দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সবার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী
অডিও শুনুন
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আকার ধারণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের এখানে আবার দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। এই দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এক সপ্তাহ লকডাউনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষকে যাতে সুরক্ষা দিতে পারি সেই ব্যবস্থাপনার ফাইলে কিছুক্ষণ আগে সই করে এখানে এসেছি। এখন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। জানি সবার একটু কষ্ট হবে। মানুষের একটু সমস্যা হবে। তারপরও বলবো, জীবনটা বড়। জীবনটা আগে। জীবন বাঁচানোটাই সবার করণীয়।
রোববার (৪ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
করোনা সংক্রমণ প্রশ্নে তিনি বলেন, গত বছরের মার্চে করোনা শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আমরা এটিতে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হই। আজ আবার দেখা যাচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এই দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয় ঢেউ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এবারের ভাইরাসটা কতটুকু ক্ষতি করলো তা চট করে বোঝা যায় না। কিন্তু হঠাৎ করে খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। এজন্য সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানাচ্ছি। ২৯ মার্চ থেকে হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে গেল। এরপর থেকে বেড়েই চলছে। কখনো কখনো কমছে। সে কারণে আমরা এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কাজেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিয়েসাদিসহ এ ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। পর্যটন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে এলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। শপিংমলগুলো অনলাইনে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। তারা সেখানে ভিড় বাড়াতে পারবে না। মূলত শপিংমল বন্ধ থাকবে। পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা ও লোক মারফত পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা তারা করতে পারবে। ১১ এপ্রিল নির্বাচন ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে। সব বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এক সপ্তাহের জন্য সব কিছু লকডাউন ঘোষণা দিয়েছি। সেটা মানলে অন্তত কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি বলেন, আমরা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করার পর মানুষ যেন ডেসপারেট হয়ে গেছে। তারা মনে করছে, কিছুই হবে না। সবাই যেন অবাধে চলাফেরা করে দিয়েছে। এ অবাধে চলাফেরা বন্ধ করতে হবে। এর আগে দেখেছি, বয়স্করা সংক্রমিত হয়। কিন্তু এবার দেখছি, তরুণ এমনকি শিশুরাও সংক্রমিত হচ্ছে। তাদেরও সুরক্ষিত রাখতে হবে।
সবাইকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকে যেন একটু সুরক্ষিত থাকেন। চিকিৎসা, টিকা, ভ্যাকসিন সব ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক দফা টিকা আমরা দিয়েছি। দ্বিতীয় ডোজ আমরা শুরু করবো। সঙ্গে সঙ্গে আরও নতুনভাবে টিকা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো। প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখেতে হবে। কোথাও বের হলে ঘরে ফিরে গরম পানির ভাপ নিতে হবে। গার্গেল করবেন। এটা খুবই উপকার হয়। কারণ এই ভাইরাসটা নাকের ভেতরে সাইনাসের ওখানে বাসা বাঁধে। নাকে ভাপ নিলে এবং গার্গেল করলে পরে এটা দুর্বল হয়ে যায়। এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা সবাই মেনে চলবেন। সেটাই আমরা আশা করি। করোনা থেকে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকেন সেই কামনা করি।
বিএনপির পরামর্শে হেফাজতের তাণ্ডব
হেফাজতকে তাণ্ডব চালাতে বিএনপি পরামর্শ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘প্রথমেই আমরা দেখলাম, বিএনপি তাদের সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে সমর্থন দিচ্ছে সেটাই আমার প্রশ্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন সেখানে তাদের আপত্তি। বিএনপির কর্মকাণ্ডে অবাক লাগে। হেফাজতের সঙ্গে যত রকম মদদ দেয়া। এখানে জ্বালাও-পোড়াও যতকিছু করতে হবে সেটার পরামর্শ তারা দিয়েছে। পরে তাদের কর্মকাণ্ডে সমর্থনও দেয়।’
কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মে বদনাম হবে এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য ধরেন। সবাইকে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে। ধর্মের নাম নিয়ে অধর্মের কাজ জনগণ কখনো মেনে নেবে না। জনগণ কখনো সহ্য করবে না। পবিত্র ধর্মকে কেউ অসম্মান করবে সেটা আমরা চাই না। এ ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি অতিথি আসছেন। অনেকে বার্তা দিয়েছেন। বাংলাদেশ এত বড় সম্মান পাচ্ছে সেখানে কারা খুশি হতে পারলেন না। ২৬ মার্চ নরেন্দ্র মোদি আসবেন। তাকে আসতে দেয়া যাবে না। বাধা দেয়া- কেন? আমার এই প্রশ্ন।’
‘আজ হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়। তারা কী দেওবন্দে যায় না শিক্ষাগ্রহণ করতে? তারা এ সব ঘটনা যদি ঘটায় তাহলে উচ্চ শিক্ষায় দেওবন্দে যাবে কীভাবে? সেটা কী একবারও চিন্তা করেছে? আমরা তো কওমি মাদরাসার সনদ দিচ্ছি। তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। কারিকুলাম ঠিক করে দিচ্ছি। যাতে তারা দেশ-বিদেশে চাকরি পায় তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তারপরও তারা এই তাণ্ডবটা কেন ঘটাল?’
তিনি বলেন, ‘আজকে কী ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুরু করলো হেফাজতের তাণ্ডব। এই হেফাজত তো একা নয়। হেফাজতের সঙ্গে তো জামায়াত-বিএনপি জড়িত। তাদের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডে তো দেখা যায়। হেফাজতের সবাই যে এর মধ্যে জড়িত তাও কিন্তু নয়।’
রাজিব গান্ধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াও যান। সেখানে প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রপতি ইয়াসির আরাফাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখে হাত বাড়ালেন। খালেদা জিয়া হাত গুটিয়ে বসে থাকলেন। কিন্তু সেই খালেদা জিয়াকে দেখলাম মোদি সাহেবের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা ছবি। সেই হাত যেন আর ছাড়েন না। তার সঙ্গে টেলিফোনে- সেই খিল খিল করা হাসির আওয়াজ। সেটাও সবার কানে বাজে। আবার সুবর্ণজয়ন্তীতে যখন মোদি আসবেন সেখানে বাধা দেয়া হয়। হেফাজতের সঙ্গে হাত মেলানো কেন? এ প্রশ্নের জবাব কোত্থেকে পাবো জানি না। তবে এ প্রশ্ন রেখে গেলাম।’
এইচএস/এআরএ/জিকেএস