রাষ্ট্রপতির আত্মজীবনী জাতির অমূল্য সম্পদ: প্রধানমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৩ এএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনীকে জাতির জন্য একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (আবদুল হামিদ) রাষ্ট্রপতি হবেন না (ভবিষ্যতে), কারণ তিনি সংবিধান অনুযায়ী পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তিনি আমাদের একটি অমূল্য সম্পদ দিয়েছেন তার আত্মজীবনী ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’র মাধ্যমে। আমরা তার জীবনের সেই অংশ থেকে অনেক কিছু জানতে পারি, যা তিনি আত্মজীবনীতে তুলে ধরেছেন।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের লেখা দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

একটি বই বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ শিরোনামের আত্মজীবনী এবং আরেকটি বইয়ের দুটি অংশের সংকলন ‘স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা’ শিরোনামে রাষ্ট্রপতির ভাষণ।

এর আগে বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি ও তার সহধর্মিণী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আর রাষ্ট্রপতি থাকবেন না, কিন্তু তিনি অমূল্য সম্পদটা আমাদের দিয়ে গেলেন তার স্মৃতিকথার ভেতর দিয়ে, তার জীবনের যে অংশটা তিনি উল্লেখ করেছেন, এটা আমি মনে করি যে একজন রাজনীতিবিদের জীবন থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক কিছু আমরা জানতে পারবো। তাই আমার একটা অনুরোধ থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে, তার পরবর্তী জীবনটা নিয়েও যেন তিনি একটু লিখে যান। আর বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি হিসেব তার অভিজ্ঞতাটা। কারণ তার আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তার যে দেশপ্রেম এবং দায়িত্ববোধ সেটারই তিনি প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

আরও পড়ুন>>দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন রাষ্ট্রপতি: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত সার্থক তার জীবন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তিনি, তার রাজনৈতিক জীবনে এবং দেশের গণমানুষের কল্যাণে অনেক অবদান রেখে যাচ্ছেন। কাজেই তিনি একটা অমূল্য সম্পদ আমাদের দিয়ে যাচ্ছেন, তার এই লেখনির মধ্য থেকেই সেটা উঠে এসেছে এবং যখন অবসরে যাবেন তখন পরবর্তী অংশটাও লিখবেন, সেটাই সবার পক্ষ থেকে আমাদের দাবি থাকলো। তিনি রাষ্ট্রপতির পাশে থাকার জন্য এবং প্রেরণা দেওয়ার জন্য তার স্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা। আর রাষ্ট্রপতি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই তার ভূমিকা রয়েছে। সেই পাকিস্তান আমল থেকেই শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের স্মৃতি নিয়েই তিনি বইটি লিখেছেন। তার জীবনের অনেক কথাই বইটিতে আছে (আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি)।

সরকারপ্রধান বলেন, তার চমৎকার হাস্যরসে ভরা জীবনী গ্রন্থটি পড়লে অনেক মজার মজার তথ্য পাওয়া যাবে। তার স্কুলজীবনের স্মৃতি সেই হাওড় অঞ্চলে বসবাস। আসলে বাংলাদেশের কাদামাটি মেখেই তিনি বড় হয়েছেন। সেখানকার শ্যামল সুন্দর পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছেন। হাওড়ের কঠিন জীবনের সঙ্গে লড়াই করেই তিনি বড় হয়েছেন। তিনি একজন সার্থক পিতা, সার্থক স্বামী। তার ব্যক্তিগত জীবন যেমন সার্থকতায় ভরপুর তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসে অল্প বয়সে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৭০ সালে এবং এরপর থেকে সাত সাতবার তিনি সংসদ সদস্য। ওই হাওড় অঞ্চলে তাকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারেনি।

তিনি বলেন, দেশের নির্বাচনের অনেক চেহারা আমরা দেখেছি। ভোট ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি- অনেক কিছুই আমরা দেখেছি। কিন্তু এই জায়গাটা কেউ কোনোদিন কেড়ে নিতে পারেনি। কারণ তার সঙ্গে ছিল মাটি ও মানুষের যোগাযোগ। এই যে মানুষের আস্থা অর্জন করা, বিশ্বাস অর্জন করা, মানুষের কাছে যাওয়া এবং মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া, এটাই তার সব থেকে বড় গুণ। তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন কিন্তু একজন সাদাসিদে স্বচ্ছ বাঙালির মতই তিনি জীবন যাপন করেছেন।

jagonews24

‘একটা সাদাসিদে জীবন যাপনের মধ্যদিয়ে সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা, এটা তার ছিল। যেটাকে একটি বড় গুণ বলেই আমি মনে করি।’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তিনি নিজের স্মৃতিকথা যে রেখে গেছেন এবং যে পর্যন্ত লিখেছেন, সেক্ষেত্রে আমি বলবো যে এর পরবর্তীটাও লেখা দরকার। কারণ আমরা যারা রাজনীতি করি, অনেকেই স্মৃতিকথা লেখেন না।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের যে ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সংগ্রামের ইতিহাস, যে সংগ্রাম বার বার এসেছে। সেই পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, এরপর ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করার পরে যে হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের যে রাজনীতি, তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম- এই সংগ্রামগুলোর সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

আরও পড়ুন>>উপ-নির্বাচনে প্রমাণ হলো আ’লীগের আমলে ভোট সুষ্ঠু হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গত দুই টার্ম তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন আমরা বিরোধীদলে, তিনি সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সংসদকে অত্যন্ত প্রাণবন্ত রাখতেন। কারণ তার একটা গুণ আছে, বক্তৃতার মধ্য দিয়েও তিনি মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যেতে পারেন।

এসময় রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী রাশিদা খানম, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, গ্রন্থটির মূল আলোচক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সবার সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।

এসইউজে/ইএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।