আরিফ শাহরিয়ারদের স্বপ্ন ভাঙার গল্প
আরিফ শাহরিয়ার। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। বহু দিনের স্বপ্ন, বিদেশে পড়াশোনা বা চাকুরি করতে যাবার। আর স্বপ্ন পূরণে কতনা চেষ্টা। আর চেষ্টায় পাশে পেয়েছেন পরিবারকেও। ব্যবসায়ি বাবাও চেয়েছেন, ছেলের স্বপ্ন পূরণ হোক।
কিন্তু কখনো ভাবেননি, স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় হবেন প্রতারিত। মৃত্যু ঘটবে নিজের-পরিবারের স্বপ্ন। সেই বাস্তবতার মুখে আজ বিপন্ন আরিফের জীবন। বিপন্ন তার পরিবার।
হ্যাঁ, আরিফ শাহরিয়ার কানাডা গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। পড়েছেন এক আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের খপ্পরে। খোয়া গেছে ২০ লাখ টাকা। এক মাসের বেশি সময় নেপালে সহ্য করতে হয়েছে অমানবিক ও পাশবিক নির্যাতন।
শুধু আরিফ শাহরিয়ান নয়। আরিফের মতো, আমনুন্লাহ, বাপ্পী, শরিফুল, এজাজুলের গল্প এক। এমন ২৪ তরুণের স্বপ্ন ভেঙেছে। প্রতারিত হয়েছেন। নির্যাতন সহ্য করে কোন রকমে জীবন নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন।
বুধবার এলিট ফোর্স র্যাব-২ এর কার্যালয়ে কথা হয় প্রতারিত এসব তরুণের সঙ্গে। আরিফ জানান, স্বপ্ন দেখেছিলাম কানাডাতে যাব। পরিবারকে রাজি করাই। ২০ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। কিন্তু প্লানেট ওভারসিস লিমিটেড আমার সব ধ্বংস করে দিয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমাকে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ফোন করে বলে, ২১ ফেব্রুয়ারি বেনাপোল সীমান্তে যেতে হবে। রাজি হয়ে যাই। সেখান থেকে অবৈধ ভাবে ভিসা ছাড়াই আমাদের ভারতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কলকাতা হয়ে শিলিঘুড়ি দিয়ে নেপালে। নেপালে নিয়ে এক রুমে আটকে কি অমানবিক নির্যাতন। বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে ওঠে এই তরুণের। সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা বাবাও চোখ মুছে নিলেন।
নির্যাতন করে পরিবারকে একটি কানাডিয়ান রোমিও নম্বর দিয়ে ফোন করতে বলা হয়। ফোনে আরিফ জানান, সে কানাডায় পৌঁছেছে। তাই চুক্তির বাকি ৫ লাখ টাকা দিয়ে দিতে বলেন। এভাবেই প্রতারিত তরুণদের সবাইকে দিয়ে পরিবারের ফোন করে প্রতারক চক্র কোটি কোটি টাকা আদায় করে।
শেষ পর্যন্ত ২৪ জন যুবককে ২ হাজার রুপি করে দিয়ে নেপাল সীমান্তে রেখে চলে যায়।
আরিফ আরো জানান, জানি না চক্র কাউকে মেরে ফেলেছে কিনা। তবে হুমকি দিতো সবাইকে, টাকা ঠিক মতো পরিশোধ না করতে মেরে ফেলা হবে।
তবে আমরা জীবন নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পেরেছি, বলছিলেন আরিফ শাহরিয়ার।
এদিকে, র্যাব এই ঘটনায় ২ হোতাকে আটক করেছে। তবে মূল চক্র এখননো ধরা ছোয়ার বাইরে।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল এসএম মাসুদ জানালেন, আমরা মূল চক্রকে আটকের চেষ্টা করছি।
এসএ/আরএস/আরআইপি