করোনা নেগেটিভ ২৬ শতাংশ মানুষের শরীরেও অ্যান্টিবডি : গবেষণা
অডিও শুনুন
গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক হাজার ৫৩০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণা করে চট্টগ্রামের একদল গবেষক। এদের মধ্যে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিয়েকশন (আরটিপিসিআর) ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রোগীদের প্রায় ৯০ শতাংশ ও নেগেটিভ আসা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া অ্যান্টিবডি ৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকার প্রমাণ পেয়েছে গবেষক দল।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আব্দুর রবের নেতৃত্বে গবেষণায় অংশ নেন ওই হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান, যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগি এম এ কবির চৌধুরী, সহকারী সার্জন অমি দেব ও চিকিৎসা কর্মকর্তা মোরতাহিনা রশিদ।
এস আলম গ্রুপ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের প্রধান লক্ষণগুলো ছিলো- জ্বর (৯২ শতাং), কাশি (৬৩ শতাংশ), ঘ্রাণশক্তি লোপ (৫২ শতাংশ)। এছাড়াও গলাব্যথা, মাথাব্যথা, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট উপসর্গ ছিল তাদের। আক্রান্তদের অনেকেই আগে থেকে ডায়াবেটিস (১৫ শতাংশ), উচ্চ রক্তচাপ (২৩ শতাংশ), শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা (৯ শতাংশ), হৃদরোগ ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরে তাদের প্রায় ৫৭ শতাংশের কোনো না কোনো উপসর্গ দীর্ঘদিন বিদ্যমান ছিল।
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ও গবেষক দলের সদস্য ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান জাগো নিউজকে বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা তথা অন্য যেকোনো বিষয়ে স্থানীয়ভাবে গবেষণা হলে সুফল পাওয়া যাবে। আমরা অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণা করেছি। এটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরে স্থানীয়ভাবে নিজস্ব উদ্যোগে দেশের প্রথম গবেষণা।
তিনি আরও বলেন, এই গবেষণার ফলে আমরা বেশ কিছু সুফল পাব। যেমন- এটির মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, করোনা পজিটিভ বেশিরভাগের শরীরে অ্যান্টিবডি ৭ মাসেরও অধিক সময় স্থায়ী হচ্ছে। যার কারণে আমরা হার্ড ইমিউনিটি নিয়েও চিন্তা করতে পারব। আবার করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও কিছু মানুষের শরীরে দীর্ঘদিন লক্ষণ থেকে যাচ্ছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
গবেষক দলের প্রধান ডা. মো. আব্দুর রব বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আমরা দীর্ঘদিন ধরে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। এদের চিকিৎসার জন্য আমাদের লক্ষণ, আক্রান্তের ধরন, মাত্রা ও সুস্থ হওয়ার পরের অবস্থা বিস্তারিত জানা দরকার। তাই আমরা এক হাজার ৫৩০ জনের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছি। গবেষণার ওপর একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। এটি আরও সমৃদ্ধ করে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হবে। আমার জানা মতে, এটি জেলা পর্যায়ের কোনো হাসপাতালের উদ্যোগে প্রথম গবেষণা। এই গবেষণা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত যেকোনো গবেষণা কর্মকে উৎসাহিত করবে।
মিজানুর রহমান/এএএইচ