সরকারি করোনা হাসপাতালের ৯২ শতাংশ আইসিইউ বেড রোগীতে পূর্ণ
অডিও শুনুন
রাজধানীতে মুমূর্ষু করোনা রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) শয্যা দুর্লভ হয়ে উঠেছে। চলমান মহামারির এ সময়ে রাজধানীর সরকারি ১০টি হাসপাতালের মধ্যে ৮টিতে সর্বসাকুল্যে আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ১১৩টি। সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, এই ১১৩টি শয্যার মধ্যে ১০৪টি অর্থাৎ ৯২ শতাংশই এখন করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীতে পরিপূর্ণ। ফাঁকা আছে মাত্র ৯টি শয্যা। অপরদিকে, বেসরকারিভাবে ঘোষিত ৯টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ২৮৫টি। এগুলোর মধ্যে ২৩৫টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র ৫০টি শয্যা ফাঁকা আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আগের চেয়ে রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যার জন্য রোগীর স্বজনরা হন্যে হয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন। অধিকাংশ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যাই ফাঁকা নেই, যেখানে দু-একটি ফাঁকা রয়েছে সেগুলোতেও ভিআইপিসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল থেকেই রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ১০টি সরকারি করোনা হাসপাতালের ১১৩টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১৬টি (১৫টি রোগী ভর্তি), ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা হাসপাতালে ১০টি (১০টিতেই রোগী ভর্তি), মহাখালীর ২৫০ শয্যা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৬টি (১৫টি রোগী ভর্তি), ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৬টি (৬টিতেই রোগী ভর্তি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২ ও বার্ন ইউনিটে ২৪টি (২০টিতে রোগী ভর্তি), ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি (১০টিতেই রোগী ভর্তি), রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৫টি (১৩টিতে রোগী ভর্তি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬টি (১৬টিতেই রোগী ভর্তি) রয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সর্বমোট ১৭২টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১৩১টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালের মধ্যে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০টির ১০টিতে, আজগর আলী হাসপাতালে ৩১টির মধ্যে ২৪টিতে, স্কয়ার হাসপাতালে ২৫টির মধ্যে ১৫টিতে, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৬টির মধ্যে ৬টিতে, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২২টির মধ্যে ১৪টিতে, এভার কেয়ার হাসপাতালে ২০টির মধ্যে ২০টিতে, ইমপালস হাসপাতালে ২৫টির মধ্যে ১৪টিতে, এএমজেড হাসপাতালে ২১টির মধ্যে ১৬টিতে এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১২টির মধ্যে ১২টি শয্যাতেই রোগী ভর্তি রয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতালে ৪১টি শয্যা এখন পর্যন্ত খালি থাকলেও অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে নিরুপায় না হলে কেউ সেগুলোর দ্বারস্থ হতে চান না। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুমূর্ষু করোনা রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
শুধু আইসিইউ শয্যাই নয়, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সাধারণ শয্যাতেও রোগী ভর্তি ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। রাজধানীর ১৯টি সরকারি ও বেসরকারি ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৩ হাজার ২৬০টি। তার মধ্যে সরকারিতে ২ হাজার ৩৫৭টি ও বেসরকারিতে ৯০৩টি। সরকারি ২ হাজার ৩৫৭টি শয্যার মধ্যে ১ হাজার ৬৭০টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো ৯০৩টি শয্যার মধ্যে ৪১১টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে।
এমইউ/এসএস/এমএস