অপেক্ষা ফুরোচ্ছে না রংপুরবাসীর

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ১৯ মে ২০২৪
এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কে চলছে উন্নয়নকাজ/ ফাইল ছবি

দুই বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও একে একে পেরিয়ে গেছে ৮ বছর। এরপরও শেষ হয়নি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ। আসন্ন কোরবানির ঈদযাত্রায়ও ভোগান্তি থাকবে উত্তরাঞ্চলের মানুষের।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ১২ হাজার ৩২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ৬৫ শতাংশ। প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

মূল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের আগস্টে। কিন্তু বার বার সময়-ব্যয় বাড়ায় এখনই স্বস্তি মিলছে না রংপুরবাসীর। নতুন করে ফের দুই বছর মেয়াদ বাড়ছে প্রকল্পের। তবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও আরও এক বছর প্রকল্পের সার্ভিস কাজের জন্য হাতে রাখছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

শুধু মেয়াদ নয়, একই সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে প্রকল্পের। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এরপর প্রথম অনুমোদিত সংশোধনে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। নতুন করে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট খরচ দাঁড়াচ্ছে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

সওজ জানায়, ১৯০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণসহ কিছু কাজের কারণে বাকি ৪০ কিলোমিটার চার লেন শেষ করতে বাড়তি সময় প্রয়োজন।

সবশেষ সংশোধনের পর প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। চার লেনের পাশাপাশি ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের দুই পাশে করা হচ্ছে সার্ভিস লেন। শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। ২০১৯ সালে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুর পর করোনা মহামারিকে কারণ দেখিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় সওজ। বর্ধিত মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি অনুমোদন পেলে টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়কের উন্নয়নকাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে।

অপেক্ষা ফুরোচ্ছে না রংপুরবাসীর

‘সাসেক সংযোগ প্রকল্প ২: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্ব পালন করছেন ড. ওয়ালিউর রহমান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে। গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে জমি অধিগ্রহণে কিছু সমস্যা ছিল, তবে এখন সমাধান হয়েছে। এখানে দুইটি ফ্লাইওভার হবে। ১৯০ কিলোমিটার চার লেনের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটারের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।’

প্রকল্পে সামান্য কিছু ব্যয় বাড়ছে। ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্প এলাকায় প্রচুর গাছ লাগাবো, মূল প্রকল্পে এটা ধরা ছিল না। সরকার টাকা দিলে কাজ করবো, না দিলে করবো না।
- ড. ওয়ালিউর রহমান

মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের কারণে কিছুটা সময় লাগবে। আশা করছি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হবে। তবে আমরা হাতে আরও এক বছর রাখবো প্রকল্পের সার্ভিস কাজের জন্য। গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ী এলাকায় কাজ বাকি। এছাড়া হাটিকুমরুল ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশে কিছু কাজ বাকি। এসব কাজ শেষ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে।’

ফের বাড়ছে ব্যয়
শুধু মেয়াদ নয়, একই সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে প্রকল্পের। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এরপর প্রথম অনুমোদিত সংশোধনে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে বিশেষ সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। নতুন করে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট খরচ দাঁড়াচ্ছে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ। বাকি অর্থ আসবে সরকারি কোষাগার থেকে।

অপেক্ষা ফুরোচ্ছে না রংপুরবাসীর

এ বিষয়ে ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পে সামান্য কিছু ব্যয় বাড়ছে। ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্প এলাকায় প্রচুর গাছ লাগাবো, মূল প্রকল্পে এটা ধরা ছিল না। সরকার টাকা দিলে কাজ করবো, না দিলে করবো না।’

সওজ জানায়, নানান কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে। ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তঃমন্ত্রণালয় ভূমি অধিগ্রহণ, পকেট ভূমি অধিগ্রহণ, জমির শ্রেণি পরিবর্তনজনিত কারণে মেয়াদ বাড়ছে। প্রকল্পের ইউটিলিটি বাবদ ব্যয় বাড়লেও পুনর্বাসন খরচ কমছে। এছাড়া পরামর্শক সেবার ব্যয় কমানো, সম্পদ সংগ্রহের ব্যয় কমানো, ভ্যাট সমন্বয়, মূল্য সমন্বয়ে ব্যয় কমানো, রোড রিসার্চ-ট্রেনিং সেন্টার, টোল প্লাজা ও এক্সেল লোডসহ রোড অপারেশন ইউনিট নির্মাণ, হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের ভায়াডাক্ট ও সার্ভিস লেনে কংক্রিটের কাজের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।

পেভমেন্ট নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন খাত অন্তর্ভুক্তি
সড়কধার ও সড়ক ডিভাইডারে বৃক্ষরোপণ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় লাইটিং, সেফটি ফার্নিচার, যাত্রী ছাউনি প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করায় একটি প্যাকেজে সরকারি খাতের ব্যয় বাড়বে ৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এছাড়া কোড সংশোধন, বেতন-ভাতা ও পরিবেশ ছাড়পত্র ফি’র জন্য সময় এবং ব্যয় দুটোই বাড়ছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, এরপর অনুমোদনের প্রশ্ন। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তায়। তবে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি-তে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪৩০ কোটি টাকা কমছে। প্রস্তাবনায় মাটি ভরাটের কাজের ব্যয় ৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এছাড়া মূল্য সমন্বয় ও কনটিনজেন্সি ব্যয় ৮৭২ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি পেভমেন্ট নির্মাণব্যয় ১৫০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং স্ট্রাকচার নির্মাণব্যয় বাড়ছে ৩৪৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, এরপর অনুমোদনের প্রশ্ন। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এডিবির ঋণ সহায়তায়। তবে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি-তে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪৩০ কোটি টাকা কমছে।

সবশেষ অনুমোদিত সংশোধিত ডিপিপিতে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্সি সার্ভিস খাতে ৪ হাজার ৯৪৫ জনমাসের জন্য সংস্থান ছিল ৫২৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপি-তে এ খাতের ব্যয় ৪৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এ খাতে সংশোধিত ব্যয় হবে ৪৭৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তবে ব্যয় কমলেও ২ হাজার ৯২৯ জনমাস বেড়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন সভায় আলোচনা হতে পারে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ৩২৬ হেক্টর অপরিবর্তিতে রেখে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভূমি অধিগ্রহণ, পকেট ভূমি অধিগ্রহণ, জমির শ্রেণি পরিবর্তনজনিত কারণে এ খাতে ৮১৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে।

অপেক্ষা ফুরোচ্ছে না রংপুরবাসীর

প্রকল্পের আওতায় ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণে ১৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে ৪ হাজার ৮০৬ কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া ১৪ হাজার ৯৬৬ মিটার ফাউন্ডেশনসহ স্ট্রাকচার খাতে ৩৬৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। রোড অপারেশন ইউনিট খাতে ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ২১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কি না তা নিয়ে সভায় আলোচনা হতে পারে।

নতুন খাত হিসেবে রোড ফার্নিচার, স্ট্রিট লাইটিং, বৃক্ষরোপণ, ফ্যান্সিং প্রভৃতি উল্লেখ করে সরকারি অর্থায়ন খাতে ৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। ইউটিলিটি শিফটিং খাতে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৮৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি খাতে ৫ কোটি টাকা এবং প্রাইস কনটিনজেন্সি খাতে ১৪৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও মোট ব্যয়ের শতকরা হার উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্প শেষ করতে অতিরিক্ত ২ বছর সময়ের প্রয়োজন। এসব বিষয়ে সভায় আলোচনা হতে পারে। এছাড়া, মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ইআরডি-উন্নয়ন সহযোগীর সম্মতি রয়েছে কি না সে বিষয়েও আলোচনা হতে পারে সভায়।

প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

এমওএস/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।