একটি পেঙ্গুইন ও রাজমিস্ত্রির ভালোবাসা
মানুষের প্রতি মানুষের কৃতজ্ঞতাবোধ নিয়ে প্রশ্ন অহরহই শোনা যায়। এ নিয়ে রীতিমতো সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায় অনেকের। কিন্তু মানুষের প্রতি কোনো প্রাণীর কৃতজ্ঞতাবোধের নজির কী দেখেছেন কখনো? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে।
২০১১ সালের ফেব্রয়ারির কথা। রাজধানী রিও ডি জেনিরোর কাছের এক দ্বীপে মৃতপ্রায় পেঙ্গুইনকে উদ্ধার করেন জোওয়া পেরেইরা ডি সুজা। ৭৫ বছরের এই বৃদ্ধ পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও প্রাণীর প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করেন সবসময়। অনেক সময় মাছ বিক্রি করেও পরিবারের ভরন-পোষণ চালান তিনি।
সমুদ্র সৈকতে একদিন সারা শরীর তেলে মাখা অবস্থায় একটি পেঙ্গুইন পড়ে থাকতে দেখেন ডি সুজা। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন মারা যাবে এ পেঙ্গুইনটি। তারপরও আহত পেঙ্গুইনটি উদ্ধার করে সেবা-শুশ্রূষা শুরু করেন তিনি। শরীর থেকে তেল মুছে পরিষ্কার করেন, খাবার দেন। কয়েক সপ্তাহের সেবায় সুস্থ হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে নতুন জীবন ফিরে পায়। এরপর ডি সুজা তাকে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। চলে যায় পেঙ্গুইনটি। ডি সুজা কখনো কল্পনাও করতে পারেননি বারবার এই পেঙ্গুইনটি তাকে ভালোবাসার প্রতিদান দেবে।
ভালোবাসার টানেই প্রতি বছর প্রায় আট হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পেঙ্গুইনটি দেখা করতে আসে সুজার কাছে যেখানে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনা-চিলির সমুদ্র সৈকত থেকে সাঁতার কেটে সোজা ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে গত চার বছর ধরে এক বারের জন্যও আসতে ভোলেনি এই পেঙ্গুইনটি। 
পরে ডি সুজা ওই পেঙ্গুইনটির নাম দেন ডিনডিম। ল্যাটিন আমেরিকার ম্যাগেলানিক প্রজাতির পেঙ্গুইন। ভালবাসা তো বটেই, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের প্রতি একটি প্রাণীর কৃতজ্ঞতা বোধের এক উপাখ্যান। নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়া এক পেঙ্গুইন এবং বৃদ্ধ রাজমিস্ত্রির এক গল্প। দিনে দিনে তা রূপান্তরিত হয়েছে সন্তান ও পিতার কাহিনিতে।
ডি সুজা বলেন, `প্রত্যেকেই বলতো কখনোই ফিরে আসবে না সে, কিন্তু গত চার বছর ধরে সে আমার সঙ্গে দেখা করতে চলে আসে ওই সৈকতে।` প্রত্যেক বছর তার প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়ছে এই বৃদ্ধের। যখন সৈকতে আসে ডিনডিম তখন অনেকেই তাকে স্পর্শ করতে চায়, আর এ সময় সন্তানতূল্য ডিনডিমকে যাতে কেউ স্পর্শ করেতে না পারে সেজন্য বাধা হয়ে দাড়িয়ে যান সুজা।
পেঙ্গুইনটি চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন তার অভাব বোধ করেন ডি সুজা। একটা সময়ের পর ভুলেও যান তিনি। এরপরে চার মাস কেটেছে কি কাটেনি! জুনের মাঝামাঝি সময়ে একদিন সমুদ্রের পাড়ে ছিলেন ডি সুজা। হঠাৎ দেখেন একটি পেঙ্গুইন পানি থেকে উঠে এসে তার দিকে এগিয়ে আসছে। চিনতে ভুল হয়নি। দুজনের দেখা হয়। ডি সুজা তাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করেন। সেও মুখ বাড়িয়ে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করে। ডি সুজার মনটা যেন আবেগে ভেসে যায়।
এসআইএস/এমএস