পাতকুয়ার পানি সেচে সবজি চাষে সাফল্য


প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নওগাঁর পত্নীতলায় পাতকুয়ার (সৌর প্যানেল সোলার পাম্প) মাধ্যমে পতিত জমিতে সবজি চাষ শুরু হয়েছে। পতিত জমিতে সবজির আবাদ হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সফলতা এসেছে। এতে অনেকের ভাগ্য খুলে গেছে পাশাপাশি এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।

জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে আমন ধান আবাদ করার পর খরা মৌসুমের ৭/৮ মাস পানির অভাবে জেলার পত্নীতলা, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা হাজার হাজার জমি পড়ে থাকে। এ অবস্থায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ জরিপ ও অনুসন্ধান পরিচালনা করে। পরিচালনা শেষে নলকূপের মাধ্যমে পানি তোলা সম্ভব না হওয়ায় বছর দুই এক আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাতকুয়া খননের প্রস্তাবনা পাঠান।

গত বছর অনুমোদন এলে জুন মাসে পত্নীতলায় ৪০টি পাতকুয়া খনন করা হয়। প্রাথমিকভাবে খনন করা এসব পাতকুয়া থেকে বালতি দিয়ে পানি তোলা হতো। সে পানি স্থানীয় বাসিন্দারা আসবাবপত্র ও বাড়ির অন্যান্য কাজে ব্যবহার করার পাশাপাশি পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করেন। সবজির আবাদ ভালো হওয়ায় পাতকুয়ার সুফল পেতে শুরু করেন এলাকাবাসী।

Naogaon-Solar-Deep

পানি বালতি দিয়ে তুলে সবজি চাষ কষ্টকর হওয়া বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সেচ প্রকল্পের অধীনে পাতকুয়ায় সোলার পাম্প বসিয়ে সেখান থেকে পানি উত্তোলন কার্যক্রম হাতে নেয়। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রায় ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলায় চকশহবত মৌজা এবং শিহারা গ্রামের পাতকুয়ায় সোলার পাম্প স্থাপন করা হয়। সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেখান থেকে অটোমেটিকভাবে পানি উঠানো হয়।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সেচের অভাবে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকে। এর মধ্যে পত্নীতলায় ৫ হাজার, পোরশায় ১০ হাজার, সাপাহারে ৫ হাজার হেক্টর জমি।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রিজিয়ন-২ জানায়, সোলার প্যানেল পাতকুয়ার উপর ফানেল আকৃতিতে স্থাপন করা হয়েছে। যেন বৃষ্টির পানি হারভেস্ট করা যায়। পাতকুয়ার গভীরতা ৬০ ফুট ও ব্যাস ৪৬ ইঞ্চি। স্থাপিত সোলার প্যানেলের ক্ষমতা ৯০০ ওয়াট এবং পাম্পের ক্ষমতা ৫০০ ওয়াট।

পাতকুয়ার আশপাশের পতিত জমিতে শাক-সবজি আবাদের জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এক ইঞ্চি ডায়া ইউপিভিসি পাইপের মাধ্যমে ১৮০০ ফুট ভূগর্ভস্থ পাইপ নালা নির্মাণ করেছে। সেচের জন্য ২১টি ট্যাপ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি পাতকুয়া খনন করতে গভীরতা অনুয়ায়ী দেড় থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুটি সোলার প্যাম্পের মাধ্যমে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য পাতকুয়ার মাধ্যমে আরও ৬০ থেকে ৭০ বিঘা সবজি চাষ করা হচ্ছে।

উপকারভোগী মায়া রানী, প্রভাষ চন্দ্র, সুবল চন্দ্র জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের পাতকুয়া আমাদের কাছে স্বপ্ন বলে মনে হয়। যেখানে পানি সংকটে বাড়ির কাজ কর্ম করা যাচ্ছিল না, ফসল হচ্ছিল না সেখানে বিনা পয়সায় পানি পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি আবাদ হয়েছে।

কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, এ পাতকুয়ার পানি ট্যাপের মাধ্যমে জমিতে আসায় এবার পনেরো কাঠা জমিতে ঢেড়স, পুঁইশাক, কলমিশাক, ডাঁটাশাক ও বেগুনের চাষ করেছি। এ পাতকুয়া ও সোলার পাম্প আমাদের মতো গরিব কৃষকের জন্য খুবই সুবিধাজনক।

কৃষক নিকুঞ্জ কুমার পাতকুয়ার পানি ব্যবহার করে ৩ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির নার্সারি গাছ লাগিয়েছেন।
 
পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মন্ডল জানান, খরা প্রবণ এ এলাকায় আরও ৫০/৬০টি পাতকুয়া খনন করে সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচের পানি সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। বিএমডিএর মাধ্যমে সম্পাদন করা সরকারের এ প্রকল্পটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং কৃষকের জন্য এটা খুবই লাভজনক। সেচ বঞ্চিত ও খরাপ্রবণ এসব এলাকায় সরকারিভাবে যেন আরো পাতকুয়া খনন করা হয় এ দাবি জানান।

Naogaon-Solar-Deep

পত্নীতলা দীবর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন জানান, পাতকুয়া থেকে পানি উঠিয়ে কৃষকরা যাতে স্বল্প সময়ে ফসল ও সবজির আবাদ করতে পারে এ জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পানি কম লাগে এমন শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা পাতকুয়ার পানি ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হচ্ছেন।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নওগাঁর পত্নীতলা রিজিয়নের সহকারী প্রকৌশলী আল-মামুনূর রশীদ জানান, আধুনিক কৌশলের বদলে পাতকুয়া স্থাপনের ফলে স্থানীয়রা উপকৃত হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আগামীতে পত্নীতলা, পোরশা ও সাপাহারে আরও পাতকুয়া খনন ও সোলার প্যাম্প স্থাপনের জন্যে ইত্যেমধ্যে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই পাতকুয়া খনন ও সোলার প্যাম্প স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ বঞ্চিত এ এলাকাকে শাক-সবজির ভান্ডার হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ জোন সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নামার ফলে শস্য উৎপাদনের জন্য আরও গভীর থেকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ভূগর্ভস্তরের পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্তরের পানি যাতে কম ব্যবহৃত হয় এজন্য বরেন্দ্র অঞ্চলগুলোতে পাতকুয়া খনন করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, পাতকুয়া থেকে পানি উঠানো হলে এর আশপাশ থেকে পানি এসে আবার জমা হয়। পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে কম সেচের ফসলের কাজে ব্যবহার করা হয়।
 
আব্বাস আলী/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।