ট্রেনে আগুন: চোখ খুললেই মাকে খোঁজে শিশু আরফান

ঢামেক প্রতিবেদক
ঢামেক প্রতিবেদক ঢামেক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২৪
বার্ন ইনস্টিটিউটে ফুপুর কোলে শিশু আরফান, পাশে আগুন লাগা ট্রেনটি, এই ট্রেনেই মায়ের সঙ্গে আসছিল সে

শিশু আরফানের বয়স মাত্র ছয় মাস। এখনো সেভাবে কাউকে চিনতে শেখেনি। জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও নিষ্ঠুরতা বোঝার বয়স হয়নি। শুধু মায়ের মুখ, মায়ের শরীরের ঘ্রাণটাই তার খুব পরিচিত। ক্ষুধা লাগলে মাকেই খোঁজে। সেই মা এখন তার কাছে নেই। রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের পর ফুটফুটে শিশুটি মায়ের থেকে আলাদা। যখনই চোখ খুলে, সে অন্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে মাকে খুঁজে ফেরার চেষ্টা করে। আর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সে এক করুণ দৃশ্য!

শিশু আরফানের মায়ের নাম এলিনা ইয়াসমিন। ট্রেনে আগুনের পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন স্বজনরা। স্বজনদের ধারণা, এলিনা ট্রেনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন।

এ অবস্থায় শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দেখা হয় এলিনার স্বজনদের সঙ্গে। সেখানে শিশুটি তার ফুপু সৈয়দা ফেরদৌসী আহমেদের (শেলী) কোলে। একটু পরপরই চোখ খুলে খুঁজছে মাকে।

আরও পড়ুন: ফোনে বলেছিলেন ‘আমি আর পারছি না’, এরপরই খোঁজ নেই এলিনার

শিশুর বাবা সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আরফানের নানা (এলিনার বাবা) ১১ দিন আগে মারা যান। এজন্য ছেলেকে নিয়ে রাজবাড়ী গিয়েছিল এলিনা। পরে সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তাদের ট্রেনে আগুনের ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, আমার ছেলের হার্টের সমস্যা। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাবো। এজন্য ওর মাকে বলেছিলাম দ্রুত ঢাকায় চলে আসতে। ঘটনার দিন আমি তাদের রিসিভ করার জন্য কমলাপুর স্টেশনে যাই। সেখানে স্ত্রীকে না পেয়ে ভেঙে পড়ি।

jagonews24

ট্রেনে এলিনা তার বোন ডেজি আখতার রুনার কোলে ছেলেকে দিয়েছিলেন বলে জানান সাজ্জাদ। তিনি বলেন, আগুন লাগলে ট্রেন থেকে ডেইজি তার ছেলে রিহান (৮) ও দিহানকে (১১) নিয়ে নেমে পড়েন। এসময় ডেইজির কোলেই ছিল আরফান। তাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে শনিবার দুপুর ১২টায় এলিনার ভাসুর রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কোথাও পাইনি এলিনাকে। ট্রেন দুর্ঘটনার ওখানেও নেই, হাসপাতালেও নেই। হাসপাতালে থাকা মরদেহ দেখেছি, সেখানেও নেই। সব জায়গায় আমাদের পরিবারের লোকজন খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি। গতকালের পর থেকে এলিনার মোবাইলও বন্ধ। হয়তো ট্রেনেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: এখনো নিখোঁজ চন্দ্রিমা, হন্যে হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছে পরিবার

এর আগে শুক্রবার রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগে। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার কিলোমিটার দুয়েক আগেই ঘটে ভয়াবহ এ ঘটনা। দুর্বৃত্তদের আগুনে ট্রেনটির চারটি বগি পুড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলেই নিভে যায় চারটি প্রাণ।

কাজী আল আমিন/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।