আড়াই হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে বিটিআরসির কর্মকর্তারা
ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দে অনিয়ম, তরঙ্গ ও বেতার যন্ত্রের লেভি চার্জ আদায় করে পকেটস্থ করা, মোবাইল অপারেটরদের লাইসেন্স প্রদানে অনিয়মসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ২ হাজার ৫৪৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩৩ টাকা লোপাট করেছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। ২০০১-০২ অর্থ বছর থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে বিশাল অঙ্কের এ অর্থ লোপাট করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহা-হিসাব নীরিক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, আ ফ ম রুহুল হক, মঈন উদ্দীন খান বাদল এবং রুস্তম আলী ফরাজী অংশ নেন।
সি অ্যান্ড এজি মাসুদ আহমেদ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী ও অডিট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একুশে টেলিভিশনের নিকট হতে তরঙ্গ ও বেতার যন্ত্রের লেভি চার্জ বাবদ ১৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ২০০ টাকা আদায় হয়নি বলে দেখিয়েছেন বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির ধার্যকৃত জরিমানার ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৩২ হাজার ২৩২ টাকাও আদায় করেননি তারা। সবমিলিয়ে একুশে টেলিভিশন বাবদ ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ২ হাজার ৪৩২ টাকা হারিয়েছে সরকার। এছাড়া স্পেকট্রাম চার্জ প্রাইজিং ফর্মুলা অনুযায়ী এরিয়া ফ্যাক্টর (এএফ) সঠিকভাবে হিসাব না করা হয়নি। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৪ কোটি ৭৪ লাখ ২৩ হাজার ৪০৪ টাকা। কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে পাওনা টাকা আদায় করে অগ্রগতি অডিট অফিসের মাধ্যমে কমিটিকে অবহিত করার সুপারিশ করে।
প্রতিবেদনে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়টিও ওঠে এসেছে। এ কারণে একুইজিশন ফি বাবদ সরকারের ৮৪০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হলেও তা আদায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়া ওয়ারিদ টেলিকম ইন্টারন্যাশনাল এলএলসিকে লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম এবং পরবর্তিতে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা সত্ত্বেও পারফরমেন্স ব্যাংক গ্যারান্টি (পিজিবি) বাজেয়াপ্ত না করায় আর্থিক ক্ষতি ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ওয়ারিদ টেলিকম ইন্টারন্যাশনালের ৭০ শতাংশ শেয়ার এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের নিকট হস্তান্তরের সময় কম হস্তান্তর ফি গ্রহণ করায় ৭৬ কোটি ৯৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৭ টাকা, প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার হস্তান্তরের সময় স্ট্যাম্প মূল্য বাবদ নির্ধারিত হারে ফি আদায় না করায় ২০ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৯ টাকা, পলিসি লেভেলের দুর্বলতার কারণে বিভিন্ন টেলিফোন কোম্পানি থেকে স্পেকট্রাম চার্জ আদায় না করায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি, বিটিআরসির অনুমোদন ব্যতীত টিএম আইবি এর নাম পরিবর্তন করে AXIATA (Bangladesh) Ltd. করার প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক জরিমানা কম আরোপ করায় আর্থিক ক্ষতি ৪৯৯,৯৭,০০০ টাকা।
বিলম্বে মোবাইল সেটের রয়ালটি ও লাইসেন্স ফির অর্থ পরিশোধ করা সত্ত্বেও জরিমানা আদায় না করায় ৪ কোটি ৫ লাখ ২২ হাজার ৮৪৫ টাকা, এবং অবৈধ কল টার্মিনেশনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও ক্ষতির অর্থ আদায় না করায় ১৪ কোটি টাকা সরকারি তহবিলে জমা হয়নি। সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির কারণে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ হারিয়েছে সরকার।
এদিকে পিএসটিএন অপারেটর ওয়ার্ল্ডটেল বাংলাদেশ লিমিটেড অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সরকারের ৪৯৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ক্ষতি হলেও সংশ্লিষ্টরা তা আদায়ের উদ্যোগ নেয়নি। কমিটি টাকা অনাদায়ের সঙ্গে যারা জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অডিট অফিসের মাধ্যমে কমিটিকে অবহিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
পাশাপাশি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করা সত্ত্বেও জরিমানা আদায় না করায় সরকারের ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির প্রেক্ষিতে কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে ভিওআইপি ব্যবসা করার কারণে সরকারের কত টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করে কমিটিকে অবহিত করার সুপারিশ করা হয়।
এইচএস/এসএইচএস/আরআই