অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে ইরানের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, ০৪ মে ২০২৩

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাপানের ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে।

মধ্যপ্রাচ্যে পরবর্তী রাজনীতি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্ব রাজনীতি বদলে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটছে মধ্যপ্রাচ্যে। পর্যবেক্ষণ করছেন অবশ্যই।

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: হ্যাঁ, নানা ঘটনা ঘটছে বিশ্বে। বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা পুরোনো। ব্রিটিশরা এক সময় বিশ্ব শাসন করেছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এই শাসন ব্যবস্থার কাঠামো ভেঙে যায়।

শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্ব। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রায় একক ক্ষমতায় হাজির হলো। মনে করা হচ্ছে এই সময়ে চীন এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেবে। কিন্তু তা হয়নি। চীন আসলে সেদিকে মনোযোগ দেয়নি।

আরও পড়ুন>> স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বিদেশিরা এসে ছবক দেওয়া লজ্জার: শাহিদুজ্জামান

চীনের অর্থনীতির পুনরুত্থান ঘটেছে। ১৮শ শতকে চীন ছিল সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ। ভারতবর্ষ ছিল দ্বিতীয়। এখন ভারতও একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি। তুরস্ক, ব্রাজিলও বড় বড় শক্তি। এই শক্তিগুলো আসলে থামানোর কোনো সুযোগ নেই। যদিও এই শক্তি প্রকাশের চরিত্রগুলো আমরা ভালোভাবে জানি না। তবে এই বহুমুখী শক্তিগুলো বিশ্বে নানাভাবে ভূমিকা রাখবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যে আমরা হাওয়া বদল দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে চীনের মধ্যস্থতায় ইরান-সৌদির মধ্যকার যে সম্পর্কোন্নয় তা এ অঞ্চলের জন্য বড় ঘটনা বলে মনে করছি। চীন এখানে যে ভূমিকা রাখছে তা নতুন কিছু তৈরি করছে। ইরান-সৌদির সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন স্বাভাবিক করে তুলছে।

জাগো নিউজ: ‘জ্বালানি রাজনীতি’ এখানে গুরুত্বপূর্ণ কি না? মানে ইরান-সৌদি আরব এই রাজনীতি এখন নিজেরা বোঝার চেষ্টা করছে কি না?

ইমতিয়াজ আহমেদ: সৌদি আরব সত্তরের দশকে তার নিরাপত্তার বিনিময়ে তেল বেচার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডলারে। এখান থেকেই ‘পেট্রো ডলার’ শব্দটি আসে। সৌদির টাকা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, আবার সেই অর্থ সৌদির উন্নয়ন। এই ধারণা এখন মার খাচ্ছে বৈশ্বিক অন্য শক্তির কারণে।

আরও পড়ুন>> ইরান-সৌদি সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতির নতুন মোড়

এমন শক্তির প্রশ্নে বাংলাদেশও এখন গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এই উপমহাদেশে। এই শক্তিগুলোকে আপনি আর থামাতে পারবেন না। শুধু ডলারের মাধ্যমে লেনদেন যে সৌদির ক্ষতি, তা অবশ্যই অনুধাবন করতে পেরেছে। কারণ এখন অন্য মুদ্রার গুরুত্ব বাড়ছে। তেল তো মধ্যপ্রাচ্যের। তেল তো যুক্তরাষ্ট্রের নয়। এক সময় সৌদি আরবের নিরাপত্তার ব্যাপার ছিল। এখন তো অনেক শক্তি প্রকাশ ঘটছে।

একটি দেশের ওপর নির্ভর করলে যে সমাধান না তা সৌদি আরব টের পেয়েছে। একটি বিশেষ দেশ আরেকটি দেশকে সব সময় নিরাপত্তা দিতে পারে না।

জাগো নিউজ: তেল বাণিজ্যের গুরুত্ব উল্লেখ করলেন। ইরান ক্রমশই সামরিক শক্তিতে বলবান হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তির বিকাশ নিয়ে কী বলা যায়?
ইমতিয়াজ আহমেদ: বছরের পর বছর ধরে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটির উন্নয়ন ব্যাহত করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ইরান বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি হতে পারতো।

এরপরেও অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে ইরানের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। তারা করোনার ভ্যাকসিন পর্যন্ত তৈরি করে ফেললো। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন আসলে থামিয়ে রাখতে পারেনি পশ্চিমা বিশ্ব। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নও ইরানের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

সব মিলে ইরানও বুঝতে পেরেছে নিষেধাজ্ঞায় তার ক্ষতি হচ্ছে এবং বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা জরুরি। দৃশ্যমান পরিবর্তন এখন সবাই বুঝতে পারছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের শেষ কোথায় এবং এটি ধরে রাখা সম্ভব হবে কি না, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ অনেকেই চেষ্টা করবে এই পরিবর্তন ঠেকানোর। যদিও বৈশ্বিক অন্য শক্তিগুলোর অগ্রযাত্রা ঠেকানো আর সম্ভব নয়। ঔপনিবেশ কাঠমোতে আর থাকতে চাইবে না। বৈশ্বিক এই পরিস্থিতিতে সবাই সবার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতেই ব্যস্ত হবে।

জাগো নিউজ: ১৯ মে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলন। সিরিয়াও পর্যবেক্ষণ করতে যোগ দিচ্ছে। এই সম্মেলন বিশেষ বার্তা দিতে পারে কি না?

ইমতিয়াজ আহমেদ: রাতারাতি কিছু ঘটবে বলে আমি মনে করি না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনেক আরব দেশের সম্পর্ক রয়েছে। একদিনেই সব ওলাট-পালট হয়ে যাবে না। সৌদি যে ভূমিকা রাখবে তা অনেক দেশই রাখতে পারবে না। সময় লাগবে।

তবে সৌদির সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক মৌলিক একটি পরিবর্তন আনছে। কারণ এখানে শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব পুরোনো। ইরান রিপাবলিক্যান দেশ। সৌদি রাজতন্ত্রের। এই বিভাজন রেখে তারা যখন একসঙ্গে কাজ করতে চাইছে, তখন স্বাভাবিক কারণে আরব লীগে প্রভাব ফেলবে। তবে এটি মনে রাখা দরকার কোনো অঞ্চলেই একটিমাত্র দেশের খবরদারি থাকছে না আর।

এসএস/এএসএ/জেআইএম

চীনের অর্থনীতির পুনরুত্থান ঘটেছে। ১৮শ শতকে চীন ছিল সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ। ভারতবর্ষ ছিল দ্বিতীয়। এখন ভারতও একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি। তুরস্ক, ব্রাজিলও বড় বড় শক্তি। এই শক্তিগুলোকে আসলে থামানোর কোনো সুযোগ নেই।

ভারতও একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি। তুরস্ক, ব্রাজিলও বড় বড় শক্তি। এই শক্তিগুলোকে আসলে থামানোর কোনো সুযোগ নেই। যদিও এই শক্তি প্রকাশের চরিত্রগুলো আমরা ভালোভাবে জানি না। তবে এই বহুমুখী শক্তিগুলো বিশ্বে নানাভাবে ভূমিকা রাখবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।