কেউ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কেউ প্রভাব খাটিয়ে নিচ্ছেন টিকা
তুলনামূলকভাবে কম ভোগান্তিতেই করোনাভাইরাসের গণটিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারছেন সাধারণ মানুষ। তবে টিকা নিতে কেন্দ্রে আসা মানুষদের অধিকাংশই মানছেন না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। অনেকে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন না, আবার লাইনে দাঁড়িয়েও কেউই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। কেউ কেউ আবার মাস্ক না পরেই আসছেন টিকা নিতে। অনেকে মাস্ক পরলেও তা ঝুলিয়ে রাখছেন থুতনিতে। কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে লাইনে না দাঁড়িয়েই টিকা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, আছে এমন অভিযোগও।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করোনা টিকা কেন্দ্রে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
গণটিকাদানের এ কেন্দ্রটিতে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসা অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকটা ভোগান্তি ছাড়াই টিকা নেয়া যাচ্ছে। তবে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেকে ফজরের নাম পড়েই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। অথচ কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে লাইনে না দাঁড়িয়েই, আসছেন আর টিকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, টিকাকেন্দ্রটির বাহিরে-ভেতরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। টিকা নিতে আসা নারী-পুরুষেরা আলাদা আলাদা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের লাইনে ভিড় অনেক কম দেখা যায়।
পুরুষদের টিকা বুথের প্রবেশ গেটের পাশে দাঁড়িয়ে একজন একজন আনসার সদস্য মাইকে বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন, যারা ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর টিকা দিতে পারেননি, তারা টিকা কার্ডের একটি করে ফটোকপি নিয়ে আসবেন। আর ১০, ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর যাদের টিকা নেওয়ার তারিখ আছে, তাদের কোনো ফটোকপি লাগবে না।
ওই আনসার সদস্য মাইকে এ তথ্যগুলো জানানোর ফাঁকে তার পাশ দিয়ে দুজন টিকার বুথে ঢুকে পড়েন। এসময় ওই কর্মী বিরক্তির সুরে বলেন, মানুষের কোনো বিবেক নেই। এখানে (লাইনে দাঁড়ানোদের দিকে ইঙ্গিত করে) এ মানুষগুলো ফজরের নামাজ পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর ওনারা লাইনে না দাঁড়িয়ে জোর করে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছেন।
এসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনকে উচ্চস্বরে বলতে শোনা যায়- ভাই লাইন ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেবেন না। কেউ প্রভাব খাটালে তাকে ধরে বেঁধে রাখেন। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, আর ওনারা আরামে এসে টিকা নিয়ে যাচ্ছেন।
টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আজগর নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, আমি ফজরের নামাজ পড়ে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। এসেই দেখি, আরও অনেকে লাইনে দাঁড়ানো। এতোক্ষণ সবকিছু ঠিকই ছিল, লাইন ধরেই সবাই টিকা নিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ কয়েকজন লাইন ছাড়াই টিকা নিয়ে গেলেন। আর আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার অপেক্ষায় আছি।
টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়া বাবু নামের অপর একজন বলেন, আমি গার্মেন্টেসে কাজ করি। সকাল সকাল টিকা নেয়ার জন্য ফজরের আজানের পরই লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে লাইনে অনেকেই ছিলেন। তাই টিকা পেতে দেরি হয়ে গেছে। তবে টিকা পেতে বিশেষ কোনো ঝামেলা হয়নি। টিকা কার্ড দেখেই ওনারা টিকা দিয়ে দিয়েছেন।
টিকা নিতে আসা তাছলিমা বেগম নামের এক নারী বলেন, আমি সকাল ৮টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ঘণ্টা দেড়েক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকা নিতে পেরেছি। প্রথম ডোজের টিকা পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। আজ তেমন ভোগান্তি হয়নি। অনেকটা সহজে এবং দ্রুতই টিকা নিতে পেরেছি।
মাস্ক না পরেই টিকা নেওয়ার লাইনে দাঁড়ানো হাসান নামের একজন বলেন, বাসা থেকে মাস্ক নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আসার পথে কখন পড়ে গেছে, টের পাইনি। লাইন ছেড়ে গেলে অনেক পেছনে পড়ে যাবো, তাই বাসায় মাস্ক ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছি।
টিকাপ্রত্যাশীদের লাইনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে টিকা কেন্দ্রটিতে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, যারা টিকা নিতে আসছেন, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাইনে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না। সবাই গাদাগাদি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেউ যদি নিজের ভালো না বুঝে, তাহলে তাদের কী করে সচেতন করবেন, বলেন।
এমএএস/এমকেআর/এএসএম