জ্ঞানের আলো বিতরণ করছে ওরা দৃষ্টিশক্তিহীন চারবোন


প্রকাশিত: ০৮:১৬ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ওরা চার বোন। জন্ম থেকেই অন্ধ। দৃষ্টিশক্তিহীন এই চারবোন বেড়ে উঠেছেন এমন এক পরিবেশে যেখানে তাদের বাবা-মাকে অনবরত তিরষ্কারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রতিবেশিদের চোখে পরিবারের বোঝা হিসেবে দেখা হতো তাদেরকে।

কিন্তু আজ ওই চারবোনের অবস্থান যেখানে এসে পৌঁছেছে সেটাকে অভাবনীয় বলতে বাধ্য হচ্ছেন চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দারা। সিঙ্গাপুরের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এশিয়া ওয়ানে চট্টগ্রামের পটিয়ার এই চারবোনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে, ছোটবেলা থেকে মানুষের নানা ধরনের কটূক্তি শুনতে শুনতে বেড়ে ওঠা এই চারবোনের তিনজনের সরকারি চাকুরে হওয়ার কঠিন লড়াইয়ের বর্ণনা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশপাশের সবাই মনে করতো ওরা চারবোন মানুষের দয়া-দাক্ষিণ্যে বাঁচবে, সবশেষে পরিবারের বোঁঝা হয়ে দাড়াবে। কিন্তু পটিয়ার এই বোনেরা অবিচল দৃঢ়তার সঙ্গে শারীরিক অক্ষমতা উড়িয়ে দিয়ে তাদের লক্ষ্যকে জয় করেছেন। সবার জন্য তারা হয়েছেন প্রেরণার উৎস।

যেদেশে দৃষ্টিহীনদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল, সেখানে আইনে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন উম্মে হাবিবা চৌধুরী; রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন উম্মে তাসলিমা চৌধুরী এছাড়া অপর দুই বোন উম্মে তানজিলা চৌধুরী ও উম্মে সালিমা চৌধুরী সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন। পৃথিবীর আলো না দেখা এই চারবোনের উচ্চশিক্ষার বাতিঘর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্তমানে পটিয়ায় সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বেশ সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন তিন বোন। সমাজে এই চারসন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করতে বেশি অবদান রেখেছেন তাদের বাবা-মা। দক্ষিণ গোবিন্দরহিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা উম্মে তাসলিমা চৌধুরী বলেন, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়; এই প্রবাদটি সম্ভবত আমাদের চারবোনের ক্ষেত্রে বাস্তব রূপ লাভ করেছে। তিনি বলেন, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং উৎসাহ থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধীতাকে যে কেউ জয় করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।

পটিয়ার আজিমপুরে নাসিরউদ্দিন চৌধুরী ওশামিমা আক্তার চৌধুরীর পরিবার। এক ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে চৌধুরী পরিবার। এই পরিবারের প্রথম সন্তান হাবিবা দৃষ্টিশক্তিহীন অবস্থায় জন্ম নেয়, এই নিয়ে প্রতিবেশিরা বিভিন্ন ধরনের বিদ্রুপ করতে থাকে।

এরই মাঝে চৌধুরী পরিবারে আসে দ্বিতীয় সন্তান। তবে এই ছেলে সন্তান স্বাভাবিক অবস্থায় জন্ম নেয়। এরপর একে একে দৃষ্টিশক্তিহীন আরো তিন মেয়ে সন্তান আসে চৌধুরী পরিবারে। পাড়া-প্রতিবেশিদের তিরষ্কার সহ্য করতে না পেরে এক সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন নাসিরউদ্দিন চৌধুরী। সেখানেই শুরু হয় মেয়েদের শিক্ষিত করার কঠিন লড়াই।

তসলিমা বলেন, সুশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের বাবা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। ফলে আজ আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি। চট্টগ্রামের মুরাদপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ওরা চারবোন প্রাথমিক শিক্ষাের পাঠ শেষ করেন। তানজিলা চৌধুরী মহসিনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনিই একমাত্র রাহমানিয়া হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করলেও বাকি তিন বোন বাংলাদেশ ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক শেষ করেছেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তারা। কঠিন লড়াই করে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের এই দৃষ্টিশক্তিহীন চারবোন বর্তমানে জ্ঞানের আলো বিতরণ করছেন।

এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।