বঙ্গবন্ধু সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাকর্মীর জন্য অনুকরণীয় শিক্ষক

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০২৩

১৫ আগস্ট ১৯৭৫। স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেদনা বিধুর দিন। এদিন সদ্য স্বাধীন দেশটির মুক্তি সংগ্রামের নেতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। বিশ্বে তিনিই একমাত্র নেতা যিনি ৩৬ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছেন একটি জাতি রাষ্ট্রের জনক। বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে এই প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের জন্য শিক্ষা কী?

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, লেখক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে জাগো নিউজের। তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনই রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য শিক্ষা। তার অপরিসীম দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও পরম বিশ্বাস, জনগণের জন্য নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি গ্রহণের সাহস, দেশ, জনগণ ও মানবতাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়ার আপসহীন অবস্থান ও উদারতা শিক্ষণীয়।

আরও পড়ুন>> ১৫ই আগস্ট: কালিমালিপ্ত শোকের দিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু কোন আদর্শ, কোন দর্শন এবং বিশ্বাস নিয়ে এই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। কী কারণে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, কারণ তিনি উদারভাবে মানুষকে ভালোবাসতেন। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ীরা সব সময় উদারমনা হয়।’

‘বঙ্গবন্ধু সেই উদারমনা হওয়ার জন্য সব সময় বলেছেন। আমরাও উদারতা নিয়েই জীবনযাপন করে চলেছি। বঙ্গবন্ধু উদার জীবনযাপন করেছেন বলেই হত্যাকাণ্ডের জন্য চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকারীদের বাস্তবায়ন করা সহজ হয়েছে। পরাজিত যারা হয়, তারা কিন্তু পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারে না। তাদের মধ্যে সংকীর্ণতা সব সময় থেকে যায়।’

আরও পড়ুন>> যে কারণে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি পেয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের বর্বরতা দেখিয়েছে এবং পরাজয় বরণ করে চলে গেছে তাদের দেশ পাকিস্তানে। কিন্তু এদেশে যাদের রেখে গেলো- রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং তাদের সঙ্গে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, তারা কিন্তু পাকিস্তানপন্থি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তের মধ্যে বোঝা গেছে, এদেশকে তারা পাকিস্তানমুখী করার চেষ্টা করেছে।’

‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকোণ্ডের পর মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশ করা হয়। এটার জন্য কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রয়োজন হয়নি। এ ঘটনাগুলো থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের শিক্ষা নিতে হবে, এই স্বাধীন দেশকে স্বাধীনভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর যে শিক্ষা, আদর্শ ও দর্শন সেটি অবলম্বন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গিয়ে কারও পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব না। হয়তো এ ধরনের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করতে পারে, দেশের ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণ স্বাধীনতাবিরোধীদের কখনো মেনে নেয়নি।’

আরও পড়ুন>> বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্ব বন্ধু’ আখ্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনীতি করলে সাহসী হতে হবে। সঠিক রাজনীতি করতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে, এটাই মূল শিক্ষা।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গঠন করতে চেয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ফসল একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর যে ঘোষণা ছিল- এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষ হয়েছে, কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম শেষ হয়নি। মুক্তির সংগ্রামের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। জাতি দীর্ঘদিন মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ১৯৮১-তে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বাংলাদেশে ফিরে আসার পর আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে এই জাতি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সব দিকেই শেখ হাসিনার অর্জন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তি সংগ্রাম বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়েছেন। এই অর্জন, মুক্তি সংগ্রামকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এটা আমাদের সফল করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নয়, সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাকর্মীর জন্য অনুকরণীয় রাজনৈতিক শিক্ষক। তার অপরিসীম দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও পরম বিশ্বাস, জনগণের জন্য নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি গ্রহণ, দেশ, জনগণ ও মানবতাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়ার আপসহীন অবস্থান প্রত্যেক রাজনৈতিককর্মীর জন্য শিক্ষাণীয় বিষয়। তার সমগ্র জীবন, চিন্তা ও কর্ম মানবকল্যাণের পাথেয়। তিনি অনুপ্রেরণার বাতিঘর।’

এসইউজে/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।