চোখের সামনে যুবকের করুণ মৃত্যু : অসহায় বন্ধুরা


প্রকাশিত: ০৪:১৩ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

‘স্পটতো সামনেই। তোরা লঞ্চে যা। আমি সাঁতার কেটে আসছি। এই বলে দ্বিতীয় বারের মতো নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো তুহিন। লঞ্চের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খানিকটা সাঁতারও কাটল। হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম ও থমকে দাঁড়িয়েছে। নদীর তীরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সামান্য এগুতেই আবার থমকে দাঁড়ানোর চেষ্টায় হাত পা নাড়তে লাগলো। লঞ্চ ঘুরিয়ে নিয়ে তার দিকে বয়রা ছুঁড়ে মারা হলো। কিন্তু ধরতে পারলো না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পানিতে ডুবে গেল। ঘণ্টাখানেক পর ডুবুরি পানির তলদেশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করলো।’

দলবেঁধে পিকনিকে আনন্দ করতে গিয়ে শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে এভাবেই করুণ মৃত্যু হয় জিগাতলার ডেকোরেটর ও রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী তুহিন ওয়াজিউদ্দিনের। নিহতের বন্ধু সাগর এই প্রতিবেদককে মৃত্যুর মর্মস্পর্শী এ বর্ণনা দেন।

জানা গেছে, ১৫/এ জিগাতলা রোডের বাসিন্দা মো.আলাউদ্দিন ও সুফিয়া বেগমের পাঁচ ছেলে তিনি মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তুহিন। পরিবারের সবার ছোট হিসাবে সবার কাছে খুবই আদরের, হাসিখুশী, প্রানবন্ত ও আমুদে।
 
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে সম্প্রতি বন্ধুরা সকলে মিলে লঞ্চে পিকনিকে যাওয়ার প্রস্তাব করলে তুহিন নিজেই উদ্যোগ নিয়ে পিকনিকের সকল আয়োজন করেন। শনিবার সকালে লঞ্চে রওয়ানা হয়ে নারায়ণগঞ্জের শাহ সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কাছাকাছি পৌঁছে লঞ্চটি হঠাৎ চরে আটকে পড়লে তুহিনসহ বেশ কয়েকজন পানিতে গোসল করতে নামেন। গোসলের ফাঁকে তারা হেটে সামনে  গিয়ে স্পট দেখে আসেন।

Tuhin
বেশ কিছুক্ষণ গোসলের পর তুহিনসহ সকলে লঞ্চটিতে ধাক্কা মেরে পানিতে ভাসিয়ে লঞ্চে উঠে পড়েন। লঞ্চ চলতে শুরু করলে তুহিন আবার পানিতে লাফিয়ে পড়তে উদ্যত হন। এ সময় বন্ধুরা তাকে বাধা দিলে তিনি বলেন, স্পটতো সামনেই। সাতার কেটেই ওইটুকু জায়গা যেতে পারবো।

বন্ধুরা বার বার নিষেধ করলে তিনি তা না শুনে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ও এক পর্যায়ে বন্ধুদের চোখের সামনে পানিতে ডুবে তলিয়ে যান। এদিকে ভিন্ন সূত্র বলছে, লঞ্চটি যখন ঘুরছিল তখন ইঞ্চিনের প্রচণ্ড গতিতে পানিতে এক ধরনের স্রোতের সৃষ্টি হওয়ায় তুহিন পানিতে তলিয়ে যায়।

শনিবার রাতে জিগাতলার বাসায় লাশ আনা হলে পরিবার পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধব ছুটে আসেন। এময় তাদের কান্না ও আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দুই পুত্র সন্তানের জনক তুহিন দুর্ঘটনার ঘন্টাখানেক আগেও স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। স্ত্রী তাকে ফোন করলে তিনি বলেন, লঞ্চের শব্দে কথা বোঝা যাচ্ছে না, আমি স্পটে নেমে কল ব্যাক করছি।

তার বড় ভাই দেলোয়ার আহাজারি করে বলছিলেন, তার ছেলেটি অসুস্থ। পিকনিকের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলাম, তুই বাপ, অসুস্থ ছেলেটিকে ডাক্তারের কাছে কে নিয়ে যাবে। প্রতিউত্তরে তুহিন বলেছিল, আপনিও তো ওর বাবাই। আদরের ছোট ভাইয়ের এ কথাটি বলে তিনি বার বার বিলাপ করছিলেন। আজ বিকেলে তার আরেক বড় ভাই ইতালি প্রবাসী সারওয়ার দেশে ফিরলে লাশ দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

এমইউ/এসকেডি/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।