কারওয়ান বাজারে নেই করোনা-ভীতি
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এছাড়া সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তারপরও রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই। কোনো ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই কেনাবেচা চলছে সেখানে।
ভোর থেকে এ বাজারে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ শাকসবজি, ফলমূলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী কিনতে ছুটে আসেন। পণ্যসামগ্রী কেনাবেচার সময় ক্রেতা-বিক্রেতা খুব কাছাকাছি (ক্লোজ কন্টাক্ট) থাকায় এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার না করার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার চরম ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বলতে গেলে করোনা স্বাস্থ্যবিধির বারোটা বাজছে কারওয়ান বাজারে!
বুধবার (১০ জুন) সকালে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজারে স্বাভাবিক সময়ের মতোই পরিবেশ বিরাজ করছে। অসংখ্য মানুষের সমাগমে কোনো ধরনের করোনা-ভীতি ছাড়াই বেচাকেনা চলছে। পাইকাররা উচ্চস্বরে বিভিন্ন শাকসবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্যের ডাক তুলছেন। দাম ঠিক হতেই মেশিনে মেপে বস্তা ভর্তি করে মাল পাশে রেখে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে। দিনমজুররা মাথায় পণ্যের বোঝা নিয়ে দ্রুতবেগে রিকশা, ভ্যান কিংবা মিনি ট্রাকে তুলে দেয়ার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
দেখা গেল, বাজারে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও তা থুতনির নিচে নামানো। অবস্থা দেখা কিছুতেই বোঝার উপায় নেই যে, করোনাভাইরাসের বিন্দুমাত্র ভয় তাদের মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে তাদের অধিকাংশের আগ্রহ নেই। বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সংক্রান্ত কোনো ধরনের ব্যানার, পোস্টার কিংবা অন্য কোনো প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ল না। শরীরের জ্বর মাপার কোনো যন্ত্রের ব্যবহার এখানে নেই।
কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বললেন, পাইকারি বাজারের ব্যবসা হিসেবে তাদেরকে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রথম দফায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ট্রাক থেকে মালামাল বুঝে নেয়া, সেগুলো আড়তে নামিয়ে স্তূপ করে রাখা এবং দ্বিতীয় ধাপে সকাল থেকে বিক্রি করার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সবসময় মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা আরও জানালেন, তারপরও আল্লাহর রহমতে মুখে মাস্ক না পরলেও তাদের মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন না।
রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মাছের বাজার করতে আজ পাইকারি বাজারে এসেছিলেন। নিজে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) পরে এলেও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক না দেখে হতাশার সুরে বলেন, কারওয়ান বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত। নতুবা এ বাজার থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারা শহরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সবচাইতে ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ১৭১ জন আক্রান্ত এবং ৪৫ জনের মৃত্যু হযয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চার লাখ ২৫ হাজার ৫৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় ৭১ হাজার ৬৭৫ জনের করোনা ধরা পড়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ হাজার ৩৩৬ জন। আর মারা গেছেন ৯৭৫ জন।
এমইউ/এসআর/জেআইএম