আবারো মংলা বন্দরকে অচলের ষড়যন্ত্র
শুল্ক জটিলতা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং মংলা কাস্টমস হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খামখেয়ালীপনা এবং ব্যবসায়ীদের লুলুপ দৃষ্টির কবলে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা স্বাভাবিক করতে বন্দর ব্যবহারকারীরা ধর্মঘটের কথা ভাবতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে তারা খুলনা কাস্টমস হাউজের কমিশনারের বদলির দাবিও জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, নানা জটিলতার কারণে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় আবারো মংলা বন্দর সচল হতে শুরু করে। সার, চাল, গম, টাইলস, প্রসাধন সামগ্রী এমনকি গাড়িও আমদানি শুরু হয় মংলা বন্দরের মাধ্যমে। ফলে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় মংলা বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অনেক ব্যবসায়ী মংলা বন্দর ব্যবহার করতে শুরু করেন। যা মংলা কাস্টমস, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ও ওই অঞ্চলের ব্যবসায়ী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা মেনে নিতে পারেননি।
মংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা জানায়, মংলা বন্দর যেন আবারো অচল হয়ে যায় সেজন্য ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মংলাকে অচল করতে বন্দরে আগত বিদেশী জাহাজ আটকে রাখা, পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারণ, পণ্য খালাস কাজে অহেতুক বিলম্ব করা, ঘোষণা বর্হিভূত পণ্য আমদানি, পরিমাণ বেশি, মংলা বন্দরে আমদানি করা পণ্যের অধিক পরিমাণে শুল্ক নির্ধারণ, বন্দরের ইয়ার্ড থেকে নিলামের পণ্য চুরিসহ নানা কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেও কোন প্রতিকার পাননি ক্ষতিগ্রস্তরা।
এদিকে, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেল ইমপোর্টার্স ও ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেছেন, মংলা বন্দরে নানা জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। তাদের চার হাজার গাড়ি শুল্ক জটিলতায় আটকে রয়েছে মংলা বন্দরে।
বারভিডার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মংলা বন্দরকে ধ্বংস করার জন্য আবারো ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই বন্দরে গাড়ি আমদানির মধ্যদিয়ে বন্দরটি সচল হয়েছিল। কিন্তু একটি মহল সেই গতির চাকাকে থামিয়ে দিতে নানামুখি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, গত বছরে বন্দরে বর্তমানে আমদানি শর্তভঙ্গ করা ৫১২ টি, শুল্ক নির্ধারণ জটিলতায় আটকে থাকা ৮৮৩টি এবং নতুন আমদানি করা ৬৮৪টি গাড়ি পুলিশ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই গাড়িসহ বন্দরে বর্তমানে চার হাজার গাড়ি ছাড় করার অপেক্ষায় আছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে গড়িমসি করছে।
অপরদিকে, মংলা কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ির শুল্কায়ন ও এইচ এস কোড বিণ্যাসসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে। ফলে বন্দরে বিপুল পরিমান গাড়ি আটকে থাকায় ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ আটকে গেছে। এই অবস্থার মধ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিলামে গাড়ি বিক্রি করে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সর্বশান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকায় মংলা বন্দরের মাধ্যমে গোটা আমদানি বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মংলা বন্দরের এই জটিলতা নিরসনের জন্য ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটে যাবার কথা ভাবছেন।
তবে এ বিষয়ে মংলা কাস্টমস হাউজের কমিশনার ড. আল-আমিন প্রামাণিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
আলমগীর হান্নান/এআরএ/এবিএস