সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে পদত্যাগ করবো: ইসি আলমগীর

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব থেকে আমরা সরে যাবো।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। যদি কম্প্রোমাইজ করতে হয় তাহলে কী করবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন>> জুনের মধ্যে তিন ধাপে পাঁচ সিটি নির্বাচন
তিনি বলেন, আমাদের কম্প্রেমাইজ করতে হলে এ চেয়ারে দেখবেন না। আমরা যে কাজের জন্য শপথ করেছি সেটা যদি না-ই করতে পারি তাহলে এ চেয়ারে থাকবো কেন? আমাদের কমিশনে যারা আছি সবার মনোভাব একই রকম। অবশ্যই আমরা যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো না এটা বিশ্বাস করি না। প্রয়োজনে দায়িত্ব থেকে সরে যাবো। বিদেশি-দেশি কেউ কোনো চাপ দেয় না। আমরা বিশ্বাস করি আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবো।
দলীয় সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হবে না, এ ধারণা ভাঙার দায়িত্ব কার, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ভাঙার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। এখানে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। এটা রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক সমস্যা, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। এ বিষয়টাতে আমাদের কিছু করার নেই। সংবিধানও সে দায়িত্ব আমাদের দেয়নি।
আরও পড়ুন>> আমরাও চাচ্ছি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক: সিইসি
আলমগীর বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভোট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (প্রার্থীদের সমান সুযোগ) থাকা। নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন তারা স্বাধীনভাবে প্রচার করতে পারেন, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ইচ্ছেমতো পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, ভোট গণনা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়। নির্বাচনের ফলাফল যাতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়, সেটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সে দায়িত্ব পালনের প্রতি শতভাগ অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা সেটা করবো। আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি যে ধরনের সরকারই থাকুক না কেন। বর্তমান ইসি শততাগ সৎ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে।
বিরোধী পক্ষ তো এটা মূল্যায়ন করছে না এ বিষয়ে তিনি বলেন, তারা কেন করছেন না তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমাদের এক বছরে কার্যক্রম দেখে তারা কি বলতে পারবেন আমরা নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করেছি। অথবা দুই প্রার্থীর প্রতি আচরণ দুই রকম হয়েছে?
দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ভোট করা সম্ভব-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশন চাইলে সেটা সম্ভব। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। এটা নির্ভর করে নির্বাচন কমিশন কতটা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি (আমাদের ইচ্ছা আছে) অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। অতীতে কেন পারেনি সেটা অতীতের কমিশন বলতে পারবেন। আগের কমিশন আর বর্তমান কমিশনের লোক হচ্ছে ভিন্ন। তাদের আচরণের সঙ্গে আমাদের আচরণ মিলবে না।
আরও পড়ুন>> অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় অস্ট্রেলিয়া
সংকট দূর করার জন্য সংলাপের দায়িত্ব কে নেবে-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান কি সেই দায়িত্ব আমাদের দিয়েছে। আমাদের বিভিন্ন অংশীজন, সুশীল সমাজের মতামত নেওয়ার ক্ষমতা তো দেওয়া আছে। এখন আর হচ্ছে না। হয়তো পরবর্তীতে হতে পারে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা হতে পারে। অর্থাৎ যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি অথবা প্রয়োজন সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের জন্য, তাদের সঙ্গে তো নির্বাচনের আগে কথা হতে পারে। সেটা তো থাকতে পারে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা তো সবসময় আছে, যে নির্বাচন কমিশন যেকোনো সময় যেকোনো দলের সঙ্গে বসে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাইবান্ধা উপ-নির্বাচন তারা বড় উদাহরণ। প্রশাসন যারা কাজ করেছিলেন, যাদের গাফিলতি পাওয়া গেছে বা যারা অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি এবং সেটা মনিটরিং করেছি। কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ইত্যাদি আমরা দু'এক সপ্তাহ পরপরই মনিটর করছি। প্রার্থীর সংশ্লিষ্টতা তো আমরা বলতে পারি না। যারা জড়িত ছিল তারা প্রার্থীর কথা বলেনি। তারা কেন বললো না সেটাই তো রহস্য। তাদের বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা বারবার প্রশ্ন করেছেন এমন কাজ করলেন কেন, তারা বলেছেন আমরা স্বেচ্ছায় করেছি। এখন তারা যদি বলেন স্বেচ্ছায় করেছি। তারা যদি কারো নাম বলতো আমরা ব্যবস্থা নিতাম।
আরও পড়ুন>> নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, ব্রিটিশ মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, এখানে তো অনুমানভিত্তিক কোনো অ্যাকশন নেওয়া যায় না। যে কোনো প্রশাসনিক, বিচারিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হলে আপনাকে যা তদন্তে প্রমাণিত হবে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়টি আমরা তফসিল ঘোষণা আগে দেখবো। আমাদের কিছু কৌশল থাকবে, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেই কৌশলগুলো তো আমরা বলবো না। অবশ্যই কিছু কৌশল থাকবে। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে গ্যারান্টি দিচ্ছি। এ চেয়ারে আমরা যতক্ষণ আছি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করে।
এইচএস/এমএএইচ/জিকেএস