ফেব্রুয়ারিতে দেশে ২৪ শিশু হত্যা
দেশের বিভিন্ন স্থানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ৪৬৫ জন নিহত ও ২ হাজার ৫৬২ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ফেব্রুয়ারিতে ২৪ শিশুকে হত্যা করা হয় বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা।
পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার সংস্থাটি। পুরো মাস জুড়েই আলোচনার শীর্ষে ছিল শিশু হত্যা ও নির্যাতন। পারিবারিক কোন্দলে আহত ও নিহতের সংখ্যাও এই মাসে তুলনামূলক বেশি।
এছাড়া নারী নির্যাতন, আত্মহত্যা পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা, কথিত বন্দুকযুদ্ধে মানুষ হত্যা, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্তৃক নিরীহ মানুষ হত্যা গতানুগতিকভাবেই যেন চলছে। মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় বাড়ছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ফেব্রুয়ারি মাসের গবেষণা সেলের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী।
শিশু হত্যা ও নির্যাতন : বিগত কয়েক মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসেই শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। ফেব্রুয়ারিতে ৪০ জন শিশু নির্যাতনের স্বীকার হয় এর মধ্যে হত্যা করা হয় ২৪ জন শিশুকে। ১২ ফেব্রুয়ারি নাটোরের বাগাতিপাড়ার মাকুপাড়া বাজারে স্কুলপড়ুয়া তিন শিশুকে রশি দিয়ে হাত বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়। একই দিনে রাজশাহীর দুই স্কুল ছাত্রকে চুরির অপবাদ দিয়ে হাত পা বেঁধে ৭ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশান মডেল স্কুলের ৪ ছাত্রকে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে।
এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি সদ্যভূমিষ্ঠ ছেলে সন্তানকে চারতলা বাড়ির বারান্দা থেকে ফেলে দেয় তার মা। শুধু নির্যাতন নয় বেড়ে গেছে শিশু হত্যা । ৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দুই বছরের এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১০ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকায় শিশু কন্যাকে হত্যার পর আত্মহত্যা করে বাবা। ১৬ ফেব্রুয়ারি অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে গাজীপুরে চার বছরের এক শিশুকে হত্যা করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের সুদ্রাটিকি গ্রাম থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয় ৪ শিশু,পরবর্তীতে তাদের লাশ মাটিচাপা অবস্থায় পাওয়া যায়। কিশোরগঞ্জে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে দেড় বছরের শিশুপুত্রকে হত্যা করে মা। মাসের শেষের দিনেও কুমিল্লায় হত্যা করা হয় দুই শিশুকে।
যৌতুক : ফেব্রুয়ারি মাসে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিয়েছেন ৬ জন নারী এবং যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের কারণে আহত হয়েছেন আরো ২৩ জন নারী।
পারিবারিক কলহ : পারিবারিক কলহে ফেব্রুয়ারি মাসে নিহত হয় ২৮ জন ও আহত হয় ৬৯ জন। পারিবারিক কলহের জের ধরে বেয়ালমাড়িতে ভাইয়ের হাতে খুন হন বোন। তাছাড়া পাবনায় পারিবারিক কলহের কারণে এক মা ও তার সন্তানের বিষ পানে মৃত্যু হয়।
ধর্ষণ : ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ২৫ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে ৭ জন নারী, গণধর্ষণের শিকার হয় ৬ জন ও ধর্ষনের পর হত্যা করা হয় ৩ জনকে। এই মাসে ৯ জন শিশুধর্ষিত হয়।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত : মানবাধিকার সংগঠনের পাঠানো বার্তায় বলা হয়, গত মাসে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু হয় ১৩ জনের।
আত্মহত্যা : ফেব্রুয়ারি মাসে আত্মহত্যা করেছে মোট ৩৬ জন। এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও ২৯ জন নারী।
খুন : সারাদেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ৭৩ জন ও আহত হয় ১৪২ জন। ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ে মঠ পূজারীকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
সামাজিক অসন্তোষ : বিভিন্ন কারণে সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩১ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৩২ জন।
রাজনৈতিক সহিংসতা : রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ২ জন ও আহত হয়েছেন ১৭২ জন।
তাছাড়া মাদকের প্রভাবে নিহত ১ ও আহত হয়েছেন ৬ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৪ জন। এ মাসেও চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৬ জনের। চলতি মাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে গণগ্রেফতার হয়েছে ৭২৫ জনেরও বেশি।
এফএইচ/জেএইচ/পিআর