তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে অনুভবের মাত্রা বেড়েছে
![তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে অনুভবের মাত্রা বেড়েছে](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/iqbal-20240421211900.jpg)
‘মানুষকে ছায়া দেওয়ার গাছটি কেটে আপনি ফুলের গাছ লাগিয়ে উন্নয়নের সূত্র আবিষ্কার করছেন। এই উন্নয়নের ধারাই দম বন্ধের কারণ। পুরো রাজধানী ঢেকে ফেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
বলছিলেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব। তীব্র দাবদাহ ও নগরজীবন নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়।
ইকবাল হাবিব বলেন, ‘নগরের দাবদাহ আসলে অনুভবের বিষয়। বিশেষভাবে যে তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়েছে তা কিন্তু নয়। তাপমাত্রা অনুভবের যে তীব্রতা তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে অনুভবের মাত্রা বেড়েছে।
উন্নয়ন বা অর্জনের মূল উপজীব্য হচ্ছে মানুষ। সেই মানুষকে ছায়া দেওয়ার গাছটি কেটে আপনি ফুলের গাছ লাগিয়ে উন্নয়নের সূত্র আবিষ্কার করেছেন। এই উন্নয়নের ধারাই দম বন্ধের কারণ। পুরো রাজধানীকে ঢেকে ফেলার আয়োজন করা হয়েছে।
যেমন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আপনাকে নিয়ে যদি হাতিরঝিলে একটি গাছের নিচে পানির কাছে বসি, তাহলে ৩৬ কী ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভব করবেন। একই চিত্র আপনি সংসদ ভবনের পাশে উদ্যানেও গেলে দেখতে পাবেন। তার মানে অনুভবটা তাপমাত্রার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়। অনুভবটা পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গেও জড়িত। আমরা সেই পারিপার্শ্বিকতাকে চার দশক ধরে ধ্বংস করছি। আমরা একটি সড়কও রাখিনি যেখানে ছায়া পাওয়া যায়।’
‘যেমন, আমাদের এই খামারবাড়ি সড়কটি গাছের ছায়ায় পরিপূর্ণ ছিল। সেটি এখন সম্পূর্ণ কংক্রিটে ঢাকা। এই যে আমরা পরিবর্তন করে ফেললাম, তার বদলে আমরা আচ্ছাদনের কোনো জায়গা তৈরি করার কথা ভাবিনি। ছায়া মিললেই আবার তাপমাত্রা থেকে রেহাই মিলবে তাও নয়। কংক্রিটের ছায়া থেকে আপনি ঠিক তীব্র তাপমাত্রাই অনুভব করবেন। সহনীয় তাপমাত্রা অনুভব করতে হলে আপনাকে গাছের ছায়ায় যেতে হবে।
আরও পড়ুন
- চুয়াডাঙ্গায় আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি
- তীব্র গরমে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে যাত্রীদের হাঁসফাঁস
- ভ্যাপসা গরমে বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ
সূর্যের আলো যেন মাটিতে পৌঁছাতে না পারে এবং এর তলদেশ দিয়ে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তার মধ্য দিয়ে আমি যেন হেঁটে যেতে পারি। এর কারণ হচ্ছে উন্নয়ন বা অর্জনের মূল উপজীব্য হচ্ছে মানুষ। সেই মানুষকে ছায়া দেওয়ার গাছটি কেটে আপনি ফুলের গাছ লাগিয়ে উন্নয়নের সূত্র আবিষ্কার করেছেন। এই উন্নয়নের ধারাই দম বন্ধের কারণ। পুরো রাজধানীকে ঢেকে ফেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
এই বিশ্লেষক বলেন, ‘রাজধানীর সড়কগুলো ক্রমাগতভাবে প্রসারিত করা হলো। গাছগুলো কেটে ফেলা হলো। কেন? সড়কজুড়ে যানজটের কেন্দ্র এখন। সড়কগুলো যতটাই প্রসার হলো গাছের ছায়া ততই কমতে থাকলো। ইউএস এইডের সহায়তায় এক জরিপে দেখা গেলো ঢাকা উত্তর সিটিতে মাত্র ১৪ শতাংশ গাছ রয়েছে। দক্ষিণ সিটিতে আরও কম। অথচ জনজীবনের জন্য ৪০ শতাংশ সবুজায়ন জরুরি। চার বছর ধরে নীতিমালা করেও কোনো কার্যকর পদেক্ষপ নেওয়া গেলো না। শুধু ছাদবাগানের জন্য ১০ শতাংশ ট্যাক্স মওকুফ ছাড়া। তাহলে আপনি কীভাবে বেঁচে থাকবেন!’
যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করতে পারছে না, সে আমার ব্যবহারের কারণে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা বহন করছে। সে অসমতার শিকার হচ্ছে। উন্নয়ন কাউকে এড়িয়ে হতে পারে না। উন্নয়ন বৈষম্য বাড়তে থাকলে সবাইকে ভুগতে হয়।
‘সূর্যের আলো পাথরের দেওয়াল বা ছাদ অথবা পিচঢালা সড়কে রিফ্লেকশন তৈরি করে বায়ু তাপমাত্রার প্রচণ্ড তীব্রতা তৈরি করছে। অনুভবের এই তীব্রতাই আমাদের জন্য কাল হয়ে আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের যথেচ্ছা ব্যবহার। এই যন্ত্র দিয়ে আমার ঘরের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে ফেলছি। এতে প্রতিবেশগত বিরাট অবক্ষয় তৈরি করছি। মানে ২ বা ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা কোথায় যাচ্ছে? অবশ্যই গায়েব হয়ে যাচ্ছে না। প্রতিবেশীর গায়ের ওপর ঢেলে দিচ্ছি। যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করতে পারছে না, সে আমার ব্যবহারের কারণে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা বহন করছে। সে অসমতার শিকার হচ্ছে। উন্নয়ন কাউকে এড়িয়ে হতে পারে না। উন্নয়ন বৈষম্য বাড়তে থাকলে সবাইকে ভুগতে হয়।’
‘আমাদের জলাধারগুলো রক্ষা করতে পারিনি। ক্রমাগতভাবে ভরাট করে ভবন, সড়ক, কালভার্ট বানিয়েছি। এতে প্রতিবেশ-পরিবেশের অনেক কিছুই ধ্বংস করেছি। উন্নয়ন কী হতে পারে এবং আমরা কোথায় ভালো থাকতে পারি, তার উদাহরণ হাতিরঝিল। বৃক্ষ রোপণ, লালনের মধ্য দিয়ে সবুজায়ন ও জলের ধারা রক্ষার মধ্য দিয়ে সবার বসবাসের উপযোগী একটি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এ বিষয়ে কারও কোনো আগ্রহ আছে বলে মনে করি না। এটি অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে চাপ তৈরি করার ব্যাপার। একই সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতারও ব্যাপার।’ বলছিলেন ইকবাল হাবিব।
এএসএস/এএসএ/জিকেএস