো একটা সিস্টেমের রিয়্যাকশনের কারণে হয়তো বিস্ফোরণ হয়েছে। প্রায় ৪০০ কেজির মতো ড্রামভর্তি রাসায়নিক লিকুইড উদ্ধার করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু মাথায় নিয়েই তদন্ত শুরু হয়েছে।
টিটি/ইএ/এমএস