ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন চট্টগ্রামের ফয়’স লেক

আবু আজাদ
আবু আজাদ আবু আজাদ , নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২৪

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে আছেন বা আশপাশের জেলায় থাকেন। কিন্তু যাই যাই করেও যাওয়া হয়ে ওঠে না। এবার যেহেতু ঈদের ছুটি একটু লম্বা, তাই আপনিও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নগরীর প্রধানতম বিনোদনকেন্দ্র ফয়’স লেক। সেখানকার অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ড, ফয়’স লেক রিসোর্ট ও বেইস ক্যাম্পসহ নানা ইভেন্ট আপনার ও প্রিয়জনের ঈদের ছুটিকে আরও আনন্দঘন করে তুলবে নিশ্চিতভাবে।

চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ৩৩৬ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র ফয়’স লেক। এ কমপ্লেক্সে রয়েছে প্রায় পাঁচ কিলামিটারজুড়ে আঁকাবাঁকা সৌন্দর্যমণ্ডিত লেক। আছে সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, কফিকাপ, রেড ড্রাইল্লাইড, ইয়োলো ড্রাই-স্লাইড ও বাগ বাইন্সের মতো রাইডও।

অ্যামিউজমেন্ট পার্কের সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলেই দেখা মিলবে ফয়’স লেকের। লেকের দুপাশে শুধু সবুজের ছোঁয়া আর মাথার ওপরে দিগন্ত বিস্তৃত সুনীল আকাশ। বৈচিত্র্যে ভরপুর লেকের উভয় পাশে রয়েছে সারি সারি পাহাড় আর হরেক রকম গাছগাছালি। পাহাড়গুলোর বিভিন্ন নামও রয়েছে। অরুণিমা, জলটুঙ্গি, গোধুলি, অস্তাচল, আকাশমণি, বনশ্রী, হিমঝুরি, আসমানি, গগনদ্বীপ ও উদয়ন নামে ডাকা হয় একেকটি পাহাড়কে।

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন চট্টগ্রামের ফয়’স লেক

এসব পাহাড়ে নানা প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে। সেগুন, গর্জন, কড়াই, একাশিয়া, আগর সোনালু, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, কাঠবাদাম, ডুমুর, পাম, থাইকড়াইসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছের দেখা মেলে সেখানে। ওষুধি গাছের মধ্যে রয়েছে বসাক, নিম, অর্জুন, বিশল্যকরণী, পাথরকুচি, দারুচিনি, স্বর্ণগন্ধা, মতমূলিসহ নানা প্রজাতির গাছ। ফুল গাছের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, রঙ্গন, জুঁই, চম্পা, করবী, বকুল, নয়নতারা ও চেরি গাছ চোখে পড়ে।

লেকের দুপাশে শুধু সবুজের ছোঁয়া আর মাথার ওপরে দিগন্ত বিস্তৃত সুনীল আকাশ। বৈচিত্র্যে ভরপুর লেকের উভয় পাশে রয়েছে সারি সারি পাহাড় আর হরেক রকম গাছগাছালি। পাহাড়ের বিভিন্ন নামও রয়েছে। অরুণিমা, জলটুঙ্গি, গোধুলি, অস্তাচল, আকাশমণি, বনশ্রী, হিমঝুরি, আসমানি, গগনদ্বীপ ও উদয়ন নামে ডাকা হয় একেকটি পাহাড়কে

পাহাড়ের ঠিক উপড়েই ফটো কর্নার। যেখানে দেখা মিলবে নানা ভঙ্গিতে হরেক রকম প্রাণীর ভাস্কর্য। লেকের গা ঘেঁষে সামুদ্রিক প্রাণীদের ভাস্কর্য নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট অ্যাকুয়াটিক জোন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রেখে সব বয়সী মানুষের জন্য কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড গড়ে তুলেছে এ বিনোদনকেন্দ্র।

আরও পড়ুন

ফয়’স লেক কমপ্লেক্সের উপ-পরিচালক বিশ্বজিৎ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, এবার ঈদ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী দশ দিন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে পুরো কমপ্লেক্স। ঈদ উপলক্ষে সাতদিন চলবে ডি-জে শো। ঈদের দিন থেকে লোকসমাগম বাড়তে পারে। এজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নতুন করে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন চট্টগ্রামের ফয়’স লেক

ফয়’স লেকে জলের রাজ্য
ফয়’স লেকের বোট স্টেশন থেকে ইঞ্জিন বোটে দশ মিনিটের পথ পেরোলেই দেখা মিলবে দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ড। লেকের একপ্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে জলের রাজ্যের এই রোমাঞ্চকর পার্ক। দিনভর সবাইকে নিয়ে জলকেলি উৎসবে মেতে ওঠার জন্য রয়েছে বিভিন্ন রাইড।

ঈদের দিন থেকে পরবর্তী দশ দিন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে পুরো কমপ্লেক্স। ঈদ উপলক্ষে সাতদিন চলবে ডি-জে শো। ঈদের দিন থেকে লোকসমাগম বাড়তে পারে। এজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নতুন করে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন

তবে লেকের সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থানটি কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত, যা ওয়েভ-পুল নামে পরিচিত। সাগড়ের ঢেউয়ের মতোই উঁচু উঁচু ঢেউ খেলা করে সেখানে।

ওয়েভ-পুলেনের ঠিক পাশেই রয়েছে ড্যান্সিং জোন, যেখানে কৃত্রিম বৃষ্টি, নানা রঙের আলো আর মন মাতানো মিউজিকের তালে তালে নেচে ওঠেন দর্শনার্থীরা। চিলড্রেন পুলটি সাজানো হয়েছে শুধু বাচ্চাদের উপযোগী রাইড দিয়ে, যেখানে বাচ্চারা অনায়াসে এই স্বপ্নরাজ্যটি উপভোগ করতে পারবে। এছাড়া পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ উপভোগের জন্য রয়েছে ফ্যামিলি পুল।

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন চট্টগ্রামের ফয়’স লেক

বেশ উঁচু জায়গা থেকে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে পুলে ধপাস করে পড়ার মজা পাওয়া যাবে এখানকার স্লাইড ওয়ার্ল্ডে। এছাড়া মালি প্রাইড, ডোম স্লাইড ও প্লে-জোনের মতো মজার মজার সব রাইড রয়েছে সেখানে।

ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ড লাগোয়া রিসোর্টে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাহাড়মুখী ও হ্রদমুখী কক্ষ। যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে সবুজ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। নিরিবিলি পরিবেশে লেকের পাশেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলো। যে স্থানটি আপনার কাছেও মনে হবে যেন জনমানবহীন এক নির্জন দ্বীপ। বাংলোর ঝুলন্ত বারান্দা থেকে প্রকৃতির স্পর্শ পাওয়া যায় সহজেই।

রিসোর্ট ও বাংলোয় আসা পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে মানসম্পন্ন রেস্টুরেন্ট, যা খাবার পরিবেশনের জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। অর্ডার দিলে পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি মজাদার সব খাবার।

রোমাঞ্চে ভরা বেইস ক্যাম্প
এ কমপ্লেক্সের নতুন সংযোজন বন ও পাহাড় ঘেরা নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশে ফয়ে’স লেক বেইস ক্যাম্প, যা এক অনন্য সৌন্দর্যের প্রতীক। থোকা থোকা সবুজে ঘেরা উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ, সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলা স্বচ্ছ জলরাশি আর পাখপাখালির ডাক যে কোনো ভ্রমণপিপাসুকে বিস্ময়কর অনুভূতি দেবে।

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন চট্টগ্রামের ফয়’স লেক

লেকের পাড় বেয়ে উপড়ে উঠলেই বেইস ক্যাম্পের মূল ফটক। ভেতরে প্রবেশ করে পাহাড়ি পথের সিঁড়ি পেরিয়ে জিপলাইনের কাঠামো। এখান থেকেই তারে ঝুলে শূন্যে ভেসে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। জিপলাইনের চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠলেই ট্রি টপ অ্যাডভেঞ্চার। যেখানে ১০টি ধাপে চলে নানারকম উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা বা দুঃসাহসিক কার্যক্রম।

আরও পড়ুন

বিভিন্ন ধাপের নিচে বইছে পাহাড়ি ঢল। এক গাছ থেকে অন্য গাছে যেতে হবে কাঠের পাটাতন, টায়ার বা সরু ব্রিজ বেয়ে। মাকড়সার জালের মতো জাল ধরে ধরে সামনে এগোতে হবে। আঁকাবাঁকা নানা নকশার ছোট ছোট সেতু পার হতে হবে। এরপর অবস্টেবল কোর্স, যা বেইস ক্যাম্পের অ্যাডভেঞ্চারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

রিসোর্টে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাহাড়মুখী ও হ্রদমুখী কক্ষ। যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে সবুজ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। নিরিবিলি পরিবেশে লেকের পাশেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলো। যে স্থানটিকে আপনার কাছে মনে হবে যেন জনমানবহীন এক নির্জন দ্বীপ। বাংলোর ঝুলন্ত বারান্দা থেকে প্রকৃতির স্পর্শ পাওয়া যায় সহজেই

আরেক রোমাঞ্চকর অনুভূতি হবে জায়ান্ট সুইংয়ে। প্রকাণ্ড এক লৌহ কাঠামোতে শূন্যে ভেসে দোলার অনুভূতি শিহরণ জাগাবে। পাহাড়ের ঢালজুড়ে জারান্ট হামক, যেখানে বসে বা শুয়ে নিরিবিলি প্রকৃতি অনুভব করা যায় নিজের মতো করে।

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন চট্টগ্রামের ফয়’স লেক

পাহাড়ের পাদদেশে সাপের মতো আঁকাবাঁকা হ্রদ ভ্রমণে কায়া কিং উপভোগের দারুণ এক সুযোগ রয়েছে। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে চিলড্রেন অ্যাক্টিভিটিস এলাকা। বেইস ক্যাম্পের আউটডোর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- আর্চারি, ওয়াটার জিপলাইন, ক্রলিং, মাডট্রেইল, প্যাডেল বোটিং ও রিভার ক্রসিং। ভ্রমণের পূরিপূর্ণতা দিতে সান্ধ্যকালীন সময়ে ক্যাম্পজুড়ে নাইটসাফারির ব্যবস্থা রয়েছে। ফয়’স লেক বেইস ক্যাম্পে ভ্রমণ আরও রোমাঞ্চকর করতে খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টানিয়ে আপনিও কাটাতে পারেন দুর্দান্ত একটি রাত।

লেকের উপ-পরিচালক বিশ্বজিৎ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আতিথেয়তার মিলিয়ে ফয়’স লেক বেইস ক্যাম্প দেশের পর্যটনে এক বিশেষ মাইলফলক। ঈদ উপলক্ষে পর্যটক-দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ের ব্যবস্থা।

এএজেড/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।