ব্যবসায় ধস, টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ
ঢাকা শহর মানে ব্যস্ত জীবন। প্রচণ্ড যানজট, কোলাহল আর হর্নের বিকট শব্দ। যান্ত্রিক এই শহরে ছুটে চলা মানুষগুলো একটু প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে রাজধানীর অদূরে সাভার-গাজীপুর- মানিকগঞ্জের রিসোর্টগুলোতে ভিড় করতেন। দুদণ্ড শান্তি খোঁজার এমন চেষ্টা চলে আসছিল বেশকয়েক বছর ধরে। মন ভালো করতে ইচ্ছা হলেই এসব রিসোর্টে গিয়ে রাত কাটাতেন নগরবাসী।
তবে মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি যেন সবকিছু থমকে দিয়েছে। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার আশপাশের জেলার রিসোর্টগুলো। প্রায় চার মাস পর করোনার প্রকোপ একটু সহনীয় পর্যায়ে আসায় খুলতে শুরু করেছে সেগুলো। তবে একটু ভিন্নভাবে। রিসোর্টগুলোতে কঠোরভাবে মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।
রিসোর্টের মালিকরা বলছেন, ঢাকার আশপাশের অধিকাংশই ইকো-রিসোর্ট। অর্থাৎ এগুলোর সিংহভাগ এলাকা গাছগাছালিতে ভরা। শুধুমাত্র গাজীপুরেই শত শত একর জমি নিয়ে রিসোর্টগুলো গড়ে উঠেছে। এসব রিসোর্টের পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। রয়েছে স্টাফদের বেতন। সবমিলিয়ে মালিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। তাই টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে জুলাই থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রিসোর্টগুলো খুলে দিয়েছেন।
ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্রিয়াব) বলছে, দেশে প্রায় ২০০টির মতো ছোট-বড় রিসোর্ট রয়েছে। সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় ১৩০টির মতো রিসোর্ট অতিথিদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
জুলাইয়ের শুরুতে রিসোর্টগুলো খোলার পর কিছু অতিথি আসতেও শুরু করেছেন। ঈদের আগের এই সময়টাতে অতিথি কমই থাকে। বর্তমানে রিসোর্টগুলোর সক্ষমতার ১০ ভাগ অতিথি সেখানে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে ট্রিয়াব।
ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জে পদ্মা রিসোর্টের অবস্থান। সম্প্রতি তারা অতিথিদের জন্য রিসোর্টটি খুলে দিয়েছে। দেশে চলমান বন্যার কারণে তাদের রিসোর্টে পানি প্রবেশ করেছে। গেট থেকে হাঁটু পানি পাড়ি দিয়ে কটেজে যেতে হচ্ছে। এরপরও অতিথিরা সেখানে রাত্রিযাপনের জন্য যাচ্ছেন।
পদ্মা রিসোর্টের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে অনেকেই ফোনে বুকিং দিয়ে চলে আসছেন। বুকিংয়ের সময়ই আমরা জানিয়ে দিচ্ছি যে, রিসোর্টে পানি উঠেছে। তারপরও তারা স্বাচ্ছন্দ্যে এখানে এসে বর্ষা উপভোগ করছেন। ঈদের পরের তারিখগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রুম বুকিং হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্টের বিক্রয় প্রতিনিধি পিংকি জানান, রিসোর্টটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরোদমে চালু হয়েছে। রাত্রিযাপনের জন্য পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে নয় হাজার টাকার রুম রয়েছে তাদের। রাতের প্যাকেজের সঙ্গে সুইমিং পুলে গোসল, সকালের নাস্তা, দুপুরের ও রাতের খাবার বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। অনেকেই ফেসবুক পেজ থেকে তথ্য নিয়ে ফোন দিয়ে বুকিং করছেন।
রিসোর্ট মালিকরা বলছেন, তাদের ব্যবসার মৌসুম ঈদের পরের এক মাস। লকডাউনের পর ফেসবুকে রিসোর্ট খোলার সংবাদ শুনে ফোনে বুকিং দিয়ে অনেকে চলে আসছেন। এবারও ঈদের পর আগের বছরগুলোর মতো ব্যবসা জমে উঠবে বলে আশা তাদের।
ট্রিয়াব জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাবে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে রিসোর্টগুলো। রিসোর্টে প্রবেশের সময় ইনফ্রারেড ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে অতিথিদের তাপমাত্রা পরীক্ষা, প্রবেশপথে স্যানিটাইজার রাখা; এছাড়া বিভিন্ন প্রান্তে বেসিন স্থাপন করে সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ট্যুরিজম বোর্ড কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলে জানায় ট্রিয়াব।
ট্রিয়াবের সভাপতি খবির উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেক রিসোর্ট খুলেছে। তারা ভর্তুকি দিয়ে চালাচ্ছে। করোনার কারণে ক্ষতির মুখে পড়ায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা ব্যাংকলোন চেয়েছি। তবে ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করছে না। এভাবে ভর্তুকি দিয়ে চলতে থাকলে আমাদের জন্য রিসোর্ট পরিচালনা কষ্টকর হবে।
প্রতি বছর ঈদের পর কক্সবাজারেও ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলা ঘটে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্র সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ, হোটেল-মোটেলসহ পর্যটননির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঈদ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এবার ঈদের পর দেশের রিসোর্টগুলোতে সমাগম বেশি হবে বলে ধারণা করছেন মালিকরা।
বন্ধ গাজীপুরের অনেক রিসোর্ট
করোনার হটস্পট হওয়ায় গাজীপুর জেলা প্রশাসন চিঠি দিয়ে জেলার রিসোর্টগুলো বন্ধ করতে বলেছিল। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও অনেকে রিসোর্ট খুলতে সাহস দেখাচ্ছেন না।
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ইকো রিসোর্টের ম্যানেজার সাখাওয়াত জাগো নিউজকে বলেন, লকডাউনের পর রিসোর্ট আর চালু হয়নি। আমাদের এখানকার রিসোর্টগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন থেকে এখনও খোলার অনুমতি দেয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে আমরা রিসোর্ট খোলার প্রস্তুতি শুরু করব। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সুইমিং পুল, গাছগাছালি ছাটাসহ গোটা রিসোর্ট পরিষ্কার করে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী প্রস্তুত করতে কিছুটা সময় লাগবে।
গাজীপুরের সবুজ পাতা রিসোর্টের তত্ত্বাবধায়ক ইমরান হোসেন অনন্ত জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে প্রায় ৩০-৩৫ জন স্টাফ ছিল। লকডাউন শুরু হলে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখন আমরা মাত্র চারজন আছি। এই এলাকায় করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকায় রিসোর্ট খোলার অনুমতি দেয়া হয়নি। সবমিলিয়ে অনেক লোকসানে আছি।
এআর/এমএআর/জেআইএম