পাকা সেতুর অপেক্ষায় দুই উপজেলার হাজারো মানুষ


প্রকাশিত: ১০:২৫ এএম, ১২ মার্চ ২০১৬

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে নরসুন্দা নদীর উপর একটি পাকা সেতুর অভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দুটি উপজেলার চার ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। গ্রামবাসী চাঁদা তুলে একটি বিশাল বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছিলেন কয়েক বছর আগে। এটিও প্রায় ভেঙেই গেছে বলা যায়। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই জরাজীর্ণ এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারপার হচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী। প্রশাসন আর জনপ্রতিনিধিরা পাকা সেতু নির্মাণে বহুবার প্রতিশ্রুতি দিলেও আলোর মুখ দেখছেনা সেতু নির্মাণের কাজটি।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নের লাখপুর আজিমোর বাজার এলাকায় নরসুন্দা নদীর ওপর একটি বিশাল বাঁশের সাঁকো নির্মিত হয়। তবে সরকারি উদ্যোগে নয়। দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে নির্মাণ করেন এটি। বর্তমানে ভেঙ্গে পড়া জরাজীর্ণ এ সাঁকো দিয়ে পারাপার করছে করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলার কিরাটন, দেহুন্দা, গুজাদিয়া ও দিগদাইর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। আর সবচেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ সাঁকো দিয়ে পারপার করতে হচ্ছে তাদের।

নরসুন্দা নদীর দক্ষিণ পাড়ে করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নের লাখপুর, আজিমের বাজার, এবং দেহুন্দা ইউনিয়নের খামার দেহুন্দা গ্রাম। আর উত্তর পাড়ে করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের ঢালারপাড় ও তাড়াইল উপজেলার দিগদাইর গ্রাম। নদী পার হয়ে শিক্ষার্থীদের দেহুন্দা উচ্চ বিদ্যালয় ও করিমগঞ্জ কলেজে আসতে হয়। নদীতে সেতু না থাকায় ৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে বিকল্প পথে স্কুল-কলেজে যেতে হয় তাদের।

এ ছাড়া দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা আর অবহেলিত লাখপুর আজিমের বাজার ও ঢালারপাড় এলাকাটি সবজির জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এখানে পাকা সেতু না থাকায় ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা। ফলে ক্ষেতের ফসল আর জরুরী রোগীদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বিকল্প পথে ৬ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে।

Kishoreganj

এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ,লাখপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক সিদ্দিক মাস্টার তিন বছর আগে নরসুন্দা নদীতে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেন। গ্রামবাসী নিজেরা বাঁশ, টাকা ও শ্রম দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করে। এতে হাসি ফোটে মানুষের মুখে। কিন্তু বর্তমানে সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আবারও দুশ্চিন্তায় তারা। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার ঘুরেও পাকা সেতু নির্মাণে আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলছেনা তাদের।

সিদ্দিক মাস্টার জানান, এখানে একটি পাকা সেতুর জন্য আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছি। এলাকার এমপি-মন্ত্রীদের কাছে বার বার যাচ্ছি। কিন্তু কোনো উপায় মিলছেনা।

দেহুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না আক্তার জানায়, প্রতিদিন তারা ভয়ে ভয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়।

একই স্কুলের শিক্ষার্থী রাকিব আল হাসান, নাইম ও রেজওয়ান এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলে, বর্ষাকালে কিংবা বৃষ্টির সময় জীবন বাজি রেখে সাঁকো পার হতে হয়। পা পিছলে পড়ে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছে বিভিন্ন সময়।

কিরাটন গ্রামের স্কুল শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও আবুল কাশেম বলেন, এলাকায় জরুরী অবস্থায় কাউকে হাসপাতালে নেয়ার দরকার হলে তখন কিছুই করার থাকেনা। ঢালার পাড় ও দিগদাইর এলাকায় হাজার হাজার মন সবজি চাষ হয়। কিন্তু ব্রিজের অভাবে পরিবহন করতে না পারায় জমির কাছে কম টাকায় সবজি বিক্রি করতে হয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, লাখপুর আজিমের বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ বাশেঁর সাঁকোটি এলাকার মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছে এটা শুনেছি। যত দ্রুত সম্ভব এখানে পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে বলা হয়েছে।

নূর মোহাম্মদ/এফএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।