একজনের সমস্যায় আরেকজন পাশে দাঁড়াবেন- এটাই ইসলামের শিক্ষা

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ২৫ জুলাই ২০২৫

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদেরকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। দাউ দাউ শিখায় জ্বলতে থাকে তাজা প্রাণগুলো ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে দিগ্বিদিক দৌড়াদৌড়ির হৃদয়বিদারক দৃশ্য সহ্য করার মত ছিল না। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত ভাষা আমাদের নেই।

আমরা দুহাত তুলে মহান আল্লাহপাকের দরবারে নিহতদের মাগফিরাত কামনা করে সকাতর প্রার্থনা করি আর আহতদেরকে তিনি যেন আরোগ্য দান করে সেই দোয়া করি। দুর্ঘটনার পর আমরা একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি যুবক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ রক্ত দেয়ার জন্য হাসপাতালগুলোতে ছুটে গেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন যদি তিনি রক্ত দিয়ে একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন বাঁচাতে পারেন, তাহলেই তিনি ধন্য। আবার কাউকে দেখা গেছে বাহন নিয়ে অপেক্ষা করছেন মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় আক্রান্ত কোনো পরিবারকে যাতায়াতে সাহায্য করা যায় কিনা। মহৎ কাজের এসব দৃষ্টান্তগুলো দেখে অনেক ভালো লাগে।

একজনের সমস্যায় আরেকজন ছুটে পাশে দাঁড়াবেন এটাই মানবতা। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করেন না, যে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না। (বুখারি ও মুসলিম)

কেউ বিপদে পড়লে আরেকজন তাকে উদ্ধার করবে এটাই ধর্মের শিক্ষা। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি এমনকি অপরাপর জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করাই হচ্ছে ধর্ম। হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি)।

মানবসেবার মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কী জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।’

আল্লাহতায়ালা বলবেন ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি?’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! আপনি হলেন বিশ্ব পালনকর্তা, আপনাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে?’ আল্লাহতায়ালা বলবেন ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু! আপনি তো রাব্বুল আলামীন, আপনাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম)

আমরা বিভিন্নভাবে মানব সেবা করতে পারি। ডাক্তার তার সেবা দ্বারা, বিত্তশালীরা তার সম্পদ দ্বারা, স্বাস্থ্যবান তার শক্তির দ্বারা সেবা করতে পারেন। কারো শরীরের কোন অঙ্গ যদি আঘাত পায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে তবে সে কী আনন্দ পায়? বরং কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সমাজের এক অংশ ক্ষুধার্ত, ব্যাধিগ্রস্ত, বস্ত্রহীন হলে অপর অংশ তাদের সাহায্যার্থে প্রাণঢালা সাহায্য করবে। তবেই সুষ্ঠু ও বলিষ্ঠ জাতি গড়ে উঠবে।

প্রত্যেক ব্যক্তি যদি তার দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকে তবেই সৃষ্টি সেবার মহান এক সংঘ গড়ে উঠবে। অপরের প্রতি অনুকম্পা, সহানুভূতি, উদারতা ও দয়া প্রদর্শন করা আজ আমাদের মৌলিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ অনেক আন্তরিক। বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর অগণিত দৃষ্টান্ত আমাদের রয়েছে। উত্তরার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সময়ও আমরা আন্তরিকতার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দেখতে পেয়েছি।

আমরা আশা করবো মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের সুচিকিৎসার জন্য সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে তারা উন্নত চিকিৎসা সেবা পেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চিকিৎসাধীন সবাইকে আরোগ্য দান করুন, আমিন।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।
[email protected]

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।