নওগাঁর ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ
বর্তমানে দেশে কয়লার অভাব না থাকলেও নওগাঁয় প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে জেলার প্রায় দেড়শ’টি ইটভাটাতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠের খড়ি। এসব ইটভাটাগুলোর অধিকাংশের নিবন্ধন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের সঠিক তালিকাও নেই প্রশাসনের হাতে।
এলাকাবাসী এসব অবৈধ ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অভিযোগ অস্বীকার করে ইতোমধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে।
জানা গেছে, জেলার দেড়শ’টি ইটভাটার মধ্যে অধিকাংশ ইটভাটা কৃষিজমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে। জনবসতিপূর্ণ পৌর এলাকা থেকে ইটভাটাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় নির্দেশ দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরও ইটভাটাগুলো সরানো হয়নি। এদিকে ওই ইটভাটাগুলোর কারণে জনবসতিপূর্ণ এলাকার গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
এছাড়াও ইটভাটাগুলোর মধ্যে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটিতে আধুনিক প্রযুক্তির জিগজ্যাগ চিমনী থাকলেও বেশির ভাগই স্থায়ী চিমনীর ইটভাটা। আবার স্থায়ী চিমনীর ইটভাটাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর নবায়ন নেই। দেশে কয়লার অভাব না থাকলেও বেশি লাভের আশায় জেলার অধিকাংশ ইটভাটার মালিকরা এই চিমনীগুলোতে কাঠ ও খড়ি পোড়াচ্ছেন। বর্তমানে বিদেশী কয়লা প্রতি টন সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা ও দেশী কয়লা প্রতি টন ৯ হাজার ২শ’ টাকা দরে কেনা বেচা হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সীমান্ত এলাকা ধামইরহাট, মান্দা, পত্নীতলা, সাপাহার, পোরশা উপজেলার ইটভাটাগুলোতে শতশত মণ কাঠ ও খড়ি অবাধে পোড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ফসলি জমির উপরিভাগের টপসয়েল জাতীয় মাটি কেটে ইটভাটায় আনা হচ্ছে।
জেলা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুখ হাসান জানান, গত বছর কয়লার অভাব দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে কয়লার অভাব না থাকলেও অনেক ইটভাটার মালিকরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাঠ ও খড়ি পোড়াচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, কৃষিজমিতে ইটভাটা গড়ে তোলার কারণে কৃষিজমি কমছে। ইটভাটায় ইট তৈরী করায় কৃষি জমির উপরি ভাগের টপসয়েল মাটি কাটার করণে জমির উর্বরশক্তি কমে যায় আর এ কারণে সেই জমিতে কোনো ফসলের তেমন ভাল ফলন হয় না। এবং ওই জমির টপসয়েল পূরণ হতে ১২ থেকে ১৫ বছর সময় লেগে যায়। এসময় তিনি এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নেজমামুল আলম জানান, পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, বাজার, স্কুল, কলেজ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ধোঁয়াবিহীন চুলায় ইট পোড়াতে হবে। কৃষি জমি থেকে কোনো মাটি কেটে নেওয়া যাবে না। এছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদণ্ড ও অনাধিক তিন লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, লোক বলের অভাবে তাদের কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ইত্যেমধ্যে তাদের বিভাগীয় এলাকায় জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্যে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যহত আছে। এরপরও কেউ যদি এই আইন ভঙ্গ করে তাহলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো জানান, দ্রুত অবৈধ্য ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
আব্বাস আলী/এফএ/পিআর