আরেকটি স্বপ্নের মৃত্যু
সবজি আর ডিমের বিক্রেতা বাবার আশা লেখাপড়া শেষ করে অভাবী সংসারে আনবে স্বচ্ছলতা। কষ্টের সংসারে পরিশ্রমী বাবার মতো নিজেরও সংগ্রামী মনোবল ছিল সাজিদ হোসেন অভি’র। হতে চেয়েছিলেন উকিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। অভির সংগ্রামের অবসান ঘটলো অবরোধের নাশকতায়।
কবি নজরুল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র সানজিদ ইসলাম অভি বুধবার গভীর রাতে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
এর আগে ১৪ জানুয়ারি আনন্দবাজারে কোচিং শেষ করে বঙ্গবাজারের এনেস্কো টাওয়ারের সামনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া হাতবোমায় গুরুতর আহত হন সাজিদ হোসেন অভি।
এরপর সাত দিন হাসপাতালের বিছানায় জীবনযুদ্ধে লড়াই করে হার মানলেন অবশেষে। শুধু জীবন যুদ্ধে নয় সংগ্রামী বাবার স্বপ্ন পূরণের পথেও ছেদ পড়লো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বুধবার মধ্যরাতে যখন ছেলের মৃত্যুর খবর শোনানো হয়, তখন থেকেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা নূরজাহান। থামানো যাচ্ছে না কান্না।
মা নূরজাহান বিলাপ করে বলছিলেন, `অভি কইছিল ‘মা একটু কষ্ট কর, আমি উকিল হবো। আশায় বুক বাইন্ধা ধার দেনা করছি। পোলাডারে পড়ালেখা করাইছি। কিন্তু আল্লায় এমন কইরা শাস্তি দিবো ভাবি নাই`।
নূরজাহান আরও বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা কতো আসে হাসপাতালে, কই কেউ তো আমার পোলার খবর লইলো না। আমার ছেলের অপরাধ কী? অভি রাজনীতি করতো না। রাজনীতির কারণে আমার ছেলে মরলো কেন?
বোমায় মাথায় আঘাতের পাশাপাশি অভির বাম মুখমণ্ডল ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল। নষ্ট হয়ে যায় বাম চোখ। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল আনা হলেও চিকিৎসকদের পরামর্শে আগারগাঁওয়ের চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
পরে আবার সেখান থেকে ফিরে ঢাকা মেডিকেলের নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছিল অভিকে। অধ্যাপক রাজিবুল হকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
অভির বাবা দেলোয়ার হোসেন পুরান ঢাকার কুঞ্জবাবু লেনে রাস্তার পাশে ডিম ও সবজি বিক্রি করেন। ছেলের মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, `ছেলেরে বড় করেছি কষ্টে। কিন্তু বাবা হয়ে ছেলের লাশ দেখতে হবে ভাবি নাই। এ যে ভীষণ কষ্টের। এ কষ্ট কেমনে বুকে চেপে রাখি। আমার যে আর কিছুই রইলো না। যে স্বপ্ন নিয়া ছেলেডারে বড় করছি তা সব শেষ হয়ে গেলো।`অভির গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে পুরান ঢাকার কলতাবাজারের রোকনপুরে থাকতেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানান, অভির লাশের ময়নাতদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, বিএনপির অবরোধের মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার বঙ্গবাজার এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় হাতবোমার বিস্ফোরণে চোখ ও মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন অভি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেওয়ার পর প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজি, গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।
আহত হচ্ছে স্কুলছাত্র, সরকারি কর্মকর্তা ও রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক মানুষ। বোমা ও আগুনে পুড়ে এরইমধ্যে ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
জেইউ/বিএ