সাক্ষাৎকারে সিটিটিসি এডিসি

ইনবক্সের স্পর্শকাতর চ্যাট-ছবি-ভিডিও থার্ডপার্টির হাতে গেলেই বিপদ

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১৫ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

জীবনের সব ক্ষেত্রেই তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়ছে। এতে জীবন যেমন সহজতর হচ্ছে, বিপরীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। পর্নোগ্রাফি, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা উত্তোলন, নারীর সম্মানহানি, অনলাইনে জঙ্গি সংগঠনে ভেড়ানো, সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে হানাহানি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার প্রভৃতি সাইবার অপরাধ নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।

এসব বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম।

২০১৬ সাল থেকে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগে কাজ করা এই এডিসির বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌহিদুজ্জামান তন্ময়

আরও পড়ুন: ডেটিং অ্যাপে বন্ধুত্ব-প্রেম-ডেট, অতঃপর...

জাগো নিউজ: সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেকেই আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিচ্ছেন। সমাধান কী?

নাজমুল ইসলাম: প্রযুক্তিগতভাবে বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে। প্রাযুক্তিক উন্নয়ন, প্রযুক্তির ছোঁয়া সবার হাতে হাতে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ যেমন ভালো কাজ করছে, তেমন অপরাধীরা খারাপ কাজও করছে। বর্তমান সময়ে সাইবার বুলিং খুব বেশি হচ্ছে, এটি জঘন্যতম অপরাধ। সাইবার বুলিংয়ের শিকার এবং সাইবার বুলিং যারা করছে প্রায় সবাই টিনএজার। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার।

আমি সমাজবিজ্ঞানী নই, তবে অপরাধবিজ্ঞানী হিসেবে বলতে পারি অসচেতনতা, অজ্ঞতা ও ইন্টারনেট এথিকস না মানার কারণে সাইবার বুলিং হচ্ছে। সাইবার বুলিং হলে দ্রুত সাইবার পুলিশের সহায়তা নিন।

জাগো নিউজ: স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভয়ে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের শরণাপন্ন হতে চান না। এক্ষেত্রে করণীয় কী?

নাজমুল ইসলাম: সাইবার বুলিং নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। পুলিশের কাছে ভয়ের কিছু নেই। অভিযোগ না করলেই বরং ভয় এবং ভয় থেকে আরও ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে। সাইবার নিয়ে কাজ করে পুলিশের যে কোনো একটি ইউনিটে নিঃসংকোচে রিপোর্ট করতে হবে। যদি থানায় সরাসরি যেতে না চান তাহলে ফেসবুকে ঢুকে ‘সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ভিডিশন’ লিখে সার্চ দিলেই একটি পেজ পাবেন। পেজে ই-মেইল নম্বর, মোবাইল নম্বর ও গুগল ম্যাপসহ সব তথ্য দেওয়া আছে। সাইবার অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জাগো নিউজ: বেড়েছে নগদ টাকা থেকে ভার্চুয়াল লেনদেন। ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অনেকেই টাকা খোয়াচ্ছেন। সমাধান কী?

নাজমুল ইসলাম: একটা সময় আমরা মনে করেছিলাম দেশে হয়তো সাইবার হ্যারাজমেন্ট উতরিয়ে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম অনেক জনপ্রিয় হবে। বিগত কয়েক বছর ধরে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম শুরু হয়েছে। বিকাশ, নগদ, রকেট কিংবা ব্যাংকের ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড থেকে গ্রাহক টাকা খোয়াচ্ছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন। আপনার গোপন পিন নম্বর, মোবাইলে পাঠানো ওটিপি ও ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে সিভিপি কোথাও শেয়ার করবেন না। কেউ যদি এগুলো নিতে চায় তাকে দেবেন না। তাহলে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড সেভ।

জাগো নিউজ: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফেসবুকের মেসেঞ্জার, ইমো কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ চেক করে। কতটুকু সত্য?

নাজমুল ইসলাম: এটি একদমই মিথ্যা কথা। কারণ বাংলাদেশ সরকার গণতন্ত্রের চেতনায় বিশ্বাস করে। সাধারণ জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে এমন কোনো কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করে না। তবে এটা অমূলক নয়। পৃথিবীজুড়ে যারা অপরাধী তাদের চিহ্নিত করা, আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্ত করা অথবা তাদের খুঁজে বের করে আদালতে সোপর্দ করার জন্য যা যা করণীয় পুলিশ আইন মেনে তাই করে। অর্থাৎ ভুক্তভোগীকে সহায়তার জন্য আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে অথবা আইনের মধ্যে থেকেই করা হয়।

ইনবক্সের স্পর্শকাতর চ্যাট-ছবি-ভিডিও থার্ডপার্টির হাতে গেলেই বিপদ

জাগো নিউজ: পুলিশের সাইবার ইউনিট আলাদা করার প্রয়োজন কতটুকু?

নাজমুল ইসলাম: অপরাধ, প্রযুক্তিগত অপরাধ কিংবা হাইটেক অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষায়িত ইউনিটগুলোই এর সমাধান করতে পারবে। থানায় আরও কাজ থাকে, সে কারণে থানা পুলিশ দিয়ে সব কাজ করা সম্ভব নয়। পুলিশের কাছ থেকে একজন নাগরিকের যে সুবিধা পাওয়ার কথা তা পায় না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও চাচ্ছেন সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের বিশেষ ইউনিট ‘সাইবার পুলিশ ইউনিট’ গঠন করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: ক্রেডিট কার্ডের ওটিপি-সিভিডি কোড দিয়ে টাকা খোয়াচ্ছেন গ্রাহক

জাতীয় পর্যায়ে সাইবার ইউনিট, সাইবার তদন্ত ইউনিট বা সাইবার ক্রাইম ইউনিট খুবই প্রত্যাশিত। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট পুলিশ গড়ার জন্য সাইবার পুলিশ একটি অন্যতম অংশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তর এক্ষেত্রে একযোগে কাজ করবে বলে আশা করি। সাইবার অপরাধ দমন করে বাংলাদেশ আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

জাগো নিউজ: বিদেশে বসে অনেক প্রবাসী হ্যাকিং কিংবা সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের সক্ষমতা কতটুকু?

নাজমুল ইসলাম: এরই মধ্যে কাতার, দুবাই ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করছে- এমন অভিযোগের পর আমরা এ ধরনের বেশকিছু কাজে সফল হয়েছি। মামলার পর অনেক প্রবাসীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট চলে গেছে সেই দেশে। এছাড়া ফরমাল ও ইনফরমাল উপায়ে সেদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক সাইবার অপরাধ থামানো হয়েছে।

ইনবক্সের স্পর্শকাতর চ্যাট-ছবি-ভিডিও থার্ডপার্টির হাতে গেলেই বিপদ

জাগো নিউজ: ইন্টারনেটে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। এতে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সমাধান কী?

নাজমুল ইসলাম: মানুষ এখন তথ্যের মধ্যে বসবাস করছে। সেই তথ্য কতটা ঠিক না ভুল সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রভাব ব্যাপক। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, রাষ্ট্রকে টার্গেট করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। দেশের আইনে ভুয়া তথ্য ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য মামলা গ্রহণ ছাড়াও ভুয়া তথ্য ইন্টারনেট থেকে ছড়ানো বন্ধ করার বিষয়ে পুলিশ তৎপর। সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত হতে এবং ভুয়া সংবাদের ফাঁদ থেকে রক্ষায় মূল ধারার গণমাধ্যমের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

আরও পড়ুন: চুরি হওয়া মোবাইল যার কাছে পাওয়া যাবে তারও হতে পারে সাজা

জাগো নিউজ: ব্যক্তিগত চ্যাটবক্সে খোলামেলা ছবি-ভিডিও আদান-প্রদানে কতটা সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?

নাজমুল ইসলাম: চ্যাটবক্সে স্পর্শকাতর চ্যাট, ছবি, ভিডিও অথবা অন্যকিছু আদান-প্রদান করা যাবে না। এটি নৈতিকভাবেও খারাপ। অনেক সময় থার্ড পার্টি কিংবা হ্যাকার এসব স্পর্শকাতর কনটেন্ট চ্যাটবক্স থেকে নিতে পারে, তখন আপনি বিপদে পড়তে পারেন। বিশেষত ব্যাংকের তথ্য, ব্যাংকের পিন, গোপনীয় তথ্য কিংবা স্পর্শকাতর কনটেন্ট রাখলে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

ইনবক্সের স্পর্শকাতর চ্যাট-ছবি-ভিডিও থার্ডপার্টির হাতে গেলেই বিপদ

আমি আহ্বান জানাই, চ্যাটবক্সে কোনো স্পর্শকাতর কথাবার্তা, চ্যাট, ছবি, ভিডিও দেবেন না।

জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

নাজমুল ইসলাম: আপনাকে ও জাগো নিউজ পরিবারকে ধন্যবাদ।

টিটি/এএসএ/এমএস

আমি সমাজবিজ্ঞানী নই, তবে অপরাধবিজ্ঞানী হিসেবে বলতে পারি অসচেতনতা, অজ্ঞতা ও ইন্টারনেট এথিকস না মানার কারণে সাইবার বুলিং হচ্ছে। সাইবার বুলিং হলে দ্রুত সাইবার পুলিশের সহায়তা নিন।

আপনার গোপন পিন নম্বর, মোবাইলে পাঠানো ওটিপি ও ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে সিভিপি কোথাও শেয়ার করবেন না। কেউ যদি এগুলো নিতে চায় তাকে দেবেন না। তাহলে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড সেভ।

চ্যাটবক্সে স্পর্শকাতর চ্যাট, ছবি, ভিডিও অথবা অন্যকিছু আদান-প্রদান করা যাবে না। এটি নৈতিকভাবেও খারাপ। অনেক সময় থার্ড পার্টি কিংবা হ্যাকার এসব স্পর্শকাতর কনটেন্ট চ্যাটবক্স থেকে নিতে পারে, হ্যাকার নিতে পারে তখন আপনি বিপদে পড়তে পারেন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।