গরিবের ভরসা লালনা, পুলিশের বিরুদ্ধে পিটানোর অভিযোগ
সংসার চালাতে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় খোলা আকাশের নিচে খাবার বিক্রির দোকান দিয়ে বসেছেন লালনা। স্বল্প আয়ের দিনমজুর, রিকশা চালকরা তার কাছে কম দামে খাবার কিনে ক্ষুধা নিবারণ করেন।
শুধু লালনা নয়, তার মতো অনেক নারীই সংসারের ঘানি টানতে করোনাভাইরাসের ভয়কে দূরে ঠেলে খাবার বিক্রি করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে একদিকে দিনমজুর, রিকশা চালকরা যেমন কম টাকায় পেট ভরে খেতে পারেন, অন্যদিকে সংসার চালানোর খরচ যোগাড় হয় লালনাদের।
এসব খাবার বিক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার খাবার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা না দিলেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। এমনকি মাঝে মধ্যে লাঠি হাতে দাবড় দিয়ে উঠিয়ে দিচ্ছে। কখনো কখনো পিটুনিও দিচ্ছে।
ফকিরাপুলের বাসায় খাবার রান্না করে রাস্তায় বসে বিক্রি করা লালনা বলেন, এখানে রিকশা চালকদের মতো গরিব মানুষরা খেতে আসে। ডিম দিয়ে আমরা ভাত বিক্রি করি ৪০ টাকা। মাছ অথবা মাংস দিয়ে রান্না ভাত বিক্রি করি ৫০ টাকায়।
তিনি বলেন, পেটের দায়ে আমরা এখানে খাবার বিক্রি করতে আসি। গরিব মানুষরা এখান থেকে ভাত খেয়ে ক্ষুধা মেটায়। কিন্তু পুলিশ দাবড় দিয়ে আমাদের উঠিয়ে দেয়। এমনকি মাঝে মধ্যে লাঠি দিয়েও পেটায়। তারপরও এখানে খাবার বিক্রি করতে আসি। এ খাবার বিক্রি করেই আমরা সংসার চালাই।
তিনি বলেন, পুলিশ গাড়ি নিয়ে এসে দাবড় দিলেও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কিছু বলে না। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে বলে আপনারা খাবার বিক্রি করেন। কোনো সমস্যা নেই। পলিথিনে ভাত বিক্রি করবেন।
মতিঝিলে খোলা আকাশের নিচে খাবার বিক্রি করা অপর একজন বলেন, আমাদের কাছে খেতে আসাদের বেশিরভাগ রিকশা চালক। পুলিশ আমাদের খুব সমস্যা করে। অনেক সময় পাশাপাশি যারা খাবার খেতে আসে তাদেরও দাবড় দেয় পুলিশ। তখন যে যেমনে পারে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমার এক ছেলে প্রাইভেটকার চালায়। মাসে ১৫ হাজার টাকা পায়। কিন্তু এখন তার প্রাইভেটকার চালানো বন্ধ। মাসে ঘর ভাড়া দেয়া লাগে ৯ হাজার টাকা। আর এক ছেলে স্কুলে পড়ে। তার কোচিংয়ে মাসে দেয়া লাগে এক হাজার টাকা। গ্রামে বাড়ি ঘর নেই, তাই ঢাকা শহরে রয়েছি। গ্রামে বাড়ি ঘর থাকলে শহরে থাকতাম না।
তিনি বলেন, আমার স্বামী নেই। ছেলে যে টাকা পায় তা থেকে ঘর ভাড়া দেয়ার পর পাঁচ হাজার টাকা থাকে। এ টাকা দিয়ে তো সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে খাবার বিক্রি করি।
মতিঝিলের খোলা আকারের নিচে রাস্তার দোকান থেকে খাবার কিনে খাওয়া এক রিকশা চালক বলেন, ঢাকায় আসার পর সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাড়ি ফিরতে না পেরে ঢাকায় থেকে গেছি। বেকায়দায় পড়ে গেছি। গাড়ি চলাচল শুরু হলে গ্রামে ফিরে যাবো। এই খালারা আছে বলে আমরা এখন দু’মুঠো খেতে পারছি।
মধ্য বয়সী আর একজন বলেন, স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেটের কাছে রাতে ঘুমাই। ঘুমানো অবস্থায় পুলিশ এসে পিটানো শুরু করে। কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় না। পুলিশ পিটানোর চোটে কুত্তার মতো দৌড়াতে থাকি। এখানে খাবার খেতে আসলেও মারে, খাবার ফেলে দেয়।
এমএএস/এএইচ/এমকেএইচ