নতুন ফাল্গুনের খবর জানে না অনেকেই

আবু আজাদ
আবু আজাদ আবু আজাদ , নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। এতদিন এটাই জেনে এসেছে সবাই। কিন্তু বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় এখনও মাঘ। সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে পহেলা ফাল্গুন ১৩ নয়, ১৪ ফেব্রুয়ারিতে।

নতুন ফাল্গুনের এই খবর জানেন না অনেকেই। অনেকে আবার মানতেও রাজি নন। তাই বসন্ত বরণে ভিড় লেগেছে বন্দরনগরীর চেড়াগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানগুলোতে। কলেজ ক্যাম্পাস আর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে হলুদ সাজে ঘুরতে দেখা গেছে তরুণ-তরুণীদের অনেককেই।

নগরের ডিসি হিল, চেড়াগী পাহাড়, জামালখান, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ-তরুণী ও মাঝ বয়সীরা হলুদ শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে বাইরে বের হয়েছেন বসন্ত উৎসব উদযাপনের জন্য। তরুণীদের খোঁপায় শোভা পাচ্ছে হলুদ ফুল।

Falgun-1

চট্টগ্রামে বসন্তের প্রধান উৎসব হয় ডিসি হিল আর শিরিষ তলায়। সে অনুযায়ী দুটি এলাকায়ই সকাল থেকে বাসন্তী সাজে ভিড় জমে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুদের। কিন্তু বসন্ত বরণে কোনো আয়োজন না দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। সংশোধিত বর্ষপঞ্জির বিষয়টি তাদের নজরে আনা হলে অনেকেই লজ্জা পাচ্ছেন, স্বীকার করছেন বিষয়টি তাদের জানেন না। আবার অনেকে বলছেন, তারিখ বদলে দিলেই বসন্ত একদিন পরে আসবে না। আগামীকাল ভালোবাসা দিবস, ওই দিনের আবেদন ভিন্ন। এছাড়া ওই সংস্কৃতি অন্যদের থেকে ধার করা। বসন্ত বরণ বাঙালির আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। দুটি দিবসকে এক সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কাজির দেউরি থেকে টেম্পোতে উঠেন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী নাবিলা। একটু পরই সেখানে বাসন্তী সাজে হাজির তার বান্ধবী মৌ। মৌকে বাসন্তী সাজে দেখেই নাবিলা জানতে চান, ‘কীরে কোথায় যাচ্ছিস? উত্তরে মৌ বলেন, ‘আজ পহেলা ফাল্গুন না, তাই বসন্ত বরণে কলেজে যাচ্ছি।’ এ সময় নাবিলা বলেন, ‘ও হ্যাঁ, আমি একবারে ভুলেই গিয়েছিলাম।’

Falgun-2

দূরে দাঁড়িয়ে দুই বান্ধবীর কথোপকথন শুনছিলেন এই প্রতিবেদক। সংশোধিত বর্ষপঞ্জির বিষয়টি তাদের নজরে আনা হলে দুজনই লজ্জায় মুখ লুকান।

দুপুর ১২টার দিকে চেড়াগী পাহাড়ের ফুলের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ফাগুনের সাজে ফুল কিনতে এসেছেন সেখানে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নিজ সন্তানদেরও। সেখানে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা রাজিয়ার সঙ্গে। যিনি তার কন্যাকে তিথিকে নিয়ে ফুল কিনতে এসেছিলেন। আজ পহেলা ফাল্গুন নয় বিষয়টি জেনে তিনি অবাক হন। পরে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্যালেন্ডার বদলে দিলেই প্রকৃতির আবেদন ফুরিয়ে যায় না।’

Falgun-3

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকালে আমরা দুই বান্ধবী বসন্ত উৎসবে যোগ দিতেই বের হয়েছিলাম। ডিসি হিলে এসে প্রথম জানতে পারি এই পরিবর্তন সম্পর্কে। তবে বাসায় ফিরে যাইনি, এখানে লজ্জার কিছু নেই। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের আবেদন এক নয়। আমরা চাইলেই আমাদের জীব থেকে পহেলা ফল্গুনের আবেদন মুছে ফেলতে পারি না।’

শুধু তরুণ-তরুণীরা নয়, বদলে যাওয়া দিবস সম্পর্কে জানে না ফুল ব্যবসায়ীরাও। বিষয়টি না জেনেই ব্যবসায়ীদের অনেকেই পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে ফুলের মজুত করেছিলেন।

সুরভী ফুল বিতানের বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে আজ মাথায় পরা ফুলের তোড়া, লিলি, থাই গোলাপ, কিসিমসিমা মিম, কানডিশন, অর্কিড, লিমু, গেলোডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা, ক্যালনডোলা, গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, চেরিগেণ্ডা, গাঁদা, ওয়েসস্টার, মামফুলসহ দেশি-বিদেশি নানান ফুলে আমরা দোকান সাজিয়েছি। কিন্তু আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম আজ পহেলা ফাল্গুন নয়। আগামীকাল ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি হবে, তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।’

Falgun-4

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক ব্যবহারকারীকে পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে। অনেকেই ফাল্গুনী সাজে সেজে ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের সভায় ২০২০ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছুটির তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে। এ কারণে গত বছরের ১৭ অক্টোবর একদিন পিছিয়ে হেমন্তের শুরু হয়। আর এতেই বদলে গেছে দীর্ঘদিনের চেনা ১৩ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত পহেলা ফাল্গুন।

আবু আজাদ/এমএসএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।