নমুনা জটের দোহাই, করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না উপসর্গ নিয়ে মৃতদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ০১ জুন ২০২০

১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে রোববার (৩১ মে) চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ দেশের শীর্ষ এক ব্যবসায়ীর। কিন্তু করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তাদের কারোরই নমুনা সংগ্রহ করেনি হাসপাতালটি।

তাদের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক সাবরিনা ইসলাম সুইটির মরদেহ ইতোমধ্যেই দাফন করেছে তার পরিবার।

এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এছাক ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুসেরও করোনা পরীক্ষার নমুনা নেয়া ছাড়াই তাকে দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এ অবস্থায় এই দুই পরিবারের বাকি সদস্যরাও করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন। জানা যাবে না উপসর্গ নিয়ে তাদের মৃত্যুর কারণও।

মেট্রোপলিটন হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক মো. সেলিম উদ্দিন জানান, করোনার নমুনা পরীক্ষায় বিশাল জট থাকায় করোনা লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীদের নমুনা নেয়া হয়নি। এর আগে ২৪ মে ৫ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে বিআইটিআইডিতে পাঠানো হলেও সে রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্দেশনা হলো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা।

তবে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘নমুনা জট আছে, তাই বলে উপসর্গ নিয়ে মৃতদের নমুনা না নেয়ার কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। বেসরকারি হাসপাতালগুলো নিজেদের ব্যবস্থায় মৃতের নমুনা সংগ্রহ করবে।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমদ বলেন, ‘এক সময় আমরা সারা শহর থেকে নিজেরাই নমুনা সংগ্রহ করেছি। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এতই জটিল আমাদের পক্ষে সবখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই নগরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের টেকনোলজিস্টদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। অথচ আজ সকালেও মেট্রোপলিটন হাসপাতাল থেকে এক মুমূর্ষু রোগীকে বিআইটিআইডিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শহরের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’

রোববার (৩১ মে) রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কন্টেইনার ডিপো এছাক ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী মোহাম্মদ ইউনুছ।

এর আগে ভোর রাত ৩টার দিকে একই হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা ইসলাম সুইটি মারা যান। পরে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় দাফন করা হয় তাকে।

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মানুষ মরছেন। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে ৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, করোনা শনাক্তের আগেই অধিকাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর পর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এ ছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২০ জনের বেশি নারী-পুরুষ। এ অবস্থায় উপসর্গ নিয়ে মৃতদের করোনা পরীক্ষা না হলে তাদের মৃত্যুর কারণ কখনোই জানা যাবে না।

জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।