‘নো দামাদামি মুলামুলি লেস মাইনাস কমিশন কনসেশন ডিসকাউন্ট’
‘দামাদামি করবেনা, মুলামুলি করবেনা, লেস, মাইনাস, কমিশন, কনসেশন, ডিসকাউন্ট কিছুই করা হবেনা, কেউ যদি ভেবে থাকেন একটু পরে দাম কমিয়ে দিবো তাহলে বোকামি করবেন। এক দাম তিনশ টাকা।’
মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের সামনের ফাঁকা রাস্তায় মাইক্রোফোন হাতে ওষুধের ক্যানভাস করছিল এক যুবক। যুবকের নাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম। বাড়ি পিরোজপুর।
প্রায় নিঃশ্বাস না নিয়ে অনবরত কথা বলার সময় সে বলছিল, তাদের কোম্পানির ওষুধ খেলে ঘন প্রস্রাব, বাতব্যথা ও অ্যালার্জি বন্ধ হবে। বনজ গাছ-গাছালি দিয়ে ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে। আর যাদের পুরো ফাইল ওষুধ কেনার সামর্থ নেই তারা ২০ টাকা খরচ করে একগ্লাস পাউডারের গুঁড়ার ওষুধ খেতে পারেন। আধ ঘণ্টার মধ্যে নিজেই বুঝবেন উপকারিতা।
একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারের ওপর অভিনব কায়দায় পসরা সাজিয়ে বসেছিল সে। গাড়ির ছাদে স্পিকার, বনেটের ওপর একটি প্লাস্টিকের ক্লথ বিছিয়ে তার ওপর ব্যাটারিচালিত বাতি, ওষুধের বাক্স, পানির বোতল, বালতি, পানির গ্লাস ও ওষুধের পাউডার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গাড়ির চারপাশে গোল করে দাঁড়িয়ে লোকজন লেকচার শুনছেন।
কৌতূহলবশত সামনে এগিয়ে মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে ক্যানভাস শুনে বোঝা গেল তারা পুরানা পল্টন এলাকার গ্রিনলাইফ ন্যাচারাল হেলথকেয়ার (আয়ু) নামক কোম্পানির গ্যানোলাক্স নামক একটি ‘যৌনবর্ধক’ পাউডার ওষুধের ক্যানভাস করছিল।
তবে এ প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পর ইব্রাহিম ও তার সঙ্গে থাকা মিঠু, হাসান ও বাবুল নামের চার যুবক ইনিয়ে বিনিয়ে ক্যানভাসের সময় বলা শব্দগুলো বদলে বনজ ওষুধে শরীর ভালো থাকে বলে প্রচারণা চালাতে থাকে।
ইব্রাহিমের দাবি, তাদের কোম্পানি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত। সে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন ও ওষুধ বিক্রির ওপর কমিশন পায়। কোম্পানি থেকে তাদের প্রাইভেটকার দেয়া হয়েছে। দিনের বেলা ঘুরে ঘুরে ওষুধের অর্ডার কেটে সরবরাহ করে এবং বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন বন্ধ মার্কেট ও খেলার মাঠের পাশে ক্যানভাস করে ওষুধ বিক্রি করেন। সারাদেশেই কোম্পানির ওষুধ বিক্রয়ে প্রাইভেটকার দেয়া হয় বলে সে জানায়।
উপস্থিত কয়েকজন ২০/২২ বছরের যুবক প্রথমে কথা বলতে ইতস্ততবোধ করলেও পরবর্তীতে জানায়, মূূলত এ ধরনের ক্যানভাসাররা যৌন ওষুধ বিক্রি করে। কথার ফাঁদে ফেলে তারা সুকৌশলে ওষুধ বিক্রি করে। আজ মঙ্গলবার ছুটির দিনে নিউমার্কেটের আশেপাশে আরও দুই তিনটি স্থানে ক্যানভাস করে ওষুধ বিক্রি করতে দেখা যায়। তাদের ওষুধের কার্যকারিতা কতটুকু তা দেখার যেন কেউ নেই।
এমইউ/বিএ